Palah Biswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Zia clarifies his timing of declaration of independence

what mujib said

Jyothi Basu Is Dead

Unflinching Left firm on nuke deal

Jyoti Basu's Address on the Lok Sabha Elections 2009

Basu expresses shock over poll debacle

Jyoti Basu: The Pragmatist

Dr.BR Ambedkar

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin Babu and basanti Devi were living

"The Day India Burned"--A Documentary On Partition Part-1/9

Partition

Partition of India - refugees displaced by the partition

Thursday, May 8, 2014

উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারি,হিন্দু ও মুসলিম বিভাজনসত্বেও মোদীকে ধন্যবাদ যে তিনি বাংলার নেতা মনেতৃদের মুখোশ খুলে দিতে পারছেন। নাগরিকত্ব সংশোধণী আইন পাশে যাদের সবারই সমান ভূমিকা। সেই আইন অনুযায়ীই মোদী 1947 সালের পর সব্বাইকে তল্পি তল্পা গুছিয়ে নিতে বলেছেন এবং

উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারি,হিন্দু ও মুসলিম বিভাজনসত্বেও মোদীকে ধন্যবাদ যে তিনি বাংলার নেতা মনেতৃদের মুখোশ খুলে দিতে পারছেন। নাগরিকত্ব সংশোধণী আইন পাশে যাদের সবারই সমান ভূমিকা। সেই আইন অনুযায়ীই মোদী 1947 সালের পর সব্বাইকে তল্পি তল্পা গুছিয়ে নিতে বলেছেন এবং সে আইন মোদীকে ছেকাতে পারলেও বলবত থাকছে।


যারা 1971 সালের পর এসেছেন,তাঁরাও অনেকে এ রাজ্যে মন্ত্রী এমএলএ এমপি হয়ে সব সুবিধা বোগ করেছেন,করছেন,সংরক্ষণে জমিয়ে চাকরি করছেন, তাঁরা নিজেদের চামড়া বাঁচাতে 1947 এর আগে পরে আসা সর্বস্বহারাদের বলির পাঁঠা করে দিচ্ছেন সারা ভারতে।

পলাশ বিশ্বাস

তবু মন্দের ভালো,কল্কি অবতার দিদি বলে ডেকেছেন,দিদি ডাকে বাংলা মাতিয়েছেন এবং কলকাতা ও শহরতলির গৌরিক সুনামী অভিযানে অন্ততঃ বাঙালি অবাঙালি বিভাজনরেখা টানার চেষ্টা করেছেনমোদীকে অসংখ্য ধন্যবাদ,তিনি 2005 সালে অনুপ্রবেশকারীবিরুদ্ধে দিদির সংসদীয় বয়ান জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন


আমাদের পিছনে বাজারের লগ্নি নেইরাতারাতি শেয়ারে বাজারে লাখ লাখ টাকার সাট্টা হবে না আমাদের বক্তব্যের নিরিখে।নিপ্টিতে রাতারাতি ষাঁঢঞের হানাদারি চলবে না আমাদের পক্ষে।করপোরেট সমুহ থলির মুখ খুলে বসে থাকবে না।


2003 সাল থেকে টানা দৌড়ে সারা দেশে কত জায়গায আর যেতে পারলাম।ট্রেনে বাসে কতদুর যাওয়া যায়।


বন্ধু সুকৃতি বিশ্বাস অসম্বব ভালো বক্তা।খূব ভালো বাংলা লিখতে পারেন।তিনি ইউবিআই ট্রেড ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্লেনে যেখানে ইচ্ছে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল,মতুয়াদের নিয়ে একটি লড়াইও শুরু করেছিলেন।


কোথায কি,এমপি এমএলএ হওয়ার আকাঙ্খায় চাকরি ছেড়ে,ইউনিয়ন ছেড়ে,দলবাজিতে এমন মেতেছেন যে সেষ মুহুর্তেও বনা অসম্ভব আপাতত তিনি কোন দলে।মথুরাপুর থেকে কংগ্রেস সমর্থিত রিপাবলিকান প্রত্যাশী হওযার পর কত পার্টি করলেন,কত ছাড়লেন হিসাব করা মুশকিল।


যারা 1971 সালের পর এসেছেন,তাঁরাও অনেকে এ রাজ্যে মন্ত্রী এমএলএ এমপি হয়ে সব সুবিধা বোগ করেছেন,করছেন,সংরক্ষণে জমিয়ে চাকরি করছেন, তাঁরা নিজেদের চামড়া বাঁচাতে 1947 এর আগে পরে আসা সর্বস্বহারাদের বলির পাঁঠা করে দিচ্ছেন সারা ভারতে।


আমার বাংলা লেখার অভ্যাসও নেই।জন্ম থেকে উত্তরাখন্ডে মানুষ।বাংলা আর ইংরেজিতেই এযাবত কাল লেখা হয়েছিল। প্রাণের তাকিদে বাংলায় লেখার চেষ্টা করছি হালফিলে।ঝরঝরে কবিত্বমাখা ভাবালু লেখা আঙুলে আসেনা।ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারছি নাযা লিখি,দশজনেও পড়ছেন কিনা জানিনা।পুরোটাই হয়ত পন্ডশ্রম।


তবু আমার স্বজনরা বিপদে পড়লে,কারুর মুখের দিকে না তাকিয়ে আমাকেই শেষপর্যন্ত মরণ বাঁচণ লড়াইয়ে ঝাঁপাতে হবে,এপার ওপার বাংলা ও সর্বহারাদের সর্বস্বহারাদের নেতা ছিলেন আমার প্রযাত পিতা নৈনীতালের পুলিনবাবু,যিনি মেরুদন্ডে ক্যান্সার নিয়েও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়েছেন অবিরাম।তাঁরই শিক্ষা।


উদ্বাস্তুদের ও চাষিদের,বাস্তুহারাদের স্বার্থে সব কজন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রিদের সঙ্গে মুখোমুখি সংলাপ চালিয়ে গেছেন ক্লাস টু পড়া সর্বস্বান্ত আমার বাবা।তার তুলনায় আমি যথেষ্ট শিক্ষিততিনি বলতেন,লড়াইয়ে,সম্ভব অসম্ভব কিছুই হয়না।লড়ার ইচ্ছেটাই আসল। যোগ্যতা না তাকলে,যোগ্যতা অর্জন করতে হয়,ভাষা না জানলে,শিখতে হয়।তাই শেখার প্রয়ত্নেই লিখে যাওয়া।


মোদী নির্বাচনী প্রচারে সারা দেশে যত দৌড়েছেন,সারা জীবন দৌড়েও আমার বাবা ততদুর যেতে পারেননি,আমি কোন ছারএকটি সমাবেশে আমার যত স্বজনকে মুখোমুখি সম্বোধিত করেছেন,আমি এবং অবশ্যই আমার বাবা দশ জনমেও তত মানুষকে আমাদের কথা জানাতে পারব না।


উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারি,হিন্দু ও মুসলিম বিভাজনসত্বেও মোদীকে ধন্যবাদ যে তিনি বাংলার নেতা মনেতৃদের মুখোশ খুলে দিতে পারছেন। নাগরিকত্ব সংশোধণী আইন পাশে যাদের সবারই সমান ভূমিকা। সেই আইন অনুযায়ীই মোদী 1947 সালের পর সব্বাইকে তল্পি তল্পা গুছিয়ে নিতে বলেছেন এবং সে আইন মোদীকে ছেকাতে পারলেও বলবত থাকছে।


মোদীকে ধন্যবাদ,নগ্ন বাঙালি বিদ্বেষ সত্বেও সীমান্তরেখা পারাপার বাঙালি জাতিসত্তার অমোঘ বিপর্যয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিযে দেওয়ার জন্য


প্রণব মুখার্জি তখন বলেছিলেন,সংসদীয কমিটির চেয়ারপারসন পদ থেকে,উদ্বাস্তুদের তামা সংগছনের পক্ষ শোনার আবেদন নাকচ করে,বাকায়দা প্রতিপক্ষ কংগ্রেস নেতা হিসেবে,আমি ভারতের গৃহমন্ত্রী হলে ওপার বাংলার সব অনুপ্রবেশকারি হিন্দু মুসলমান সবাইকে কবেই তাড়িযে দিতাম।


যেদিন লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়,খবর আসতেই বামবন্থীদের জনে জনে ফোন করেছিলাম,আপনারা কি করছেন।


সূর্যকান্ত বাবুকে উদ্বাস্তু নেতা হিসেবে চিনি না।


কিন্তু বুদ্ধবাবূ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেদিনও।তাঁকে,প্রয়াত মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীকে,উদ্বাস্তু নেতা ও মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসকে,বাম ফ্রন্টের বর্তমান বঙ্গীয় চেয়ারম্যান বিমান বসুকে,আদিবাসী নেতা ও মন্ত্রী উপেন কিস্কুকে আরও অনেকেক সেদিন ফোন করেছিলাম।


বামপন্থী মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী নেতা সাংসসদ সব্বাই সেদিন ও সংসদে নাগরিকত্ব আইনে সমর্থন দেওয়ার পর পরই আশ্বস্ত করেছিলেন যে তাঁরা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে লড়বেন।


তারও পূর্বে আগরতলায় মেলাবাড়ির বসর্জনী লেকের ধারে গেস্ট হাউসে কৃষক নেতা পীতবসন দাস বললেন,উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ানোর দায় বামপন্থীদের নেই।সাক্ষী ছিলেন কবি ও ত্রিপুরার বরিষ্ঠতম মন্ত্রী ও কবি অনিল সরকার।


যার সঙ্গেই আগরতলায় নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে প্রেস কন্ফ্রেন্স করেছিলাম এবং সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন,এই আইন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।সেদিন আগরতলার সব কাগজে এই সংবাদ ছাপা হয়ে ছিল।


বাংলার সাংসদ,মন্ত্রীরাও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কিচ্ছুই সেদিন জানতেন না।

আজও জানেন বলে ,মনে হচ্ছে না।

জানলে,মোদীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে ঔ আইনের বিরোধিতাও হত।

সেটা কিন্তু আজও কেউ করছেন না।


মোদী ঠিক কথাই বলেছেন যে বাংলার নেতারা ভোটব্যান্কের রাজনীতি করছেন।

নজরুল ইসলামও ঠিক সেই কথা বলছেন।

তবে ভোটব্যান্কের রাজনীতিতে এবার কিন্তু টেক্কা মারলেন মোদী।


মতুয়া ভোট নিয়ে যা যা হল এবং হবে,তা রীতিমত মহাভারত।

বিধানসভা ভোটের আগে বাম তৃণমুলি সংযুক্ত উদ্বাস্তু মতুয়া সম্মেলনও হল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে।


