---------- Forwarded message ----------
From: lutful bari <lutfulb2000@yahoo.com>
Date: 2013/3/25
Subject: [bangla-vision] বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন
To:
From: lutful bari <lutfulb2000@yahoo.com>
Date: 2013/3/25
Subject: [bangla-vision] বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন
To:
http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=146961
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন
আত্মপক্ষএবনে গোলাম সামাদ
তারিখ: ২৫ মার্চ, ২০১৩
সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বক্তব্য রাখেন সরকারের সাধারণ নীতি প্রসঙ্গে। কিন্তু তিনি একা সব কিছু করেন না। তার থাকে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বিভিন্ন মন্ত্রীর থাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্বের এলাকায় তাদের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এখন এই নীতি মানা হচ্ছে না। এক একজন মন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তার ওপরই যেন পড়েছে দেশ চালানোর সমস্ত ভার। একজন মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে মিলতে চাচ্ছে না আরেকজন মন্ত্রীর বক্তব্য। যেমন কোনো একজন মন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল, দেশে ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দলকে থাকতে দেয়া হবে না। আবার একজন মন্ত্রী বললেন, আমাদের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। সরকার যেন, এ ক্ষেত্রে কোনো সাধারণ সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এ রকম বিশৃঙ্খল মন্ত্রিসভা দেশ পরিচালনায় সমর্থ কি না, সেটা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রশাসন চলে মন্ত্রিসভার নির্দেশে। মন্ত্রিসভার নির্দেশ যদি বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন প্রশাসনে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্তহীনতা। সরকার ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার যেন এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করতে সক্ষম নয়। সরকার পুলিশ বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছে, যেন তারা হয়ে উঠতে চাচ্ছে একটা দলের বাহিনী। যেটা হওয়া উচত নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রশাসনকে হতে হয় দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলেছে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গণতন্ত্র। সেখানে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দল থেকে নিযুক্তি পান উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা। একে বলে স্পয়েল সিস্টেম (Spoils System)। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা চলে না। কারণ, এখানে দল পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘটে না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিবর্তন। এখানে দেশ শাসনে থাকতে হয় প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যেন করতে চাচ্ছে প্রশাসনকে দলীয়করণ। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাকে তারা করতে চাচ্ছেন পুরস্কৃত। এভাবে তারা ঘনিয়ে তুলেছেন প্রশাসনিক সঙ্কট।
অন্য দিকে একেক মন্ত্রী একেক ধরনের বক্তব্য দিয়ে বর্তমান সরকারের নীতিকে নিজেরাই যেন করে তুলতে চাচ্ছেন নানাভাবেই বিতর্কিত। সে দিন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বলতে শোনা গেল- বিএনপিকে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। বলা হলোÑ বিএনপির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দল ত্যাগ করতে। বিএনপি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল। সে দলের লোক কী করবে, সেটা তাদেরই বিচার্য বিষয়। বর্তমান সরকারের কোনো মন্ত্রী সেটা ঠিক করে দেয়ার অধিকারী নন। আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তা না হলে সংবাদপত্রের এবং প্রচারমাধ্যমের ওপর জারি করা হবে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু কোনো প্রকৃত গণতন্ত্রে এটা আদৌ করা চলে না। হাসানুল হক ইনু মুক্তিযুদ্ধের