Palah Biswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Zia clarifies his timing of declaration of independence

what mujib said

Jyothi Basu Is Dead

Unflinching Left firm on nuke deal

Jyoti Basu's Address on the Lok Sabha Elections 2009

Basu expresses shock over poll debacle

Jyoti Basu: The Pragmatist

Dr.BR Ambedkar

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin Babu and basanti Devi were living

"The Day India Burned"--A Documentary On Partition Part-1/9

Partition

Partition of India - refugees displaced by the partition

Wednesday, June 12, 2013

সুন্দরবন এগিয়ে চলেছে, সর্বনাশের দিকে যাঁরা পরিবেশগত কারণে উদ্বাস্তু হবেন, তাঁদের সুন্দরবন আপন করে নিতে পারবে? যাঁরা আর্থিক দিক থেকে মূল্যবান ক্রেতা হয়ে শহরের আশেপাশে বসত গড়েছেন, তাঁদের উত্তরসূরিরাও কি আর সুন্দরবনে ফিরবে? তুষার কাঞ্জিলাল

সুন্দরবন এগিয়ে চলেছে, সর্বনাশের দিকে
মানিকতলা নাকি খুব ভাল মাছের বাজার, তাই ভূপেন অন্তত এক দিনের জন্যেও ভাল ইলিশের সন্ধানে বাজারে ঢুকল। বিক্রেতার ঝাঁকায় অতি বৃহৎ ইলিশের মনমোহিনী রূপ যার মন এবং জিহ্বাকে চুম্বকের মতো না টানে, সে কাঠ-বাঙালই নয়। ভূপেন সে দিন খুব মৌজে ছিল। নিজের কাজের বাইরে বাড়তি কিছু কাজ করে পকেটে কিছু টাকা ঢুকেছে। মধ্যবর্গীয় কিলোটাক ওজন হবে একটি মাছ হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই, দাম কত পড়বে? বিক্রেতা নির্বিকার ভাবে মাছের গায়ে জল ছড়াতে ছড়াতে বলল 'বারোশো'। এক কিলো মাছের দাম বারোশো টাকা! তিন দিনের মজুরি! ভূপেন সভয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই, এ দামে কেউ মাছ কেনে? নির্বিকার উত্তর পেল, পড়ে থাকে না। না হলে কি এমন সাজিয়ে-গুছিয়ে দোকান করে বসতাম? ভূপেন এর পরে তেলাপিয়া অঞ্চলে ঘুরঘুর করল। তার পর আড়াইশো খানেক কুচো চিংড়ি নিয়ে ঘরমুখো হাঁটা দিল। এই মাছের বাজারেই আপনি শ্রেণিবিভক্ত সমাজকে দেখতে পাবেন।
ভূপেনের বর্তমান নিবাস উল্টাডাঙার পাশে সুন্দরবনের একটি দ্বীপের নামধারী একটি কলোনিতে। বাসন্তী সুন্দরবনের অতি-পরিচিত বড় গঞ্জ। ওর বাড়ি ওখান থেকে প্রায় পাঁচ ক্রোশ দূরে একটি গ্রামের নিম্নবর্গীয়দের পাড়ায়। আয়লার পরে বাড়ি বলতে যা বোঝায়, তা হচ্ছে খয়রাতি হিসেবে পাওয়া দু'খানা পলিথিনে মোড়া ছোট্ট একটি কুঁজি। নিজের চাষযোগ্য জমি কোনও কালেই ছিল না। ছোটবেলা থেকে গতর-নির্ভর। আয়লার আগে ছিল খড়ের চালের কুঁজি, এখন বদলে হয়েছে পলিথিন।
ভূপেন বউ, বালবাচ্চা নিয়ে খাটাখাটনি করেই মোটামুটি দু'বেলা খাবার জোগাড় করত। নিজে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। এখন গ্রামেগঞ্জেও স্কুল-কলেজের ছড়াছড়ি। পড়তে পয়সা লাগে না। আবার দুপুরে অনেক সময়েই মুখে না-দেওয়ার মতো না হলেও কিছু খাবার জোটে। এক বার জার্মানিতে গিয়ে শুনেছিলাম যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তখন জার্মানি প্রায় ধ্বংসস্তূপ। সেই সময় স্কুলের ছাত্রদের কিছু রুটি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সেটাই ছিল প্রায় গোটা পরিবারের খাবার।
ভবিষ্যৎ? আয়লার পরে সুন্দরবন। ছবি: সনৎকুমার সিংহ