দিল্লী কোলকাতা গুয়াহাটি মুম্বাই নৈনীতালে পাটনা রাঁচি ভুবনেশ্বর রায়পুরে সব পক্ষের নেতারা উদ্বাস্তু সমর্থনের প্রয়োজনীযতার মুহুর্তে নাগরিকত্ব গাজর ঝোলাচ্ছে এবং অন্যদিকে ঔ আইনে সব দলের সরকারই উদ্বাস্তুদের তাড়ানোর সব ব্যবস্থাই করছেন।


লম্বা ল্লম্বা বক্তৃতা,ফোটো সেশান সবি ত হল,নাগরিকত্ব আইন বাতিল করার কোনো দাবি বাংলার নেতা নেত্রীরা আজ অবধি করেছেন কিনা আমার জানা নেই।


যেমন গুয়াহাটিতে নাগরিকত্ব সংসোধণী বিল পাস করার পর পরই দাবি করেছিলেন আদবাণী,পশ্চিম পাকিস্তানের সব উদ্বাস্তুরাই ভারতীয়।

আদবাণীর দাবি, বাংলার কোনো মুখ্যমন্ত্রী,ত্রিপুরার কোনো মুখ্যমন্ত্রী ,উত্তরপ্রদেশের বাঙালিনী মুখ্যমন্ত্রী সুচেতা কৃপালানী,কোনো বাঙালি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবার চেষ্টাই করেননি।


আদবাণীর দাবি,বাংলা ও বাংলার বাইরের কোনো বাঙালি সাংসদ আজ অবধি 2003 সাল পর্যন্ত সংসদে পূর্ববহ্গের উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি তোলেননি।



সংবাদ মাধ্যমে যে বিভাজন ধরা পড়েনি,আগে সে কথায় আসি,মোদী এ যাবত হিন্দু উদ্বাস্তুদের শরণার্থী বলে আসছিলেন,এবার শুধু মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেন।সব হিন্দু উদ্বাস্তু কিন্তু মতুয়া নন।


আনন্দবাজার পড়ুনঃ





vote-logo

মতুয়াদের অধিকার নিয়েও বঙ্গ-সফরে সরব মোদী

নিজস্ব প্রতিবেদন

৮ মে, ২০১৪, ০৩:৪৯:৩৬

অনুপ্রবেশকারী-তত্ত্ব নিয়ে তরজা চলছিলই বিতর্কের মুখে তা নিয়ে ব্যাখ্যাও দিচ্ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তারই সঙ্গে এ বার মতুয়াদের অধিকারের প্রশ্নে সরব হয়ে নতুন চাল দিলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। দিল্লিতে ক্ষমতায় এলে তাঁদের সরকার মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে বলে আশ্বাস দিলেন তিনি রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন প্রচারে এসে মোদীর সভা ছিল কৃষ্ণনগর, বারাসত ও কাঁকুড়গাছিতে। দক্ষিণবঙ্গে নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রভাব যথেষ্ট। গত বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়া-মন জয়ের লক্ষ্যে তৃণমূল এবং বামের রেষারেষিও বেধেছিল। সাম্প্রতিক সব ভোটের নিরিখে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের সিংহ ভাগ অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দখলে। দক্ষিণবঙ্গের প্রচারে তৃণমূলের ওই ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করতে চেয়েছেন মোদী।

বস্তুত, অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে বিজেপি-র যা বক্তব্য, তার সঙ্গেই মতুয়াদের বঞ্চনার প্রসঙ্গ জড়িয়ে নিয়েছেন মোদী। কৃষ্ণনগর এবং বারাসতে দু'টি সমাবেশেই বুধবার মতুয়া-প্রসঙ্গ তুলেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। বলেছেন, "মতুয়াদের এখনও ভারতসন্তানের স্বীকৃতি মিলল না। অনুপ্রবেশ করে যাঁরা আসছেন, তাঁরা সব পাচ্ছেন। অথচ মতুয়ারা এখনও নাগরিকত্ব পেলেন না। দিল্লিতে গিয়ে আমি এই অধিকার আপনাদের দেব।" এ দেশে অনুপ্রবেশকারীরা এসে যাবতীয় সুবিধা পাবেন অথচ মতুয়ারা নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন এই ভাবেই বিষয়টি দেখাতে চেয়েছেন মোদী। পরে কাঁকুড়গাছির সভাতেও এই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।

মোদীর বক্তব্য, "দিদি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনি বাংলাদেশিদের জন্য, ভোটব্যাঙ্কের জন্য মোদীকে জেলে পুরতে চাইছেন। কিন্তু এখানকার মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য কী করছেন? এরা 'ভারত মা কী জয়' বলে। ভারতে থাকতে চায়। তাদের কেন ভারতের নাগরিক করলেন না? আমি কথা দিচ্ছি, মতুয়া সম্প্রদায়ের কথা মন দিয়ে শুনে ব্যবস্থা নেব।"

মোদীর এই বক্তব্য অবশ্য নস্যাৎ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা। মোদীর কাঁকুড়গাছির সভার প্রায় কাছাকাছি সময়ে বেহালায় তৃণমূলের সমাবেশ থেকে মমতা বরং নিজস্ব কায়দায় মোদীকে আক্রমণ করেছেন মতুয়া-প্রশ্নেও। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, "ও (মোদী) কি গাধা না ভোঁদা? জানে না কিছুই! ওরা ভারতীয় নাগরিক। মতুয়াদের লক্ষ লক্ষ সমর্থক আছেন। কোত্থেকে নাগরিকত্ব দিবি? ওরা তো হয়েই বসে আছে!" গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে কেন এ ভাবে তুই-তোকারি করছেন, তারও নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, "তুমি থেকে তুইয়ে চলে গেলাম। রাজনৈতিক ভাবে ছোট তো, তাই! ওদের (গুজরাত) সাংসদ ২২টা, আমাদের ৪২টা।"

দলনেত্রীর সুরেই বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া, "মতুয়াদের সম্পর্কে মোদীর ধারণা নেই। এ সব কে ডি বিশ্বাসের (বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী) তত্ত্ব। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে মতুয়ারা আন্দোলন শুরু করেন। বিজেপি-র করা ওই আইনে ও'পার বাংলা থেকে আসা ২ কোটি মানুষ নাগরিকত্ব হারান। তখন মোদী কোথায় ছিলেন? এত দিন কেন এ সব কথা বলেননি? কাউকে তাড়ানো যাবে না!'' দীর্ঘ দিন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "নির্বাচনের ৪-৫ দিন আগে এ সব বলতে হয়। ১৪ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া মতুয়াদের পাশে কেউ ছিল না।"

বনগাঁর সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাসের প্রতিক্রিয়া, "রাজ্যে প্রচারে এসে মোদী আগে যা বলেছিলেন, তাতে বিজেপি-র ভোট হারানোর সম্ভাবনা ছিল। কে ডি বিশ্বাস নিশ্চয়ই ওঁর কানে সে কথাটা তুলে দিয়েছিলেন। মোদী আজ সেই বক্তব্যেরই ব্যাখ্যা দিলেন।" অন্য দিকে, বিজেপি-র মতুয়া প্রার্থী কে ডি-র বক্তব্য, "রাজ্যে এক কোটিরও বেশি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। চল্লিশ লক্ষের উপরে উত্তরবঙ্গে, বাকিটা দক্ষিণবঙ্গে। ষাট লক্ষেরও বেশি যে মতুয়ারা দক্ষিণবঙ্গে আছে, তাদের প্রায় ৪০%-ই এখনও ভারতের নাগরিকত্ব পাননি। মোদীজি এঁদের কথাই বলেছেন। ক্ষমতায় এলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়াই হবে আমাদের প্রধান কাজ।"

মোদীর মন্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে মতুয়া-মহলে। একাংশ বলছেন, রেশন-কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র না থাকা বা ভোটার তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে তাঁরা দীর্ঘ দিন আন্দোলন করেছেন। মোদী যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হলে তাঁরা কৃতজ্ঞ থাকবেন। কিন্তু এটা ভোটের চমক কি না, সেই সংশয়ও আছে তাঁদের মনে। মতুয়াদেরই আর এক পক্ষ বলছে, সর্বভারতীয় দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কি জেনে-বুঝে মিথ্যা আশ্বাস দেবেন? এই পক্ষের দাবি, "মোদীর মন্তব্য নিয়েই বিজেপি-কে চাপে ফেলার মতলবে ছিল অন্যেরা। মোদী যা বললেন, তাতে ওঁর আগের কথার ব্যাখ্যা তো হলই। উল্টে বিরোধীদের চাপে ফেললেন উনি!"

প্রসঙ্গত, অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁর আগের কথার স্পষ্ট ব্যাখ্যা এ দিন ফের দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, "শরণার্থী যাঁরা, তাঁরা আমাদের পরিবার, আপনজন। তাঁদের দেখভাল আমাদের কাজ। শুধু বাংলা বা অসম নয়, পঞ্জাব, গুজরাত, আমরা সকলে মিলে সামলাব তাঁদের। কিন্তু যাঁরা অনুপ্রবেশকারী, জেনে-বুঝে ভারতে আসছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে অনুপ্রবেশ ভারতের উপরে আক্রমণ, সেটা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।"অনুপ্রবেশ থেকে মতুয়া-প্রশ্নে ঢোকার পথে মোদী কিন্তু রেয়াত করেননি তৃণমূল বা বাম কাউকেই। লোকসভায় ২০০৫-র অগস্টে এই অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়েই তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ মমতা কী কাণ্ড বাধিয়েছিলেন, মোদী অস্ত্র করেছেন সেই ঘটনাকে। তাঁর বক্তব্য, সে সময় মমতা লোকসভায় বলতে চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ সমস্যা গুরুতর। কিন্তু বামেরা এদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছে এ বিষয়ে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি বলে স্পিকারের আসনের দিকে কাগজ ছুড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মমতা। তা উল্লেখ করে মোদীর খোঁচা, "সে দিন ভেবেছিলাম, দিদি সত্যি বাঘিনী! বাংলার জন্য একা লড়ছেন। এখন অন্য কথা বলছেন। কেন? অনুপ্রবেশকারীরা এখন আপনার ভোটব্যাঙ্ক হয়েছে বলে?" মোদীর মন্তব্য, "অনুপ্রবেশ নিয়ে ২০০৫-এর অগস্টে সংসদে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন দিদি। ২০১৪-য় দিদির সেই ডায়লগ যেই মোদী বলল, অমনি মোদী অপরাধী হয়ে গেল!"