জয়গান করছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ পর্যন্ত কি কোনো বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস বাংলাদেশে রচিত হতে পেরেছে? ভারতের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব একটি বই লিখেছেন (২০০১) Surrender at Dacca, Birth of a Nation নামে। জ্যাকব ১৯৭১ সালে পূর্ব রণাঙ্গনের লড়াইয়ে ভারতের সৈন্য পরিচালনা করেছিলেন। তিনি তার এই বইয়ে বলেছেন, ১৯৭১-এর যুদ্ধের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। এই বইয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বলেছেন যে, তারা ১৯৭১-এর যুদ্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের যথেষ্ট সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। বিরাট মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল খুবই সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে। এত সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে অত বিরাট একটা মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল একটা বড় রকমেরই ভুল। এ হলো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে একজন ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেলের বক্তব্য। কিন্তু এ কথা এখন বললে অনেকেই অখুশি হতে পারেন। বস্তুনিষ্ঠভাবে সব কথা বলার মতো পরিবেশ আমাদের দেশে এখনো সৃষ্টি হতে পারেনি। জ্যাকব বলেছেন, সব ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য ছিল খুবই কম। কিন্তু এখন আমাদের বলতে হচ্ছে, ১৯৭১-এর যুদ্ধে তারাই যেন ছিল যুদ্ধ জয়ের মূলে। সাস্থী ব্রত একজন ভারতীয় সাংবাদিক। কিন্তু নাগরিকত্বে ছিলেন ব্রিটিশ। তিনি ব্রিটেনের বিখ্যাত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে আগরতলায় আসেন মুক্তিবাহিনী সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে। তিনি মুসলমান কৃষকের মতো সাজগোজ করে আগরতলা থেকে এসে ঢোকেন বাংলাদেশে। সংগ্রহ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বন্ধে অনেক তথ্য। তিনি তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ভারতীয় কমান্ড বাহিনী ব্রিজ উড়িয়েছে, ট্রেন লাইনচ্যুত করেছে। তাদের সাথে থেকেছে মাত্র সামান্য কিছু মুক্তিযোদ্ধা। এসব মুক্তিযোদ্ধার কাজ হচ্ছে ভারতীয় কমান্ড বাহিনীকে পথ দেখানো (বিগ ব্রাদার গোজ টু ওয়ার, দ্য গার্ডিয়ান, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)।
কিন্তু আমরা যদি এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আলোচনা করতে যাই, তবে নিশ্চয় হাসানুল হক ইনুর কাছে তা প্রতিভাত হবে স্বদেশবিরোধী হিসেবে। মনে হবে না এসব তথ্যকে আদৌ বস্তুনিষ্ঠ হচ্ছে বলে। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে বস্তুনিষ্ঠ হওয়া বেশ কঠিন। বস্তুনিষ্ঠ হতে গলে হয়তো পেতে হবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অংশ হিসেবে পরিচিত। আর এক কথায় হতে হবে নব্যরাজাকার। তাই অনেকে হতে পারছেন না অথবা হতে চাচ্ছেন না বস্তুনিষ্ঠ। হাসানুল হক ইনু বলছেনÑ দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকারীদের শাস্তি দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি যে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই দল জাসদ ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে বলেছিলÑ 'সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই'। এভাবে তারা সেনাবাহিনীতে সৃষ্টি করেছিল এক বিরাট বিশৃঙ্খলা। জেনারেল জিয়ার একটি বিশেষ কৃতিত্ব হলো, সেনাবাহিনী থেকে এ রকম দলীয় রাজনীতিকে বিতাড়িত করতে পারা। আমাদের তথ্যমন্ত্রী জেনারেল জিয়ার সম্পর্কে সম্প্রতি যা বলছেন, সেটা আর যা-ই হোক, বস্তনিষ্ঠ হচ্ছে বলে অনেকের কাছেই মনে হবে না। আমাদের তথ্যমন্ত্রী বলছেন, কিছু পত্রপত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমকে বন্ধ করতে হবে। শেখ মুজিব গঠন করেছিলেন বাকশাল। কণ্ঠরোধ করেছিলেন স্বাধীন পত্রপত্রিকা। আমরা কি আবার এ রকম একটি বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি? বাকশালব্যবস্থাকে আর যাই বলা যাক, উদার গণতন্ত্রী ব্যবস্থা বলা চলে না। তাকে তুলনা করতে হয় কমিউনিস্টদের একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থারই সাথে। অনেকে বর্তমান সরকারকে বলছে ফ্যাসিস্ট। