---------- Forwarded message ----------
From: Rashed Alam <mailfrombd@yahoo.com>
Date: 2011/1/22
Subject: [bangla-vision] Fw: [notun_bangladesh] Fw: ফালানী, শাহজাহান আমার আপন ভাই-বোন না, কিন্তু ওরা আমার দেশের মানুষ (ইন্টারনেট থেকে নেয়া)
……………………………
শুধু কী তাই? শাহরুখের সাথে আসা ললনাদের বক্ষ আর পশ্চাৎদেশ কাঁপানো টু-পিস নৃত্য দেখতে সিট না পেয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মাটিতেই বসে গেলেন! পাশে থাকা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজের আখেরের কথা ভেবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তখন প্রতিমন্ত্রীজী'কে নিজের চেয়ারটুকু ছেড়ে দিলেন।
এই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, আমলা, এবং দেশের মাথা মাথা "শিক্ষিত" কনসার্ট-দেখনেওয়ালাদের, নাচনেওয়ালাদের মুখের উপর বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে নাচতে নাচতে পুরো দেশের মানুষকে 'শালা' গালি দিয়ে গেলেন জনাব কিং খান, অথচ বিজয়ের মাস নিয়ে একটা শুভেচ্ছা-বাক্য ভুলেও উচ্চারণ করলেন না। আমাদের দেখনেওয়ালারা দেখে গেলেন, নাচনেওয়ালারা নেচে গেলেন, প্রাইভেট-সময়-কাটানেওয়ালারা প্রাইভেট সময় কাটালেন; এবং সবমিলিয়ে শাহরুখ-রাণী-ইশাকপিকার-অর্জুন রামপাল-শেফালী জরিওয়ালার দল শুধুমাত্র এই পাঁচজনের আসার ফী বাবদ নিয়ে গেলেন তিনলাখ ডলার! বাকী সব সাংগপাংগদের চার্জ সহ পুরো অনুষ্ঠান বাবদ বাংলাদেশ থেকে চলে গেলো কোটি কোটি কোটি কোটি টাকা…
……………………………
গ্রামে কারো যত বড় জমিই থাকুক, বাড়ী বানানোর সময় প্রতিবেশীর জমি থেকে ইঞ্চিখানেক করে হলেও জমি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা খুব স্বাভাবিক। যার যত বড় জমি, সে তার প্রতিবেশী থেকে তত বেশী জমি হাতিয়ে নেয়। গরীব প্রতিবেশী ঝগড়া লাগায়, খুনাখুনি পর্যন্ত হয়, কিন্তু শক্তিশালী প্রতিবেশীই শেষ পর্যন্ত জমির দখল নেয়, তা যতই অবৈধ হোক না কেনো। এরপর থেকে যতবার বর্ডারের পাশ দিয়ে এসেছি, ততবার সেই সাদা স্তম্ভগুলো দেখতে দেখতে ভেবেছি, মানচিত্রে ইন্ডিয়ার এত বড় জায়গা, এত বড় একটা দেশ, যার পাশে বাংলাদেশকে দেখাই যায়না বলতে গেলে, এই এতবড় দেশটা এভাবে আস্তে আস্তে একহাত একহাত করে দখল করে নিচ্ছে আমাদের জমি। অথচ এই জমির জন্যই একাত্তুরে এমন যুদ্ধ হলো! এখন কেমন বিনাযুদ্ধেই জমিগুলো চলে যাচ্ছে ওদের দখলে! একটা মানুষ নেই প্রতিবাদ করার!