মমতা অভিযোগও মানতে চাননি। তাঁর জবাব, "আমি নাকি অনুপ্রবেশের সমর্থনে কথা বলেছি! রেশন কার্ডে গাদা ভুয়ো নাম ছিল, যেগুলো বাতিল করতে হবে বলেছিলাম। কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল তখন।" মোদীকে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, "কে অনুপ্রবেশকারী, কিছুই জানে না! ওর মগজে আসলে মরুভূমি!"

সিপিএম এ প্রশ্নে মোদীর খোঁচাকে অস্ত্র করেছে! মোদীর কাঁকুড়গাছির সভার সময়ই হাজরা পার্কে সিপিএমের সভা থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, "মোদী হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন! ২০০৫-এ আপনি (মমতা) কী করেছিলেন? তখন তৃণমূল-বিজেপি হাত মিলিয়েছিল। আসলে তৃণমূলের নীতি ক্ষমতায় থাকা।" সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, "বাংলাদেশি নিয়ে মোদীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিতর্ক করছেন। কিন্তু তিনি এনডিএ সরকারের মন্ত্রী থাকার সময় এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। '৭১-এর পরে যাঁরা ও'পার থেকে এসেছেন, তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে যখন বিল পাশ হয়, তখন বাম- কংগ্রেস বিরোধিতা করলেও তৃণমূল সমর্থন করেছিল।" বিমানবাবুর দাবি, "এখন বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি মক্-ফাইট করছে। এই বিরহ ভোটের পর মিলনে পরিণত হবে!"

মোদী বামেদেরও বাদ দেননি। কেন্দ্রে ফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রয়াত সিপিআই নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ১৯৯৬-৯৭ সালে বলেছিলেন, এখানে এক কোটি বাংলাদেশি আছেন। তা উল্লেখ করে মোদী মনে করিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধবাবু এক বার বলেছিলেন সীমান্তের মাদ্রাসাগুলি দেশের নিরাপত্তার পক্ষে সন্দেহজনক। বুদ্ধবাবু সেই মন্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু মোদীর প্রশ্ন, "অনুপ্রবেশ নিয়ে বাম-কংগ্রেস সবাই তো ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেছে। এখন দিদিও করছেন।"

আক্রমণে কাউকে বাদ না দিলেও ভোটব্যাঙ্কের নিরিখেই মমতা যে তাঁর পয়লা নম্বর নিশানা, তা স্পষ্ট মোদীর কথায়। তিনি বলেন, "দিদি এত বদলে যাবেন ভাবিনি! কুর্সির জন্য নিজের আগের কথা ভুলে গেলেন! অনুপ্রবেশকারীরা চাকরি পাচ্ছেন। বাকিরা ভাবুন, এমন চলতে থাকলে আপনারাই না খেয়ে মরবেন!"

যার প্রেক্ষিতে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, "তুমি বাংলার কাউন্সিলরও নও! তুমি বাংলার কে? বাংলার মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়ার অধিকার তোমায় কে দিয়েছে? বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে বাংলার মানুষকে তাড়াবে! বাংলার মানুষই তো তোমায় প্রথম তাড়াবে!"



দিদি, কেন বদলে গেলেন

vote-logo

দড়ি কেন, নিজেই জেলে যাব, পাল্টা চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদন

৮ মে, ২০১৪, ০৩:৪৫:০০


1

স্বাগত বুধবার কৃষ্ণনগরের সভায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দলীয় প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

পরপর তিনটি সভায় আগাগোড়া সম্বোধন করে গেলেন 'দিদি' বলে। মুখে স্মিত হাসি ধরে রেখে বলে গেলেন, "দিদিকে আমি খুবই সম্মান করি।" কিন্তু হাসতেই হাসতেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর তরফে তীব্র আক্রমণ এল 'দিদি'র জন্য!

সারদা বা টেট-কেলেঙ্কারি নিয়ে আক্রমণ ছিল গত কয়েকটি সভাতেই। ভোট-মরসুমে তাঁর শেষ বাংলা সফরে নরেন্দ্র মোদীর মুখে সেই সব প্রসঙ্গই থাকল। কিন্তু কটাক্ষের পারদ চড়ল কয়েক গুণ। সঙ্গে যোগ হল রাজ্যে নারী নিগ্রহের বিষয়টি এবং অনুপ্রবেশকারী সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে তাঁর কোমরে দড়ি পরানোর যে কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী, তার উত্তরে চোখা চোখা বাক্য।

কৃষ্ণনগর এবং বারাসতের সমাবেশে মোদী সরব হন মূলত নারী নিগ্রহ নিয়ে। বলেন, "মা-বেটিদের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের কাজ। এখানে দিদির রাজত্ব। দিল্লিতে মা-বেটার রাজত্ব। মেয়েদের উপরে অত্যাচার কেন হচ্ছে দিদি? আপনি তো বাঘিনী! আপনার পশ্চিমবঙ্গে কেন ধর্ষণ হচ্ছে?" প্রশ্ন তোলেন, "দিদি, আপনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আপনার মমতা কোথায়? সব সহ্য করছেন?"

আর সন্ধ্যায় কাঁকুড়গাছির জনসভায় আগাগোড়া স্মিত হাসিমুখে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলেন, "কেন কষ্ট করে কোমরে দড়ি বেঁধে আমাকে জেলে ঢোকাবেন? একশো টাকার দড়ি কিনতে দশ হাজার টাকার টেন্ডার ডাকতে হবে! সারদা টেন্ডার ভরবে। গুণমান ভাল নয় বলে সেই টেন্ডার বাতিল হবে! আবার নতুন টেন্ডার হবে ১০ হাজার টাকার। এতে বাংলার মানুষের উপরে বোঝা বাড়বে। তার চেয়ে আমাকে বলবেন, আমি নিজে এসে জেলে ঢুকে যাব!'' এই বলেই সামনে দু'হাত বাড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে মোদীর চ্যালেঞ্জ, "আজ অতিথি হয়ে এসেছি। এখান থেকেই ধরুন না! জেলে গেলে বাংলা শিখব। এত মিষ্টি ভাষা। আমার তো কপাল খুলে যাবে!"

রাজ্যে একের পর এক কেলেঙ্কারির খোঁচা দিয়ে 'দিদি'র সরকারকে 'স্ক্যাম সরকার' বলেও এ দিন অভিহিত করেন মোদী। সঙ্গে আরও এক প্রস্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, "সারদা চিটফান্ডের কথা বলতেই দিদির এমন কারেন্ট লাগল! চিটফান্ডের লোকেদের গায়ে লাগবে, বোঝা যায়। কিন্তু দিদির রাগ হচ্ছে কেন? সাহস থাকলে অপরাধীদের জেলে ভরে দিন না!"

মোদীর এমন সব মন্তব্য স্বভাবতই পছন্দ হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। মোদী যখন কাঁকুড়গাছির সভায় ভোটের আগে বাংলা থেকে শেষ বারের জন্য বিদায় চাইছেন, প্রায় একই সময়ে বেহালার সভা থেকে মমতার প্রতিক্রিয়া, "তোমার ঔদ্ধত্য ভেঙে দেব! বাংলার মাটিতে প্রচার করতে দিচ্ছি, এটা আমাদের সৌজন্য। চাইলে এক সেকেন্ডে রুখে দিতাম। বিমান থেকে নামতে দিতাম না! কিন্তু এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়, তাই করিনি।" এ দিন চার জেলায় ভোট চলাকালীন মোদীর সভা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্য কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছিল তৃণমূল। সম্প্রচার অবশ্য রোখা যায়নি। শেষে মোদীর নাম না-করে তীব্র বিষোদগারই করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

বস্তুত, মমতার এই প্রতিক্রিয়ার ধরন নিয়েই এ দিন লাগাতার কটাক্ষ চালিয়ে যান মোদী। বলেন, "দিদি ভয় পাচ্ছেন, এই বুঝি মোদী এসে গেল! আগে ওঁর মাথায় ঢুকেছিল বাম। বামেদের পথেই চলছিলেন এখন মাথায় ঢুকেছে মোদী-মোদী!" পরে আরও তির্যক সুরে তাঁর মন্তব্য, "দিদি চিৎকার করছেন, ঘেমে যাচ্ছেন! আমার জন্য দিদি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এটা চলবে না। ডাক্তার বন্ধুদের বলব, এইটুকু সাহায্য আপনারা করবেন!"

নারী নিগ্রহের ঘটনায় সাম্প্রতিক কালে বারবার শিরোনামে এসেছেবারাসত। রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে এসে মোদী তাই বারাসতের কাছারি ময়দানের সভাতেই বেশি করে বলেন নারী নির্যাতনের কথা নাম না-করে দু'বার তোলেন রাজীব দাস হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বারাসত স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে কাছারি ময়দানের পাশেই দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে মদ্যপ দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব

মোদী বলেন, "এই মাঠের কাছেই দিদির সামনে ভাইকে খুন করা হয়েছিল। এখনও বিচার হয়নি। বাংলায় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।" এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, "যারা ধর্ষণ করে, তাদের উপরে আপনার কোনও রাগ নেই? যত রাগ মোদীর উপরে?" পরে ফের রাজীব দাস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "টিভিতে দেখবেন, দিদি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মা-বেটা বলছে, যা হচ্ছে হোক। আগে মোদীকে আটকাও! কারণ ওরা জানে, মোদী এলে ওদের জায়গা কোথায় হবে!"