অবশ্য অন্য জাতের স্কুলও আছে। সুন্দরবনে সকালের দিকে চোখ খোলা রেখে চললে আপনার চোখে পড়বে খাঁচার মতো ভ্যান-বাহিত হয়ে কচিকাঁচারা প্যান্টশার্ট এমনকী গলায় টাই বেঁধেও বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে যাচ্ছে। 'গুড মর্নিং', 'ম্যাডাম', এ সবে একটু অভ্যস্ত হওয়া ছাড়া শিক্ষার মানের দিক থেকে ইংরাজি মাধ্যম শব্দটি বড়ই বেমানান। তবু ভূপেনরা যাঁদের বাড়িতে কাজকর্ম করে বা স্কুলমাস্টার, একটু বেশি জোতের মালিক, সরকারি অফিসারদের মধ্যে যে দু'চার জন স্থায়ী ভাবে ওখানে থাকেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরাই গাঁইয়া প্রাইমারি ছেড়ে সভ্যতর শিক্ষার ছাপ নিতে ওখানে জড়ো হয়। এদের বিনা পয়সায় ভাত পাবার দরকার হয় না। এরা টিফিনে খাওয়ার জন্য অজ গাঁয়েও কেক, ক্যাডবেরি, কিছু প্যাকেটবন্দি খাবার নিয়ে যাওয়াটা শিখতে শুরু করেছে। ভূপেনের ঘরের ছেলেমেয়েরা সেই নুন আর পান্তা ভাতের ট্র্যাডিশন এখনও বয়ে চলেছে।
গ্রামেরই কিছু অংশের মানুষের মধ্যে পোশাক-পরিচ্ছদ, অন্নপ্রাশন থেকে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী পালন, এ সবের রেওয়াজ শুরু হয়েছে। বিয়েতে ঘড়ি, আংটি, বোতাম, সাইকেলের জায়গায় মোটরবাইক, কালার টিভি, পালঙ্ক, বিছানার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভূপেনের মতো পরিবারগুলি এ সবের দর্শকমাত্র। ভূপেন এবং তাদের অনেকেই সেই গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী। তাদের এখন আপনি খুঁজে পাবেন দিল্লি, নয়ডাতে চপ্পল তৈরির কারখানায়। মাটির তলায় একটা হল জাতীয় ঘরে, যেখানে বাইরের বাতাস ঢোকা প্রায় বন্ধ। মাঝে মাঝেই বুকে হাঁফ ধরে যায়, মাথা ঘোরে, পেটের রাক্ষসটা ভীষণ ভাবে নড়েচড়ে ওঠে। এদের দেখতে পাবেন, বড়োদরার তিরিশ কিলোমিটার দূরে ডিনামাইট ফাটাবার কাজে প্রাণ হাতে করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এদের দেখতে পাবেন মুম্বই, পুণে, তামিলনাড়ু, আন্দামান প্রায় গোটা ভারত জুড়ে।
প্রথমে বউ, বাচ্চা, বুড়ো বাপ-মা'কে নিয়ে যেতে পারে না। জান-পয়চান বাঙালি কিছু জড়ো হয়ে, কিছু জমি বেদখল করে ভবঘুরের আস্তানা গড়ে তোলে। মাটির সঙ্গে, বনের সঙ্গে, জলের সঙ্গে যে একটা নিবিড় আত্মিক যোগ জন্ম থেকেই গড়ে উঠেছিল, তাকে বর্জন করার বাধ্যতার যন্ত্রণা নিয়ে এরা বেঁচে আছে।
সুন্দরবনে আয়লার পর যেটা ঘটেছে, সেটা এক্সোডাস। মা-মেয়ে— যারা নানা লোভে, নানা চক্রে, বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের গুমরে গুমরে কান্না বিদেশ বিভুঁইয়ে কাউকে প্রভাবিত করে না। অনেক ক্ষেত্রে ইলিশ বা তেলাপিয়ার মতো এরা কিলো দরে বিক্রি হয়ে যায়। বাকিটা পুরো অন্ধকার। একটা সময় সেই মর্মান্তিক অবস্থার সঙ্গেই তারা মানিয়ে নিতে থাকে, কেউ কেউ বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে পতি-পুত্রদের রসে-বশে রাখার চেষ্টা করে।
আমি এমন অনেককে ব্যক্তিগত ভাবে জানি, যাদের কাজ শুধু সেই টাকার অপেক্ষায় থাকা এবং টাকাটা পেলে উড়িয়ে দেওয়ার যতগুলি পথ আছে, সব পথে দৌড়ঝাঁপ করা। পুরুষরা, যারা বাইরে ছয় মাস বা এক বছর করে থাকে, কিছু টাকা গ্রামের কাছাকাছি ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয় আর নিজেরা বছরে দু'এক বার একটু বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে আসে, এরা কেউ স্বেচ্ছায় বা যোগ্যতার বিচারে শহরবাসী হয়নি। তাদের দেহমন জুড়ে থাকে অপরিসীম দারিদ্র, নানা ধরনের দারিদ্রসৃষ্ট শারীরিক যন্ত্রণা, মানসিক অসম্মান। এরা নিম্নবর্গীয় উদ্বাস্তু। পেটের টানে উদ্বাস্তু। টিকে থাকার জন্য উদ্বাস্তু। হাজারে হাজারে, কাতারে কাতারে সুন্দরবন ছেড়েছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে দু'টি অন্ন সংস্থানের এবং মানুষের মতো বাঁচার অতি সাধারণ উপাদানগুলির হাতছানিতে। আরও দু'ধরনের উদ্বাস্তু সুন্দরবনে আছে।