শুনেছি এখন সিলেট সীমান্তে দখল চলছে। আমি জানি, এই যে একহাত করে করে আমাদের জমি চলে যাচ্ছে ওদের কাঁটাতারের ওপাশে, মহাযুদ্ধ হয়ে গেলেও এইসব জমি আর ফেরত পাওয়া যাবেনা। কতিপয় 'বুদ্ধিজীবি' যুক্তি দাঁড় করান 'ভারতের কী জমির অভাব পড়েছে যে ওরা চুরি করে এভাবে এক হাত এক হাত করে আমাদের জমি নিবে? ওরা চাইলে তো মাঠের পর মাঠ দখল করে ফেলতে পারে'। আমি হাঁ করে এইসব 'বুদ্ধিজীবি'দের কথা শুনি আর ভাবি, কত টাকা, কত টাকা দিলে বা কতটা স্বার্থ পেলে এইসব বেজন্মারা এভাবে নিজের দেশকে বুদ্ধি দিয়ে বিক্রী করে দিতে পারে?!
……………………………
আমার শারিরীক ক্লান্তি মাথায় উঠে যায়। এইতো মাত্র ক'টা বছর আগেও বন্ধু-বান্ধবীদের মা, প্রতিবেশী আন্টি-খালাম্মা এদের মুখে কখনো সিরিয়ালের নাম গন্ধও শুনিনি। সিরিয়াল দূরের কথা, প্রায় বাসাতেই মা, বড়বোনরা সামান্য টিভি দেখা নিয়ে কী ভীষণ কড়াকড়ি করতেন! অনেক কষ্টে একটু এক্সট্রা পড়ালেখা করার বিনিময়ে দি সোর্ড অব টিপু সুলতান, আকবর দ্য গ্রেট, আলিফ-লায়লা, হানিফ সংকেতের 'ইত্যাদি', এইরকম কিছু অনুষ্ঠান দেখার অনুমতি মিলতো। তাও আবার বিজ্ঞাপন বিরতিতে দ্রুত একটা অংক করে দাও, বা কয়েক লাইন 'সুন্দর হাতের লেখা' বাড়ির কাজটা করে রাখো!
আর এখন?
কীভাবে এইসব ভারতীয় চ্যানেল আর সিরিয়ালগুলো আমাদের মা, বোনদের চরিত্র বদলে দিচ্ছে, চিন্তা-ভাবনার স্টাইল বদলে দিচ্ছে, এমনকি একটা ঘরের জীবন-পদ্ধতি পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে, তা বুঝার জন্য কাউকে সোশাল-সাইন্স পড়া লাগেনা; একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন সৈন্য দিয়ে আসলে দেশ দখল করার দরকার নেই, আমাদের দেশ অটোমেটিক ভারত দখল করে নিয়েছে শুধুমাত্র এই এক সিরিয়াল দিয়েই, আমাদের মা-বোনদের ব্রেইন গুলো কব্জা করে নিয়ে।
ক'দিন আগে এক আড্ডায় ভিক্টর বলছিলো 'ইট ইজ দ্য মাদার্স হু স্টপড দ্য ভিয়েটনাম ওয়ার'। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম 'কীভাবে? মা'রা কীভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ করলো?' ভিক্টর ব্যখ্যা করে বলেছিলো, 'দেখো, ঐ সময়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখবা মা'রা রাজপথে নেমে এসেছিলো। সরকারকে সোজাসুজি বলেছিলো, আমাদের সন্তানদেরকে যুদ্ধে পাঠানো বন্ধ করো। আমরা এত কষ্ট করে সন্তান জন্ম দিয়ে বড় করেছি যুদ্ধে গিয়ে মরার জন্য না। তোমরা, সরকার, চাও আমাদের সন্তানরা যুদ্ধে গিয়ে পাখির মত মরুক। আমরা চাইনা। এভাবে মা'রাই প্রথম শক্তভাবে এন্টি-ওয়ার স্ট্যান্ড নিয়েছিলো বলেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ এতবছর পরে বন্ধ হতে বাধ্য হয়েছিলো'।
ওখানে বসেই বাংলাদেশী মা'দের ইন্ডিয়ান সিরিয়াল আসক্তির কথা ভাবছিলাম আর চিন্তা করছিলাম, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন সময় আসবে যখন কেউ একজন লিখবে 'ইট ইজ দ্য বাংলাদেশী মাদার্স, হু হেল্পড ইন্ডিয়া টু টেইক ওভার বাংলাদেশ'!