রাজীবের দিদি রিঙ্কু দাস এ দিন বলেন, "আমাদের ওই ঘটনা নিয়ে এখন তো কেউ কোনও কথা বলছে না। ওঁর মতো মানুষের যে আমাদের ঘটনাটা মনে আছে, তাতে আমি ভরসা পাচ্ছি উনি যদি সত্যিই দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করেন, তবে আমরা শান্তি পাব"

রাজনীতির রথী থেকে সাধারণ পথচারী, সবার মুখে অনুপ্রবেশ

শাহীন আখতার

৮ মে, ২০১৪, ০৩:৪০:১০

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর বসিরহাট। এখানে বড় তিনটি দলের প্রার্থীই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। এই কেন্দ্রে শতকরা ষাট ভাগ ভোটার নাকি সংখ্যালঘু। তাই এই ব্যবস্থা।

ছবিতে কিন্তু কপালঠোকা সালাম নয়, জোড়হাতের ভঙ্গি। সিনায় সিনায় মোলাকাতও চোখে পড়ল না। এ রকমই তো হওয়ার কথা। দেশের সংখ্যাগুরুর সংস্কৃতিই তো মনন-আচরণ গড়াপেটা করে তাবৎ জনগোষ্ঠীর। ও পারে মলিনা দাস তাই হুজুরের দোয়া-পড়া জল খাওয়ান জরাগ্রস্ত সন্তানকে। গায়ে বদ-হাওয়া লাগলে বা মূল্যবান কিছু চুরি গেলে ডাক পড়ে বাড়ির ধারের ইমাম সাহেবের। হিন্দু-মুসলমানের তরফে দরগায় মুরগি ছাড়া বা শিরনি চড়ানোর চল সেই আদ্যিকালের। এ পারেও সম্ভবত তা-ই।

গাছের ছায়াতলে জোড়াফুলের বহর সাজানো হচ্ছিল। মেঠো গল্পের টানে ধারেপিঠের এক চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ি। দোকানির ঠোঁটে কুলুপ। এটা-সেটা এগিয়ে দিতে দিতে তার গিন্নি বললেন, "পার্টি আমাদের কী দিয়েছে যে, র্যালিতে যাব?'' হক কথা। আমারও সময় সময় ভাবতে ইচ্ছে করে, শাসক না থাকলে না জানি কেমন হতো আমাদের দেশটা! কান্ডারবিহীন নৌকোর মতো চলত না-হয় ঢেউয়ের দোলায়। চড়ায় গুঁতো খেত বা কুমোরের চাকের   মতো ঘুরত ভোঁ ভোঁ করে। কিন্তু তা হলে তো ভোটের মজাটা মাটি   হতো। নির্বাচন বরাবরই উৎসব বাংলাদেশের গাঁয়ে-গঞ্জে। এ বার বিরোধী দল সামিল না হওয়ায় অর্ধেক আনন্দই বরবাদ।

চায়ের দোকানির গিন্নির যত   জ্বালা মেয়েদের নিয়ে। সেই কখন থেকে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছে, "মা যাব, যাব মা?" মায়ের পাল্টা নালিশ, ক্লাস নাইন-টেনে পড়ে, র্যালিতে যেতে দেওয়া যায়!" দোকানের পিছন দিকে চুটিয়ে তাস খেলছে দু'জোড়া মানুষ। এক জন বৃদ্ধ কংগ্রেসি মুসলমান কাপে ফুঁ দিয়ে চা খাচ্ছিল। এখন তো নানামুখী হাওয়া বইছে। দল হারুক-জিতুক, তিনি হাতের পাঞ্জা তুলে বললেন, চিহ্ন বদলাবেন না। এমন জিদ্দি লোক, তায় আবার স্পষ্টভাষী। তাই এগিয়ে গিয়ে অনুপ্রবেশের কথাটা তুললাম, যা নিয়ে সম্প্রতি রথী-মহারথীরা নরক গুলজার করছেন। "এ সব বলেই তো আমাদের বিপদে ফেলা হচ্ছে।'' চায়ের কাপ নামিয়ে বৃদ্ধ নড়েচড়ে বসলেন, "রেশন কার্ড করাতে গেলে এখন অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক তথ্যপ্রমাণ দেখাতে হয়।"

আগের রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। স্নিগ্ধ রোদ্দুরের চমৎকার হাওয়া। তার মধ্যে বসিরহাটের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে নানা দলের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আনন্দবাজারের রিপোর্টার-ফটোগ্রাফার লাল ঝান্ডার গোটা তিনেক ম্যাটাডরের দিকে ছুটে গেলে, আমি আর জেএনইউ-এর ছাত্রী মৌসুমী মণ্ডল উৎসুক জনতার জটলার দিকে এগোই। মজা পুকুরের ধারে অসীমা সরকার আর শেফালি ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপ। না-পাওয়ার কিছু দুঃখ আছে অসীমার। বললেন, ''১২ বছর হল, মা বিধবা হয়েছে। সে বিধবাভাতা পাওয়ার যোগ্য তো বলো!" পাশের এক জনকে দেখিয়ে বললেন, "এই কাকিমাও পায়নি।" ভাববাচ্যে কথা বলায় তুখোড় অসীমা। ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ভঙ্গিটা হয়তো বেশ জুৎসই। শেফালির বাপের বাড়ি বাংলাদেশে। মামাবাড়ি বসিরহাটে, তাই এখানে এনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে বহু দিন আগের কথা। এর মধ্যে বাবা মরেছে, মা মরেছে। পাসপোর্টের অভাবে তাদের দেখতে যেতে পারেননি। বলতে বলতে থেমে গেলেন শেফালি। শুষ্ক চোখে তাকিয়ে রইলেন মজা পুকুরের দিকে। তার কষ্টের তো ক্ষতিপূরণ নেই।

'জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী, আপনার ঘরের সন্তান, আপনার কাছে আসছেন'। মাইকের আওয়াজটা কানে আসতেই রাস্তার পাশের একটি আধা-পাকা বাড়িতে ঢুকে পড়ি। চৌকাঠে মুখোমুখি কালো চশমা পরা বৃদ্ধের নাম গৌরহরি বাছার। গৌরহরিবাবু ২রা বৈশাখ চোখের ছানি কাটিয়েছেন সল্টলেকে। চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা। ''আপনি কী করেন?'' কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে এক জন। গৌরহরি বাবু যা করেন, তা-ই সরলচিত্তে পেশ করলেন। ''খবরদার জোড়াফুলে ভোট দেবেন না। বিজেপিকে দেবেন।'' খবরটা গৌরহরি বাছারের অন্ধ চোখে আকাশবাণীর মতো শোনায়। মনে ভাবনা, এ কেমন বিভেদের কথা!

বসিরহাট-সাতক্ষীরার সীমান্ত ফাঁড়ির নাম ও দিকে ভোমরা, এ দিকে ঘোজাডাঙ্গা। ফলন্ত আম, জামরুলের শোভা দেখতে দেখতে যাচ্ছি। মনে খানিক পুলক, খানিক ভয়। বর্ডার মানেই লোমহর্ষক, রোমাঞ্চকর কিছু। জাদু-বাস্তবতার আকর। পাশ দিয়ে ধুলো-ওড়ানো লরি ছুটে গেলে মনে হয় এ কি তেরপল-ঢাকা এমন কোনও বোঝাই, যার মধ্যে রত্ন লুকোনো? মার্কেজের 'এরেন্দিরা' গল্পের মতন? বা এমন কোনও কষ্টিপাথর আছে কি, প্রেমিকের হাতের ছোঁয়ায় যার রং পাল্টে যায়! প্রাণ-সংহারী উড়ন্ত বুলেটও ছুটে আসে যখন-তখন। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানি যার প্রতীক হয়ে আছে বাংলাদেশে।

ঘোজাডাঙ্গা খালের ধারে  বিএসএফ আটকালে, একটি লোকের সঙ্গে আলাপ হল। যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা মানুষটি  পরিচয় দিলেন, গাড়ির খালাসি। মালবোঝাই লরির সঙ্গে এপার-ওপার করেন। এখন শরীর খারাপ। লিভার টনিক হাতে বাড়ি ফিরছেন। বললেন, "মাঝে একটা অশান্তি হয়েলো, কোপাইলো আমারে।''

''কে?''

''সে আমি চিনতে পারিনি দিদি", বলে ঝুঁকে পড়ে দোমড়ানো গাল-চিবুক দেখালেন খালাসি। বললেন, পাত লাগানো আছে। লিকুইড খেতে হয়। বাড়ির ওপর দিয়ে মাল পাচার হয়। এখন যেমন, তখনও কাউকে  কিছু বলেননি খালাসি। তা-ও কোপালো। উঠোনের জলের কলটাও রাতের অন্ধকারে ভেঙে   দিয়ে গেছে। এ তো মস্ত বড় ধাঁধা! এ রহস্য বোঝা আমাদের মতো চুনোপুঁটির জন্য দুরাশা।

ফিরে আসি খালের উপরে   ব্রিজের গোড়ায়। যেখানে বিএসএফ কাগজপত্র পরখ করছে। সীমান্ত এখান থেকে বেশ খানিকটা দূর। তবু পাহারায় এত আঁটাআাঁটি। ওখানে দাঁড়িয়ে  খুচরো আলাপ হচ্ছিল পথচারীদের সঙ্গে। 'অনুপ্রবেশ' শব্দটা সবার মুখে মুখে। জানা গেল, ক'মাস আগে কিছু লোক এসেছিল এ পারে। শেখ হাসিনার নির্বাচনটা যখন হয়। তারা সবাই হিন্দু। শান্তি আসাতে যে যার ঘরে ফিরে গেছে। সে সময় গুঞ্জন উঠল, লরি বোঝাই ফেনসিডিল, জিরে-মরিচ যাচ্ছে ও পারে। জিরে-মরিচ হয়তো ভারতের রফতানিজাত পণ্য। ফেনসিডিল তো চোরাই মাল, যার দাপট ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ শুধু সর্দি-কাশির দাওয়াই নয়। এর মৌতাতে উচ্ছন্নে যাচ্ছে বাংলাদেশের ধনী-গরিব নির্বিশেষে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ।

দিনটা যে ভাবে শুরু হয়েছিল, মধ্যাহ্নে অন্য চেহারা। বাতাস গরম, পরিবেশ উত্তপ্ত। কলকাতা ফেরার পথে বিদ্যাধরীর ও পাশে মালঞ্চ বাজার। হাতুড়ি-ধানের শিষে সভার তোড়জোড় চলছে। মাইকে ঘোষণা, বিরতিতে গান। বক্তৃতা শুরু হয়নি। দূর পথ হেঁটে এক প্রৌঢ় ছাতা গুটিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকলেন। চা খেলেন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে খুচরো পয়সা দিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেলেন লালঝান্ডার সমাবেশে।

মাইকে চিন্ময়ের গলায় গান বাজছে, নয় নয় নয় এ মধুর খেলা।


মতুয়াদের কাছে টেনে নয়া অস্ত্রে শান মোদীর

modi

প্রসেনজিত্‍ বেরা, অতনু দাস ও গৌতম ধোনি


কলকাতা, বারাসত, কৃষ্ণনগর: উন্নয়ন, সারদা, টেট কেলেঙ্কারি, অনুপ্রবেশকারী৷ এর আগে রাজ্যে জনসভা করতে এসে এই সব ক'টি বিষয়কে ছুঁয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী৷ বুধবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন প্রচারে এসে তাঁর প্রধান হাতিয়ার মতুয়া সম্প্রদায়৷ এ দিন বারাসত ও কৃষ্ণনগরে নিজের বক্তৃতায় এই মতুয়া সম্প্রদায়কে কাছে টানার চেষ্টা করলেন তিনি৷ বললেন, ক্ষমতায় এলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করবে তাঁর সরকার৷


গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডের জনসভার পর এ দিনই প্রথম কলকাতায় এলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী৷ কাঁকুড়গাছির সভাতেও গত ক'দিনের মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চাঁদমারি করলেন মোদী৷ ব্যঙ্গ-কটাক্ষ-বিদ্রুপে মমতাকে বারবার বিদ্ধ করার পাশাপাশি তুলোধোনা করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও৷ সভায় ভিড়ের নিরিখেও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এ দিন টেক্কা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে৷


এ দিন তিনটি সভাতেই তৃণমূলনেত্রীকে আক্রমণের প্রশ্নে মোদীর গলায় ঝাঁঝের চেয়েও বেশি ছিল শ্লেষ৷ অনুপ্রবেশ নিয়ে মন্তব্যের জন্য মোদীর কোমরে দড়ি পরিয়ে গ্রেপ্তারির দাবি তুলেছিলেন মমতা৷ তার উত্তরে এ দিন মোদী বলেন, 'আমাকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে হলে টেন্ডার ডাকতে হবে৷ সেই টেন্ডারে তো সারদাও থাকবে৷ একশো টাকার দড়ির জন্য দশ হাজার টাকার টেন্ডার ডাকা হবে৷ তাতেও দড়ির মান ভালো হবে না৷ বরং লোকসান হবে বাংলার৷' তাঁর আরও সংযোজন, 'আমি বাংলার জেলে থাকলে প্রথমেই বাংলা ভাষা শিখব৷ বাংলা গান আমার খুব প্রিয়৷ আসলে বাংলার মানুষ আমাকে যত ভালোবাসছেন, দিদির ততই রাগ বাড়ছে৷ আমি বলছি এত রেগে যাবেন না, শরীর খারাপ হবে, অসুস্থ হয়ে পড়বেন৷'


এর আগের দু'দফায় রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলে দিয়েছেন মোদী৷ সেই ধারা বজায় রাখলেন বুধবারও৷ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে মোদী সরব হওয়ার পরই মমতা তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন তাঁকে৷ তার উত্তর দিতেই মোদী এ দিন কাঁকুড়গাছিতে বলেন, 'দিদি, ২০০৫-এর অগস্ট মাসে আপনি সংসদে তুফান তুলেছিলেন৷ সে দিন আপনি সংসদে বলেছিলেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বামেরা ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করছে৷ দিদি, ২০০৫ সালে যে কথা আপনি সংসদে বলেছিলেন সেই কথা আপনার ভাই আজ বলছে৷ এখন সেই ভাইকে আপনি জেলে পাঠাতে চাইছেন? এই পরিবর্তন হল আপনার? রাজ্যে পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন হয়েছে আপনার৷'


অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দিকেও আঙুল তুলেছেন মোদী৷ তিনি এ দিন বলেন, দিল্লিতে দেবগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে বামেদের হাতে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ছিল তখন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সমস্যার কথা নিয়মিত তোলা হত৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনিও এই সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছিলেন৷ সেই কথা তুলে বামেদের উদ্দেশ্যে মোদীর প্রশ্ন, 'যাঁরা এখন কথায় কথায় আমার সমালোচনা করছেন তাঁরা তো এই কথাই একদিন বলতেন৷ আপনাদের কথাই তো এখন আমি বলছি৷ সুপ্রিম কোর্ট অনুপ্রবেশ নিয়ে যে কথা বলেছিল সেই কথাই আমি বলছি৷' বারাসতের সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আরও তীক্ষ্ম আক্রমণ করেছেন মোদী৷ তিনি বলেন, 'প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সীমান্ত সংলগ্ন মাদ্রাসাগুলি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সন্দেহজনক বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছিলেন, অথচ এই কথা এখন আমি বলতেই ওঁদের শত্রু হয়ে গেলাম৷'


বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের আক্রমণের পাশাপাশি এ দিন মতুয়া সম্প্রদায়কে পাশে টানার চেষ্টা করে গিয়েছেন মোদী৷ কৃষ্ণনগরের সভায় তিনি বলেন, 'আমরা ক্ষমতায় এলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করব৷ অন্য দলগুলো ওদের নিয়ে শুধু রাজনীতিই করে৷' মোদীর প্রশ্ন, 'ভারতমাতার নামে মতুয়ারা স্লোগান দেন৷ তা সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেই আজও এ দেশের নাগরিকত্ব পাননি কেন?' রাজ্যে শেষ দফার ভোটে যে ১৭টি লোকসভা আসন রয়েছে সেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্ত্ত ও মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে৷ এই ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতার দুই কেন্দ্র, যাদবপুর, কৃষ্ণনগর, বহরমপুরের মতো লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্ত্ত মানুষ যেমন রয়েছে, তেমনই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস বেশি বনগাঁ লোকসভা এলাকায়৷ একই সঙ্গে এই বিস্তীর্ণ এলকায় সীমান্তবর্তী লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের সমস্যাও গুরুতর৷ তৃণমূলের উত্থানের পর এই ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রে অন্তর্গত মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ও উদ্বাস্ত্ত অধ্যুষিত এলাকা ঘাসফুলের দাপট বাড়তে থাকে৷ বনগাঁ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন মতুয়াদের বড়মা বীণাপাণি দেবীর বড়ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর৷ তা সত্ত্বেও কৌশলে মতুয়াদের মধ্যে নাগরিকত্ব নিয়ে ক্ষোভটাকেই উস্কে দিতে চেষ্টা করেছেন মোদী৷


এই পরিস্থিতে বাংলাদেশি শরণার্থী ও বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে মোদীর মন্তব্যে একসুরে সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল ও সিপিএম৷ শরণার্থীদের পাশে বিজেপি থাকলেও অনুপ্রবেশকারীদের এই দেশ থেকে তাড়ানো হবে বলে সাফ ঘোষণা করেছেন মমতা৷ এ দিন ভোট চলাকালীন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুরও তাত্‍পর্যপূর্ণ অভিযোগ, 'শিলচরে মোদীর সভার পর দাঙ্গা শুরু হল, এই রাজ্যে এর পর যদি বাঙাল খেদাও আন্দালন হয় তা হলে তো সর্বনাশ৷' বিরোধী শিবির যে তাঁর বিরুদ্ধে কৌশলে পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে সেই সম্পর্কে অবগত মোদী তাই এ দিন ফের বলেন, 'আমরা কখনও ধর্মীয় কারণে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না৷ এই শরণার্থীদের হিন্দুস্থানে জায়গা হবে না তো কোথায় জায়গা হবে?'


বারাসতের সভায় নারী নির্যাতন নিয়েও এ দিন সোচ্চার হয়েছেন মোদী৷ কাছারি ময়দানে তিনি বলেন, 'ধর্ষণে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার কোনও সদিচ্ছা নেই কেন?' নারী নির্যাতনে এই রাজ্য দেশের প্রথম তিনটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি৷ রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এত নারী নির্যাতন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷

http://eisamay.indiatimes.com/election-news/modi-trying-to-play-matua-card/articleshow/34811433.cms

উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, মোদীকে কটাক্ষ মমতার


MAMATA

এই সময়: ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে জোর জমে উঠেছে মোদী-মমতা তরজা৷ বুধবার রাজ্যের একাধিক নির্বাচনী জনসভায় নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রীকে অত্যন্ত কড়া ভাষায় তোপ দেগেছেন৷ মমতাও কাকদ্বীপ, মহেশতলা, মেটিয়াবুরুজ এবং বেহালার বিভিন্ন সভায় মোদীকে আক্রমণ করেন৷ মোদীর নাম না করে কাকদ্বীপের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'একজন এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছেন৷ তিনি এ রাজ্যের ইতিহাস, ভূগোল কিছুই জানেন না৷ কখনও বলছেন, বাংলাদেশিদের তাড়াব, কখনও বলছেন, অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াব৷ আমি বলছি, কাউকে তাড়ানো যাবে না৷ হিম্মত থাকলে গায়ে হাত দাও৷'


মোদী এদিনের সভাগুলিতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সারদা-কেলেঙ্কারি, টেট-কেলেঙ্কারি, নারী নির্যাতন প্রভৃতি নানা ইস্যুতে মমতাকে একেবারে তুলোধনা করে ছেড়েছেন৷ তৃণমূলের বিভিন্ন সভায় মমতা তাঁর সব অভিযোগের উত্তর না-দিলেও মোদীর ভাষণের সমালোচনায় সরব হয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া হল, 'মোদীর ভাষণ শুনে বোঝা যাচ্ছে, উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যই নন৷ উনি আদ্যন্ত একটি অস্থির মস্তিষ্কের মানুষ৷ এই লোক দেশ চালাবেন কী করে, কী করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সামলাবেন?' পার্থবাবু বলেন, 'একটি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী অন্য একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পিছনেই পড়ে রয়েছেন৷ আর এই রাজ্যে এসে শুধু বাঙালিদের আক্রমণ করে যাচ্ছেন৷ তাঁর মুখে এ রকম অসংলগ্ন কথাবার্তা মানায় না৷' শাসকদলের মহাসচিবের আরও মন্তব্য, 'এর আগে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন কিংবা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাঁদের কাউকে এমন লঘু কথাবার্তা শুনিনি৷ মোদীই ব্যতিক্রম দেখছি৷ আসলে এই রাজ্যে যাঁরা ওঁর উপদেষ্টা, তাঁরাই মোদীকে ডোবাচ্ছেন৷'


দু'দিন আগেও মমতা এক সভায় বলেছিলেন, 'আমি বিজেপিতে যাইনি৷ অটলবিহারী বাজপেয়িকে সম্মান করতাম৷ তাই তাঁর সঙ্গে ছিলাম৷ তখন এই 'দাঙ্গাবাজ' প্রকাশ্যে আসেননি৷'