প্রথম শ্রেণি, যাদের বলা হয় 'এনভায়রনমেন্টাল রিফিউজি'। প্রীতিভাজন নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র অনেক গবেষণা করে বলছেন যে, গত একশো বছরে সুন্দরবনে ভৌগোলিক ভূমিভাগের আয়তন কয়েকশো কিলোমিটার কমেছে। মানুষ বেড়েছে বিপুল গতিতে। দেশবিদেশের বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, আবহমণ্ডলে প্রকৃতি-বিরোধী উপাদানগুলি যে হারে বেড়ে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী অনেকটা ভূমিখণ্ড হারিয়ে ফেলবে এবং এর ফলে যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে বা হবে, তাদের সংখ্যা অবিশ্বাস্য হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
দ্বিতীয় শ্রেণির উদ্বাস্তু যারা, তারা সুন্দরবনেরই বাসিন্দা। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ফুলে-ফেঁপে ওঠা একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্ম দিচ্ছে এবং তাদের ভোগব্যয় বাড়ানোর মতো অর্থ পকেটে ঢোকাবার ব্যবস্থা করছে। না হলে, এদের উপরে যারা আছে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যারা রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের আরও ফুলে-ফেঁপে ওঠার রাস্তাটা প্রশস্ততর হবে না। সুন্দরবনে পঞ্চাশ বছর আগের কথা ভাবলে নিশ্চয়ই পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদির প্রসার ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নানা পেশায় যুক্ত এবং অনুপার্জিত সম্পদের লোভের শিকার হরেক কিসিমের মানুষ। এবং বেড়েছে ভোগলালসা, ভোগ-বৈচিত্র এবং ভোগ-শিকারিদের সংখ্যা। বাড়েনি দুটো জিনিস। উৎপাদন-ক্ষম এক ছটাক জমি। একফসলি দেশ, তার সামান্য অংশই দোফসলি হয়েছে। কোনও বড় শিল্প গড়ে ওঠেনি এবং ওঠার সম্ভাবনাও নেই।
ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্পে ভর্তুকি না দিলে চালানো অসম্ভব। তাই দেখি চাকরি বা ব্যবসা সূত্রে বা অনুপার্জিত আয়ের সূত্রে যারা একটু বিত্ত ও মেধার অধিকারী, তারাই সুন্দরবন ছেড়ে কলকাতা শহরের চার পাশ জুড়ে নতুন এক শহুরে সুন্দরবন গড়ে তুলছে। যত যাবার দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই মনে হচ্ছে জল জঙ্গল মাটি মানুষ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল একটা সুন্দর সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ সুন্দরবনকে কি আমরা হারিয়ে ফেলতে চাইছি? দশ বছর বাদে কি ভূপেনের উত্তরসূরিরা উন্নততর পরিকাঠামো এবং উৎপাদন ও আয়বৃদ্ধির সুযোগ বেড়ে যাওয়া, যন্ত্রের মতো বাঁচার সুযোগ-পসরা সাজানো একটা সুন্দরবনে ফিরে যেতে চাইবে? যাঁরা পরিবেশগত কারণে উদ্বাস্তু হবেন, তাঁদের সুন্দরবন আপন করে নিতে পারবে? যাঁরা আর্থিক দিক থেকে মূল্যবান ক্রেতা হয়ে শহরের আশেপাশে বসত গড়েছেন, তাঁদের উত্তরসূরিরাও কি আর ভবিষ্যতে সুন্দরবনে ফিরবে?
http://www.anandabazar.in/12edit4.html

No comments:

Post a Comment