মাদের কাছে আমার প্রশ্ন, মা'রা, আজকে যদি সীমান্তে ফালানীর জায়গায় আপনার সন্তান এভাবে কাটাতারে গুলি খেয়ে ঝুলে ঝুলে মরতো, আপনি কী পারতেন ইন্ডিয়ার সিরিয়াল দেখে কোন মেয়ে কোন জামাইয়ের সাথে যাবে তা নিয়ে টেনশন করতে?
আর যিনি পড়ছেন, তাকে অনুরোধ, প্লীজ আপনার মা'কে ফালানীর কথা জানান, শাহজাহানের কথা জানান, গত চারবছরে ভারতীয় সীমান্তবাহিনীর হাতে নিহত, অপহরণকৃত, আহত ৮৭৯ জন বাংলাদেশী মানবসন্তানের কথা জানান, তাদের লাশের ছবি দেখান, তারপর জিজ্ঞেস করুন "মা, আজকে আমি যদি এদের একজন হতাম, পারতে তুমি আমার লাশ কবর দিয়ে আমার খুনীদের দেশে তৈরী এইসব ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে?" প্লীজ আর কিছু পারুন বা না পারুন, ফালানীর রক্তের কসম, এই কাজটি করুন। অন্ততঃ একজন মা'কেও যদি ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পারেন!
……………………………
এইসব দেখি আর ইচ্ছে করে ফালানী-শাহজাহানের কবরের পাশে গিয়ে বলি, 'প্লীজ, এই জাতিকে কোনোদিন মাফ করোনা তোমরা, কোনোদিন না'।
……………………………
-কেনো জনাবা ডক্টর? কেনো একটা স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষদেরকে তাদের স্বাধীন জমিতে যেতে নিষেধ করেন? বিএসএফের দৃষ্টি সীমানার ভিতর বা বন্দুকের নলের নিশানার ভিতর যতটুকু আমাদের দেশের জমি কাভার করা যায়, ততটুকুও কি ইন্ডিয়ার নিয়ে নেয়ার কোনো গোপন চুক্তি হয়েছে নাকি? ট্রানজিটের নাম করে তো দেশের বুকের উপর দিয়ে ইন্ডিয়াকে করিডোর দিয়ে দিলেন, এখন কী জমিটুকুও নাংগা করে দিয়ে দিলেন? দেশটাকে ধর্ষণের এইটুকুই বাকী ছিলো?
-সীমান্তে মানুষগুলো কী বালু খাবে? ইট খাবে? নাকি বাতাস খেয়ে পেট ভরাবে? আপনাদের বামপন্থী 'বুদ্ধিজীবিরা' জন-আক্রোশ বাঁচাতে নতুন ভেক ধরে বলছেন 'ওরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। ওরা ক্রিমিনাল। ওরা নিজেদের দোষে মরছে'। জ্বী, জ্বী, ঢাকার বিলাস-বহুল এপার্টমেন্টে নরম গদিতে বসে দু'চুমুক সুরা চুমুক দিয়ে অনেককেই ক্রিমিনাল ডাকা যায় জনাবা, কই, সীমান্ত থেকে দূরে থাকতে বললেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে মানা করলেন, একবারও যে ভুলেও এই চরম হত-দরিদ্র মানুষগুলোর পূণর্বাসনের কথা বললেন না? কর্মসংস্থানের কথা বললেন না? আপনি গিয়েছেন সীমান্তে? দেখেছেন এই হতভাগা মানুষগুলো কীভাবে থাকে? দারিদ্রতা মাপার স্কেল ভেংগে যাবে এইসব মানুষের অবস্থা স্কেল দিয়ে মাপতে গেলে। এরা যে শহরে গিয়ে কাজ করবে সে যাতায়াতের টাকা পর্যন্ত এদের নাই। আপনি দেশে চাল-ডালের মত বেসিক খাবার দাবারের দাম আকাশ ছোঁয়া করে রেখেছেন, ওরা তাই চুরি করে কাঁটাতারের বেড়া ডিংগায় কম দামে চাল কিনে আনার আশায়, একটু কাজ পাওয়ার আশায়। ওদের ঘরে আপনার সন্তানের