এদিনের সভায় তিনি যথারীতি বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমকে এক বন্ধনীতে রেখে তিন দলকেই আক্রমণ শানান৷ তিনি বলেন, 'ওই তিন দলের কোনও কাজ নেই৷ তাই আমার বিরুদ্ধে শুধু কুত্‍সা আর কুত্‍সা৷ আসলে নেই কাজ তো খই ভাজ৷' তাঁর অভিযোগ, সিপিএম তো দলীয় পতাকাটা পর্যন্ত বিজেপির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে৷ মমতা বলেন, 'এখন সিপিএম বলছে, বিজেপিকে ভোট দাও৷ তৃণমূলের ভোট কেটে আমাদের জিতিয়ে দাও৷'


মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিয়েও তিনি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি৷ তিনি বলেন, 'এ তো দেখছি, ছেলে জন্মানোর আগেই তার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল৷ আরে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে কিছু হয় না৷ সব মিডিয়ার তৈরি করা৷ বিরাট টাকার খেলা৷ মিডিয়ার এই কদর্য ভূমিকার কথা ভাবা যায় না৷ তবে কোথা থেকে এই টাকা আসছে, সব বেরিয়ে যাবে৷ পাপ চিরদিন লুকিয়ে থাকে না৷' সম্প্রতি সিপিএমের নির্বাচনী জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে আক্রমণ করছেন৷ তিনিও অভিযোগ করছেন, তৃণমূল চলছে পাপের টাকায়৷ মমতা যে হেলিকপ্টারে চেপে প্রচার চালাচ্ছেন, তার উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু বসছেন, 'এই যে উনি হেলিকপ্টারে করে সভা করছেন, কার টাকায়? কে দিচ্ছে এই হেলিকপ্টারের টাকা৷ আমরা তো হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারছি না৷ সব পাপের টাকা৷ আমরা কখনও পাপের টাকায় রাজনীতি করি না, করবও না৷ তৃণমূল করে, করে চলেছে৷ সব বেরিয়ে যাবে সিবিআই তদন্ত হলে৷'


vote-logo

দিদি ডাকেই সভা মাতালেন মোদী

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সুস্মিত হালদার

বারাসত ও কৃষ্ণনগর, ৮ মে, ২০১৪, ০৩:২৬:১৩

e e e print

3

কাঁকুড়গাছির নির্বাচনী জনসভায় নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল সিংহ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

দিদি-ই-ই-ই...

গুজরাতি প্রবীণের গলায় বাঁকা টান। আর জনতা পাগলপারা।

দিদি, আপ বলিয়ে...

সুরটা কখনও চড়ছে, নামছে খাদে, বাঁকছে-চুরছে, মোচড় খাচ্ছে। বাঁকা হাসছে।

আর সামনে, পাশে, বাড়ির ছাদে, উপরে-নীচে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে জনতা। মুহূর্মুহূ চিৎকারে ডুবে যাচ্ছে বক্তার গলা মোদী, মোদী, মোদী...

যেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোনও পপস্টার। বা এই মাত্র হাইকোর্ট এন্ড দিয়ে বলটা চুন্নি করে দিলেন সচিন।

বাংলার মাটিতে পদ্ম-ফোটানো শারদ-বাতাস তিনি পেতে শুরু করেছিলেন শ্রীরামপুর থেকেই। গত সপ্তাহে বাঁকুড়া-আসানসোল ছুঁয়ে এখন তা প্রায় ঝড়। আর হাওয়ার সেই বদলটাই এখন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।

বুধবার কৃষ্ণনগরে প্রথম সভা সেরে মোদী যখন বারাসতে পৌঁছলেন, মধুমূরলী মাঠে অস্থায়ী হেলিপ্যাড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটআউট, পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে প্রায় ঘেরা। চপার থেকে নেমে যখন ইতি-উতি দেখছেন, পাশ থেকে এক বিজেপি নেতা ফিসফিস করে জানান, 'আগের রাতেও এ সব ছিল না, জানেন! রাতারাতিই...।' মুচকি হেসে মোদী বললেন, "এ ভাবে ভাবছেন কেন? উনি নিজে আসতে পারেননি, তাই এ ভাবেই করজোড়ে আমায় স্বাগত জানাতে হেলিপ্যাডে হাজির হয়েছেন। ভালই তো!"

জনজোয়ার কৃষ্ণনগরে মোদীর জনসভায়  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

হেলিপ্যাড থেকে কাছারি ময়দানের সভাস্থল মিনিট পাঁচেকের পথ। গাড়ি এগোচ্ছে, রাস্তার দু'ধারে তখন কাতারে কাতারে লোক। মোদী সমানে হাত নাড়ছেন আর ব্যাকসিটে বসা বিজেপি নেতাকে বলছেন "এটা তো বডোদরা বা বারাণসী নয়। বাংলার মাটিতে এত ভালবাসা পাব, এ আমার কল্পনারও অতীত। এর মধ্যে আমি ভবিষ্যৎ দেখছি।"

ভবিষ্যৎটা অবশ্য তিনি আসমান থেকেই দেখতে পাচ্ছিলেন। বারাসতের আকাশে সাদা হেলিকপ্টার দেখা দিতেই গোটা কাছারি ময়দানের হাজার হাজার হাত উপরে। সম্মিলিত 'মোদী মোদী' ধ্বনি চপারে বসেও শুনতে পাওয়া যায়। সেই ধ্বনি সারা পথ গড়াতে-গড়াতে যখন থামল, কথা বলার সুযোগ না পেয়ে মোদী কয়েক মিনিট মঞ্চে চুপ করে দাঁড়িয়ে।

মোদীর আসতে দেরি হয়েছে। কিন্তু তিনি যে এসেছেন, তাতেই সকলের দিল খুশ। সকাল থেকেই আসলে মেলা বসে গিয়েছিল কাছারি ময়দানে। ট্রেনে-বাসে বোঝাই হয়ে আসতে শুরু করেছিল ব্যারাকপুর-বনগাঁ-বসিরহাট। সারা মাঠ জুড়ে পোস্টার, ফেস্টুন, পদ্মফুলের কাট আউট, মোদীর ছবি। পোস্টারে লেখা, "আই অ্যাম মোদীফায়েড।" কারও  মুখে মোদী-মুখোশ, কেউ বা আপাদমস্তক রং মেখে দাঁড়িয়ে। কেউ নিজের চেয়েও লম্বা পতাকা টানা নাড়িয়ে গিয়েছেন কেউ।

ইতিমধ্যে এক দল মতুয়া চলে এসেছেন কাঁসর-ডঙ্কা বাজিয়ে। দশ টাকায় মোদী, দশ টাকায় মোদী হইহই করে চটি বই 'জিতবে ভারত' বিক্রি করছেন ব্যারাকপুরের চন্দনপুকুর থেকে আসা ইংরেজি এমএ-র ছাত্র লব ঘোষ। ছাত্র পড়িয়ে তিনি নিজের পড়ার খরচ চালান। বললেন, "ঘুষ দিতে পারিনি। তাই টেট পরীক্ষায় পাশ করিনি। জানি না, পরিবর্তনের পরিবর্তন হবে কি না।"

কৃষ্ণনগরে শক্তিমন্দির মাঠে মোদীর আসার কথা ছিল ২টো নাগাদ। বিজেপি দেড়শো বাসের ব্যবস্থা করেছিল। ছোট-ছোট ট্রাকে-ম্যাটাডরেও সকাল থেকেই লোকে আসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মোদী আসেন প্রায় দু'ঘণ্টা দেরিতে। তাতে টুকটুক করে বাড়ির পথ ধরার বদলে চড়া রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন আবালবৃদ্ধবণিতা। কলেজ পড়ুয়াদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি তুলনায় ছোট কারবালার মাঠে সভা করে গিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের ভিড় সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের দিঘলকান্দি থেকে এসেছিলেন লক্ষ্মণ ঘোষ, গোপাল ঘোষেরা। ঘাম মুছতে মুছতে গোপালবাবু বলেন, "আমাদের প্রচুর আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে থেকে এসেছে পরে। আমাদের নেতা বাংলাদেশিদের নিয়ে কী বলছেন, সেটা নিজের কানে শুনব বলে এসেছি।" শ্যামপুর থেকে নাতনির সঙ্গে আসা কমলা বিশ্বাসের সোজা কথা, "শুনছি, মোদী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তাই আগেই দেখতে এলাম।"

দুই জায়গা ঘুরে সন্ধ্যায় মোদী যখন কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে এসেছেন, ছবিটা এতটুকু পাল্টায়নি। লক্ষণীয় ভাবে চোখে পড়েছে জিনস-টি শার্টে ঝলমলে জেন ওয়াইয়ের উপস্থিতি, যার আবার একটা বড় অংশ তরুণীরা। মঞ্চের দিকে পিছন ফিরে মোদীর সঙ্গে এক ফ্রেমে সেলফি তুলতেও দেখা গিয়েছে অনেককে। শুরু থেকেই ছোট-ছোট তির্যক কথায় আক্রমণে গিয়েছেন পোড় খাওয়া নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে যত বার 'দিদি-ই-ই-ই' বলে টান দিয়েছেন, হাসির হররা তুলে দুলে উঠেছে মাঠ। বিরোধীদের লক্ষ করে মোদী মিছরির ছুরি শানিয়েছেন। জনতা কখনও দু'হাত তুলে জয়ধ্বনি দিয়েছে, কখনও সুরে সুর মিলিয়েছে।

একেবারে শেষের দিকে প্রায় মন্ত্র জপ করানোর মতো প্রশ্নোত্তরে চলে গিয়েছেন প্রবীণ গুজরাতি:

এখন কী কাল?

জনতা: গরম কাল।

গরম কখন বেশি, দুপুরে না সকালে?

সমস্বরে: সকালে।

তবে ভোট কখন দিতে হবে?

ময়দান: সকালে।

তা হলে আমার সঙ্গে বলুন 'পহলে মতদান, ফির জলপান!'

সম্মোহিত হাজার কণ্ঠে প্রতিধ্বনি মতদান, মতদান!