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের চেয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের চিন্তাচেতনা মনে হয় কমিউনিস্ট রাজনৈতিক দর্শন দিয়েই অধিক অনুপ্রাণিত। কমিউনিস্টদের কাছে উদার গণতন্ত্র কথাটা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করেন, উদার গণতন্ত্র আসলে হলো পুঁজিবাদীদের একনায়কতন্ত্র (Dictatorship of Capital)। পক্ষান্তরে কমিউনিস্টদের রাজত্ব হলো সর্বহারাদের একনায়কত্ব (Dictatorship of the Proletariat)। শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল যান সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেখানে তিনি সাক্ষাৎ করেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক লই ব্রেজনেভের সাথে। তারপর তিনি দেখা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে। এরপর দেশে ফিরে তিনি গঠন করেন ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। তিনি বাকশাল ছাড়া আর দলকে নিষিদ্ধ করেন। নিষিদ্ধ করেন চারটি সরকারি সংবাদপত্র ছাড়া আর সব সংবাদপত্রকে। বাকশালে যোগ দেয় মণি সিংহের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ।
ঠিক হয় বাকশাল থেকে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় তিনজন করে প্রার্থী ঠিক করে দেয়া হবে। জনসাধারণ ভোট দিয়ে এই তিনজনের মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করবে আইনসভায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে। প্রত্যেক জেলায় বাকশাল থেকে নিযুক্ত পাবেন একজন করে গভর্নর। তাদের হাতে থাকবে মূল প্রশাসনিক ক্ষমতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটে সামরিক অভ্যুত্থান। বাকশাল প্রতিষ্ঠা সাফল্য পেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসময় বলতেন, বাকশাল ছিল দুঃখী মানুষের (কৃষক-শ্রমিক) গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। তিনি আবার কোনো দুঃখী মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন কি না, আমরা তা বলতে পারি না। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে। কমিউনিস্ট শাসন নেই রাশিয়ায়। নেই তার সাথে সংশ্লিষ্টতা ১৪টি রিপাবলিকের। কমিউনিস্ট শাসন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য দুঃখী মানুষের গণতন্ত্র এনে দিতে পেরেছিল না, সেটা আর এখন বিতর্কের বিষয় নয়। রাশিয়ায় মানুষ চাচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। কিন্তু সে দেশে এখনো বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে, এ রকম কথা বলা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মনে হচ্ছে একজন একনায়কতন্ত্রী হিসেবেই। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন রাশিয়ায়। পুতিনের সাথে তিনি কোনো বিশেষ চুক্তি করে দেশে ফিরে এসেছেন কি না, আমরা তা জানি না। তবে দেশে ফিরে তিনি অনেক উচ্চস্বরে নানা বিষয়ে তার বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অনেকের কাছে তার ব্যবহৃত ভাষাকে মনে হতে পারছে গণতন্ত্রের অনুকূল নয়। এই পরিস্থিতিতে আমাদের তথ্যমন্ত্রী উপদেশ দিচ্ছেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার। কিন্তু বাস্তবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মতো পরিবেশ সঙ্কুচিত হয়েই পড়ছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্থান নেই। কিন্তু সম্প্রদায় কথাটা বলতে ঠিক কী বুঝতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না তারা। ইসলামি ধ্যানধারণা আর সাম্প্রদায়িকতাকে কি ধরতে হবে সমার্থক হিসেবে? দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। এই মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারণা উদ্ভব হতে পেরেছিল ব্রিটিশ শাসনামলে। এর ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় যে, ব্রিটেনের বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী হার্বাট হেনরি অ্যাসকুইথ (১৮৫২-১৯২৮) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমন্স সভায় ১৯০৮ সালে বলেন, হিন্দু মুসলমান পার্থক্য কেবল ধর্মীয় পার্থক্য নয়। এই পার্থক্য হলো ঐতিহ্য ও সামাজিক রীতিনীতির। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানেরা হলেন, আসলে একটি পৃথক জাতি। ১৯০৯ সালে গৃহীত হয় মর্লি-মিন্টো শাসন সংস্কার। এর ফলে মুসলমানদের দেয়া হয় পৃথক নির্বাচনের অধিকার। যার ফলে মুসলিম জাতীয়তাবাদের উদ্ভব সম্ভব হতে পারে। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে মনে করা যায় মুসলিম জাতীয়তাবাদ রূপলাভ করতে পারত না। মুসলিম জাতীয়তাবাদ দক্ষিণ এশিয়ায় রূপলাভ করে ব্রিটিশ শাসনের বিশেষ কাঠামোর মধ্যে। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা পায় সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্র। সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে উদ্ভব ঘটে বাংলাভাষী মুসলিম জাতীয়তাবাদের। যা হলো আজকের বাংলাদেশের রাষ্ট্রিক ভিত্তি। মুসলিম স্বাতন্ত্র্য চেতনাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বের যুক্তিকে বিশ্লেষণ করা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন হেফাজতে ইসলামের অভ্যুদয় হতে পারছে। এটারও ভিত্তি হলো বাংলাভাষী মুসলমানের জাতীয়তাবোধের চেতনার প্রকাশ। একে সেভাবে ব্যাখ্যা না করলে এর শক্তির উৎস বোঝা আদৌ সম্ভব হবে না। এটা কেবলই মুসলিম আলেমদের নাস্তিকতাবিরোধী আন্দোলন নয়। হেফাজতে ইসলাম প্রকৃতপক্ষে হয়ে উঠতে চাচ্ছে বাংলাদেশের আজাদির হেফাজত। আমাদের তথ্যমন্ত্রী বোঝাতে চাচ্ছেন, এটা হলো কেবলই কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তির ধর্মীয় আবেগের অভিব্যাপ্তি। কিন্তু তা হলে এই আন্দোলন এত অল্প সময়ের মধ্যে এতটা ব্যাপ্তি পেতে পারত না। এ বিষয়ে যদি আমরা বস্তুনিষ্ঠ হতে চাই, তবে মনে হয় এ কথা আমাদের স্বীকার করতে হবে। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী মনে হচ্ছে এ রকম স্বীকৃতির পক্ষে নন। তাই তাকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার বাস্তব অর্থ বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দৃষ্টিতে কী দাঁড়াচ্ছে। কেবলই বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলে কিছু ফল হবে বলে মনে হচ্ছে না।
আমি যখন এসব লিখছি, তখন মনে পড়ছে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কথা। তার সাথে আমার কিছু পরিচয়ের সুযোগ হয়েছিল ১৯৭১ সালে কলকাতা শহরে। তিনি এক দিন কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন এমএনএ'র সাথে। আমি তাকে বলতে শুনেছিলাম তাজউদ্দীন একতরফাভাবে কাজ করছেন। সেটা ঠিক হচ্ছে না। তিনি ছিলেন মনের দিক থেকে অনেক বেশি গণতন্ত্রী। আমার মনে পড়ে, তিনি চাচ্ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে একটা সমঝোতায় আসতে। চাচ্ছিলেন না যুদ্ধ প্রলম্বিত হোক। ১৯৭১ সালের ৮ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি (মন্ত্রী) হেনরি কিসিঞ্জার আসেন রাওয়ালপিন্ডিতে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে কোনো একভাবে কলকাতায় আওয়ামী লীগের এমএনএ-দের কাছে নিয়ে এসেছিলেন একটা আপস রফার প্রস্তাব। অনেক এমএনএ এ সময় কলকাতা ছেড়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসতে চান। কিন্তু ভারত সরকার তাদের করে রাখেন নজরবন্দী। তাদেরই কয়েকজন কথা বলছিলেন জিল্লুর রহমানের সাথে। ঘটনাচক্রে যে কক্ষে তাদের কথালাপ হচ্ছিল, আমি ছিলাম তার সংলগ্নকক্ষে। তাই তাদের সংলাপ আমি শুনতে পেয়েছিলাম। জিল্লুর রহমানের তিরোধান ঘটল। আমি তার বিস্তৃত রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে অবগত নই। কিন্তু সে দিন তার সংলাপে আমার মনে হয়েছিল, তিনি একজন প্রকৃত রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলছেন। তিনি ছিলেন খুবই শিষ্ট ও মৃদুভাষী। কথা বলতেন প্রকৃত রাজনীতিকের মতো যথেষ্ট পরিমাপ করে। আমি যে ক'জন আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তার মধ্যে তাকে মনে হয়েছে যথেষ্ট পরিশীলিত। আমি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
__._,_.___
Reply via web post | Reply to sender | Reply to group | Start a New Topic | Messages in this topic (1) |
.
__,_._,___
No comments:
Post a Comment