বারাসতের মাঠে ছোট-ছোট পাউচে রঙিন শরবত বিক্রি করছিলেন বিড়ার শ্রীবাস বিশ্বাস। কিন্তু লাল, সাদা, সবুজ নেই, শুধু কমলা। বাকি রং গেল কোথায়? শ্রীবাস হাসেন, "সব গেরুয়া। অন্য রঙের বিক্রি নেই দাদা!" বেড়াচাঁপা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছিল কেজি ওয়ানের দেবার্ঘ্য দাস। কেন এসেছো? কচি গলায় চটপট জবাব, "মোদী আঙ্কেলকে দেখব।" বলতেই পাশ থেকে পিঠে মায়ের হাতের আলতো চাপড়, "আঙ্কেল আবার কী? বলো, মোদীজিকে দেখতেই এখানে এসেছি।"

আর মোদী বলে গেলেন, "ভালবাসা দিয়ে বাংলা আমায় জিতে নিয়েছে। ছেলের প্রতি মায়ের যে অধিকার, ভাইয়ের প্রতি বোনের যে অধিকার, আমার প্রতিও তা-ই। আমি বাংলারই হয়ে গেলাম।"

মমতাকে আক্রমণের সুর চড়ালেন মোদি

সব্যসাচী সরকার, অমিতকুমার ঘোষ ও সোহম সেনগুপ্ত

সব্যসাচী সরকার, অমিতকুমার ঘোষ ও সোহম সেনগুপ্ত




কলকাতা, কৃষ্ণনগর ও বারাসত, ৭ মে– 'ক্ষমতার লোভে বদলে গেছেন দিদি৷‌ রাজ্যের পরিবর্তন হয়নি৷‌ পরিবর্তন তো শুধু আপনারই হয়েছে৷‌ আপনি বদলে যাবেন, ভাবিনি৷‌ নির্বাচনী প্রচারে এসে এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদি৷‌ আপনার এত রাগ আমার ওপর যে, দিনের অর্ধেক কথাই মোদিকে নিয়ে বলেন৷‌ যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা, তাঁকে বলি মোদিকে গালাগাল পরে দেবেন৷‌ আগে নিজের রাজ্যের মা-বোনেদের সম্মান বাঁচান৷‌ মহিলাদের ওপর অত্যাচারে এ রাজ্যের স্হান এখন তিন নম্বরে৷‌' বুধবার রাজ্যের তিন জনসভায় নির্বাচনী প্রচারে এসে এভাবেই সুর চড়ালেন নরেন্দ্র মোদি৷‌ চতুর্থ দফার ভোটশেষে আরও আক্রমণের সুর চড়ালেন তিনি৷‌ সারদা, অনুপ্রবেশ-সহ কয়েকটি বিষয় তুলে ৩টি জনসভাতেই আক্রমণাত্মক৷‌ সেইসঙ্গে অবশ্য ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন, তাঁকে সমর্থন করলে সুফল মিলবে৷‌ তাঁর কথায় আমি স্ক্যাম ইন্ডিয়ার বদলে স্কিল ইন্ডিয়া গড়ব৷‌ কাঁকুড়গাছির সভায় তিনি বলেন, কংগ্রেস ভোটে জেতার জন্য জেল থেকে অপরাধীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে৷‌ লালুপ্রসাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে৷‌ কংগ্রেসকে বলছি, হিন্দুস্হানের সমস্ত জেলে যত অপরাধী আছে, তাদের সবার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেও তোমরা জিতবে না৷‌ তিনি বলেন, এই বাংলা আমাকে জয় করেছে৷‌ আমি আপনাদের জন্য৷‌ বাংলার মানুষের ভালবাসা যত বাড়ছে, দিদির তত রাগ বাড়ছে৷‌ দিদিকে বলি, আপনি আমাকে যা বলছেন, তা আমার জন্য ফুল হয়ে, আশীর্বাদ হয়ে ঝরে পড়বে৷‌ এরপরই সুর চড়িয়ে মোদি বলেন, শুনছি দিদি আমাকে নাকি জেলে নিয়ে যাবেন৷‌ আপনি বলুন, কোন জেলে যেতে হবে, আমি নিজেই যাব৷‌ বাংলার জেলে গেলে আমি কথা দিচ্ছি, সেখানে বসে বাংলাভাষা শিখব৷‌ কিন্তু দিদির তখনও চিম্তা হবে৷‌ আমি বাংলাভাষা শিখলে যদি আমাকে বেশি ভালবাসে বাংলার লোক! এদিনও তরুণ ভোটারদের লক্ষ্য করে মোদির প্রার্থনা, আপনারা শক্তিশালী সরকার দিন, আমি শক্তিশালী ভারত দেব৷‌ বন্ধুরা জেগে ওঠো, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ো, দিল্লিতে কাজের সরকার পাঠাও৷‌ বারাসতে বি জে পি প্রার্থী পি সি সরকার, বসিরহাটের বি জে প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য, বনগাঁর কে ডি বিশ্বাস, ব্যারাকপুরের রমেশকুমার হান্ডা, কলকাতা উত্তরের রাহুল সিনহা, কলকাতা দক্ষিণের তথাগত রায় এবং যাদবপুরের বি জে পি প্রার্থী ড. স্বরূপপ্রসাদ ঘোষের সমর্থনে সভা করেন৷‌ অনুপ্রবেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, যাঁরা বাংলাদেশ থেকে ধর্ম বা অন্য কোনও কারণে শরণার্থী হিসেবে এসেছেন, তাঁরা হিন্দুস্হানে স্বাগত৷‌ কিন্তু যারা অনুপ্রবেশকারী, তারা নয়৷‌ সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, অনুপ্রবেশ মানে আক্রমণ৷‌ দিদি এই বাংলাদেশিদের সরাতে সংসদে ২০০৫ সালে সরব হয়েছিলেন৷‌ ওই সময় স্পিকারের দিকে কাগজ ছুঁড়েছিলেন৷‌ আগে দিদি বাংলার জন্য লড়তেন৷‌ আর এখন দিদি গদির জন্য লড়েন৷‌ এখন দিদির খুব রাগ৷‌ কিন্তু এত রাগ ভাল নয়৷‌ অত রাগ হলে অসুস্হ হয়ে পড়তে পারেন৷‌ উনি অসুস্হ হোন, এটা চাই না৷‌ বারাসতের কাছারি মাঠে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৫ বি জে পি প্রার্থীর সমর্থনে এক জনসভায় এসে বুধবার ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোপ দাগলেন বি জে পি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী৷‌ বলেন, সারদার কথা বললেই দিদির কারেন্ট লাগে৷‌ ওই চিটফান্ড মালিকদের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক৷‌ কিন্তু ওঁর কেন রাগ হচ্ছে? আপনার যদি কোনও দেনাপাওনা না থাকে, তা হলে বলে দিন৷‌ অযথা আমাকে গালাগালি করছেন কেন৷‌ তিনি বলেন, আগামী ১৬ তারিখ বি জে পি ক্ষমতায় এলে ওই সবের বিচার হবে৷‌ তার পর কার ঠিকানা কোথায় হবে তা সময়ই বলবে৷‌ মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বাংলার মানুষের আস্হা হারিয়েছেন দিদি৷‌ তাই বাংলা আজ মোদিকেই চাইছে৷‌ এখানেও মোদি শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তোলেন৷‌ তোলেন মতুয়াদের কথা৷‌ বলেন, সরকার গঠন হলেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷‌ বলেন, বাংলায় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে৷‌ ধর্ষণের পর খুনও করা হচ্ছে৷‌ কিন্তু বিচার হচ্ছে না৷‌ দিল্লিতে এক হাজার কোটি টাকা নির্ভয়ার নামে ফান্ড করা হয়েছে৷‌ কিন্তু এক টাকাও খরচ করা হয়নি৷‌ আর দিদি চুপ করে আছেন৷‌ তিনি বলেন, ২০০৫ সালে সংসদে বাঘিনির মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দিদি৷‌ তিনি অনুপ্রবেশকারীদের করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন৷‌ তাঁর যুক্তি ছিল, সি পি এম এই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ভোট করে ক্ষমতায় থেকে যাচ্ছে৷‌ আজ তিনি যখন সেই কথাই বলছেন, তখন খারাপ হচ্ছেন৷‌ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়েও চিম্তা নেই মমতা ব্যানার্জির৷‌ মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে না পেরে দিদি বলছেন মোদিকে আটকাতে৷‌ এদিন তিনি বলেন, বাংলা আমাকে জয় করে নিয়েছে৷‌ তাই কথা দিচ্ছি, বাংলার মানুষের ভালবাসার মান রাখব৷‌ কৃষ্ণনগরে মোদি বলেন, 'দিদি কংগ্রেস, বামফ্রন্ট আলাদা আলাদা লড়লেও পর্দার পেছনে এরা এক৷‌ কলকাতায় কুস্তি আর দিল্লিতে দোস্তি! এরা একই থালায় খাচ্ছে৷‌ আর সবাই বলছে মোদিকে রোকো৷‌' নরেন্দ্র মোদি এদিনও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে 'মা-বেটার' সরকার বলে সম্বোধন করে সমালোচনা করেন৷‌ মতুয়া সম্প্রদায় নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'মতুয়া সম্প্রদায় ভারতমাতার জয় বলে, তাই তারা এদেশের নাগরিক৷‌ অথচ তাদের অনেকের নাম ভোটার তালিকায় নেই৷‌' মোদি একবারও মমতার নাম করেননি৷‌ তাঁকে 'দিদি' বলে সম্বোধন করে বক্তৃতা দিয়েছেন৷‌ মোদি এদিন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সত্যব্রত মুখার্জি ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাসের সমর্থনে কৃষ্ণনগরের শক্তিমন্দিরের মাঠে বক্তৃতা দেন৷‌


মোদি ও মমতার মডেলকে কটাক্ষ বুদ্ধর


Google plus share

Facebook share

Twitter share

LinkedIn share


ভোলানাথ ঘড়ই


ওদিকে মোদি একটা মডেল দেখাচ্ছে৷‌ বলছে উন্নয়নের মডেল৷‌ কি মডেল সবাই জানে৷‌ আর এ রাজ্যে সরকারও একটা মডেল দেখাচ্ছে৷‌ বেঙ্গল মডেল৷‌ যার মূল কথা হল ধার করো আর জলসা করো৷‌ বুধবার সন্ধ্যায় হাজরা মোড়ে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে সি পি এম প্রার্থী নন্দিনী মুখার্জির সমর্থনে এক জনসভায় এভাবেই কটাক্ষ করলেন সি পি এম পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷‌ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এদিন মমতার সাম্প্রতিক মোদি বিরোধিতা নিয়েও ঠেস দেন৷‌ বলেন, খোদ নরেন্দ্র মোদিই তো হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন৷‌ এদিন দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার ভোটারদের সামনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, প্রবল সন্ত্রাস, কারচুপি করা সত্ত্বেও আমরা হিসেব করে দেখেছি এ পর্যম্ত যা ভোট হয়েছে তাতে আমাদের ফল ভাল হবে৷‌ আজকে যে ৬টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে সেখানেও ফল ভাল হবে৷‌ ১২ মে শেষ দফার ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷‌ আপনারা সক্রিয় হোন৷‌ তৈরি থাকুন৷‌ লড়াই প্রতিরোধ জারি রাখুন৷‌ গরিব মানুষের স্বার্থে আমাদের জিততেই হবে৷‌ এদিনের জনসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্হিত ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা উদয়ন গুহ, আর এস পি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য, সি পি এম নেত্রী মিনতি ঘোষ, সি পি আই নেতা প্রবীর দেব এবং ডি এস পি-র নেতা রতন মজুমদার৷‌ সভাপতিত্ব করেন নিরঞ্জন চ্যাটার্জি৷‌ এদিন হাজরা মোড়ের জনসভায় রাস্তার একটা দিক উপছে পড়েছিল মানুষে৷‌ প্রার্থী নন্দিনী মুখার্জিকে পরিচয় করিয়ে দেন বুদ্ধবাবু৷‌ তিনি এদিনের বক্তৃতায় একই সঙ্গে কংগ্রেস, বি জে পি-র অসার অর্থনীতি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের এ রাজ্যের দিন বদলের নৈরাজ্য তুলে ধরে বলেন, নন্দিনী এ রাজ্যের যোগ্যতম প্রার্থীদের একজন৷‌ রাজনীতি ক্রমশ কলুষিত হয়ে উঠছে৷‌ নন্দিনীর মতো শিক্ষিত, মার্জিতরা রাজনীতির সামনের সারিতে থাকুন, এটাই আমরা চাই৷‌ তিনি বলেন, কংগ্রেস বুঝতে পারছে ওরা হেরে গেছে৷‌ আমরাও চাই ওরা হেরে যাক৷‌ কারণ ওদের রাজনীতির জন্যই দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ ২০ টাকার বেশি দিনে আয় করতে পারে না৷‌ আমরা বারবার বলেছি তবু উদার নীতির পথ ছাড়েননি মনমোহন৷‌ তাই মানুষ আজ বলছে তুমি বিদেয় হও৷‌ কিন্তু কংগ্রেসের জায়গা নিতে আরও ভয়ঙ্কর শক্তি ছুটে আসছে৷‌ লাল, নীল, সাদা– রঙবেরঙের জামা পরে, পাগড়ি পরে, হাতে তরোয়াল নিয়ে ছুটে আসছেন নরেন্দ্র মোদি৷‌ ভয়ঙ্কর সর্বনাশ হবে৷‌ কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন নিয়ে মিডিয়াও প্রচার করছে৷‌ কিন্তু মোদি মানেই অবাধ মুনাফা৷‌ পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ করা৷‌ এর পেছনে আছে আর এস এস৷‌ যারা হিন্দুরাষ্ট্র চায় দাঙ্গার বিনিময়ে৷‌ গুজরাটের দিকে তাকান৷‌ দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীদের শিক্ষা, মা ও শিশুর স্বাস্হ্য, সমস্ত কিছুতে পিছিয়ে৷‌ এই গুজরাট মডেল সারা দেশে চালু হবে? আমাদের রাজ্যে পরিবর্তনের সরকারও একটা মডেল খাড়া করেছে৷‌ বামফ্রন্ট চলে যাওয়ার পর একটা কারখানাও হয়নি৷‌ যা প্রস্তুত করে রেখেছিলাম শালবনি, ভিডিওকন, উইপ্রো, ইনফোসিস– সব চলে যাবে বলছে৷‌ নারী নির্যাতন, ধর্ষণে প্রথম স্হান৷‌ কিছুই করেনি এই সরকার৷‌ একটা জিনিস করেছে৷‌ আমাদের করে যাওয়া সেতু, বাড়ি সমস্ত নীল রঙ করে দিয়েছে৷‌ রঙ করার সরকার৷‌ আর কী করছে? দেদার ধার করছে আর জলসা করছে৷‌ এটাই নাকি মডেল! বেঙ্গল মডেল৷‌ বুদ্ধবাবু বলেন, ভোট ঘোষণার পর থেকে একবারও মনে হয়নি মোদি দাঙ্গার মুখ৷‌ হঠাৎ গালিগালাজ শুরু করলেন৷‌ অনুপ্রবেশকারী নিয়ে এখন বিরোধিতা করছেন৷‌ কিন্তু দাঙ্গার পর এই মুখ্যমন্ত্রী সেদিন যাঁকে ফুল পাঠিয়েছিলেন সেই মোদি তো আজ হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন৷‌ বলেছেন, সংসদে আপনিই তো শুরু করেছিলেন ২০০৫-এ৷‌ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ-সব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না৷‌ এই তৃণমূল যখন তখন বি জে পি-র হাত ধরতে পারে৷‌ কেন না যাদের কোনও নীতি, আদর্শ নেই তারা ক্ষমতার লোভে সব করতে পারে৷‌ বুদ্ধবাবু এদিন শেষ করেন তৃতীয় বিকল্পের কথা বলে৷‌ বলেন, নেতা নয়, নীতির কথা বলছি আমরা৷‌ সমস্ত গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজির চাল, কৃষককে জমি, বৃদ্ধদের ৪ হাজার টাকা পেনশন, ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করা– এগুলো অবশ্যই সম্ভব৷‌ বামেদের উদ্যোগে না কংগ্রেস না বি জে পি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় বিকল্প গড়াও সম্ভব৷‌ কংগ্রেস তো হারছেই৷‌ সর্বনাশা বি জে পি-কেও রুখতেই হবে৷‌


গরিষ্ঠতা দূরস্ত বুঝেই স্পর্শকাতর

প্রচারের পথে বি জে পি

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ৭ই মে— শুরু করেছিলেন উন্নয়ন, সড়ক-বিদ্যুৎ, বুলেট ট্রেনের গল্প শুনিয়ে। লোকসভা ভোটের শেষ দুই পর্বে নরেন্দ্র মোদী এবং বি জে পি ক্রমশ সাম্প্রদায়িক ভাবে স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। 'বাংলাদেশী' বহিষ্কার, অযোধ্যায় রাম ও প্রস্তাবিত মন্দিরের মঞ্চসজ্জার সামনে ভাষণ, ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত শাহকে দিয়ে আজমগড়কে 'সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি' বলে অভিহিত করানোর মধ্যে দিয়ে মেরুকরণের প্রয়াস চালানো হচ্ছে। একেবারে শীর্ষ স্তরে এই প্রচারের থেকে অনেক বেশি উগ্রতা নিয়ে গ্রাম-শহরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ হিন্দুত্ববাদী প্রচার সামনে আনছে।


প্রশ্ন হলো, কেন? কেন ধাপে ধাপে বি জে পি-র চিরাচরিত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্রচারেরই ‌আশ্রয় নেওয়া হলো? রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের গণনা, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার সম্ভাবনা ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে দেখেই শেষ দুই পর্বে মরিয়া মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বি জে পি। উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গে ৭ই ও ১২ই মে'র দুই পর্বের যেখানে ভোট পাঁচ বছর আগে বি জে পি সেখানে খারাপ ফল করেছিল। দলের নির্বাচনী প্রচারের পরিকল্পনাকারীরা দেখেছেন, মোদীকে সামনে রেখে নজিরবিহীন ব্যয়ের প্রচারের পরেও এই তিন রাজ্যে তেমন কোনো অগ্রগতির নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় তথাকথিত মোদী-হাওয়া আটকে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের জোর অনেক বেশি। মধ্য ও পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের যে আসনগুলিতে শেষ দুই পর্বে ভোট, সেখানে জাতবিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বুধবার নয়াদিল্লিতে সি পি আই (এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, মোদীর নেতৃত্বে সরকার হবে না। ইয়েচুরি বলেন, সংবাদমাধ্যম এবং তাঁর নিজের বিচারে মোদী তো অনেক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী বনে গেছেন। এতদিন আগে যে এখন চলছে 'প্রতিষ্ঠান-বিরোধী' ভোট, মোদী-বিরোধী ভোটের পর্ব।


বুধবার ভোট হয়েছে বিহারের ৭ এবং উত্তর প্রদেশের ১৫ আসনে। এই আসনগুলির মধ্যে কয়েকটি বি জে পি নতুন করে জিততে পারে বলে দলের নেতাদের ধারণা। তবে সংখ্যা বেশি নয়। গতবার এমনকি ফৈজাবাদ আসনও কংগ্রেস জিতেছিল। এবার তা জিতে আনতে মরিয়া চেষ্টা করেছে বি জে পি। বিহারেও এই পর্বে বি জে পি'র নতুন লাভ কম। ১২ই মে পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং বিহার মিলিয়ে ২৪টি আসনের ভোট। ২০০৯-এ বি জে পি ৫টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল। বড়জোর এক-দুটি বাড়বে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পূর্ব উত্তর প্রদেশে দলিত, অনগ্রসর অংশের ভোটে মায়াবতী, মুলায়াম সিংদের প্রভাব যথেষ্টই গভীর। সেখানে দাঁত ফোটানো বেশ কঠিন। মায়াবতী প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে নিজের ভোট গুছিয়ে নিয়েছেন বলেই রিপোর্ট। অন্যদিকে, একেক কেন্দ্রে একেক রকম হলেও সংখ্যালঘু ভোট বি জে পি-র পক্ষে সংহত হচ্ছে। উত্তর প্রদেশে তথাকথিত উচ্চতর বর্ণগুলির মধ্যে বিভাজন রয়েছে এবং বি জে পি-র পক্ষে সামগ্রিক স্রোতের কোনো চিহ্নই নেই। এই অবস্থায় স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট করলে বি জে পি-র বাড়তি আসন পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বি জে পি তাই বাকি সময়ে মেরুকরণ তীব্র করতেই চাইছে।


বুধবার ভোট হয়েছে অন্ধ্র প্রদেশের 'সীমান্ধ্র' অংশে। রাজ্যের ২৫ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৫আসনে প্রার্থী দিয়েছে বি জে পি। বাকি আসনে জোটসঙ্গী টি ডি পি। কিন্তু রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অনেক এগিয়ে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াই এস আর কংগ্রেস। এ রাজ্য থেকে ফায়দা তোলা খুবই কঠিন। এমনকি শূন্য হাতেও ফিরতে হতে পারে বি জে পি-কে।


পশ্চিমবঙ্গে মূল লড়াই তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে। নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে উপর্যুপরি সভা করিয়ে এবং স্পর্শকাতর বিষয় সামনে এনে সে রাজ্যে কিছু এগোনোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এক লাফে বহু শতাংশ ভোট বৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে না, এ কথা জেনেই হিসেব কষছেন বি জে পি নেতারা।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=55868#sthash.fdKfdHWj.dpuf


No comments:

Post a Comment