মত সন্তান আছে। পার্থক্য এই, আপনার সন্তান কোটি কোটি টাকার বিলাসী জীবন যাপন করে, আর ওদের সন্তান দুই/তিন দিনে একবেলা ভাত খাওয়ার জন্য হা'ভাতের মত বাপের দিকে/মা'র দিকে/বড় ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পেটের দায়ে ভাত আনতে গিয়ে এরাই যখন মরে, আপনার নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবিরা গা বাঁচাতে এদের সবাইকে 'গরু চোর' 'মাদক পাচারকারী' বানিয়ে দেয়।অথচ আজকে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা ফতোয়ার ঘটনা ঘটুক, আপনার নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবিরা আন্তর্জাতিক মহল গরম করে ফেলবে 'মোল্লারা আমাদের দেশ নিয়ে গেলো' বলে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে একটা উপজাতী যুবতীর কিছু হোক, শহীদ মিনার বুদ্ধিজীবিদের পদচারণায় গমগম করে উঠবে। আহা, জনাবা ডক্টর সাহেবা, আসুন আপনার বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধি উদযাপন করি, চিয়ার্স!
-সীমান্তে আগের বিডিআর, যাদেরকে এখন একটা নুপংশুক গার্ড বাহিনী বানিয়ে রেখেছেন, তাদেরকে এতগুলো টাকা দিয়ে পালার কী কোনো মানে আছে জনাবা? তাদেরকে ছুটি দিয়ে দিন। যতদূর জানি সীমান্ত রক্ষীদের দায়িত্ব থাকে নিজের দেশের জমি এবং নাগরিকদের বাঁচানো। কই, বিএসএফ যখন সীমানা পেরিয়ে আমাদেরই জমিতে এসে আমাদেরই দেশের মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে মারে, এই যে গতবছর পারুল নামের মেয়েটাকে আমাদেরই জমিতে এসে গুলি করে মারলো, এই গার্ডবাহিনীকে তখন কী বসে বসে বন্দুকের নল চুষার নির্দেশ দিয়েছেন? ওরা কেনো সীমানা ডিংগিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সৈন্যদের গুলি করেনা? নাকি এদেরকে ধমকি দিয়েছেন, সাবধান বাড়াবাড়ি করেছো তো হান্নান আর হরিপদের মত ভাগ্য হবে!
-আপনারই এক মন্ত্রী তেল চিটচিটে মুখে ঘোষণা দিলেন 'সীমান্তে এখন মানুষ হত্যা অনেক কমেছে'! আপনার এই মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে বলি, স্যার, প্লীজ আপনার যদি কোনো মেয়ে থাকে তাকে সীমান্তের কাঁটাতারে ফালানীর জায়গায় উলটা করে ঝুলিয়ে দিয়ে আসুন। বিএসএফ তাকে গুলি করুক। সে পানি পানি বলে ঘন্টার পর ঘন্টা চিৎকার করতে করতে মরুক। তারপর বিএসএফ তার লাশ নিয়ে গিয়ে দিগম্বর করে ময়না তদন্তের নামে পুরো শরীর কোরবাণীর গরুর মত কাঁটাছেড়া করুক। প্রয়োজনে লাশ যদি তখনো গরম থাকে, তাহলে গরম থাকতে থাকতেই যে ক'জন পারে শারিরীক চাহিদাও মিটিয়ে নিক। তারপর যখন 'পতাকা বৈঠক' করে আপনার মেয়ের লাশ ফেরত আনবেন, তখন দেখবো আপনার তেল চিটচিটে মুখ থেকে কীভাবে এমন কথা বের হয়।
জনাবা ডক্টর সাহেবা, আপনাকে আর কী বলবো। আপনার সাথে তো 'দাদা'দের পুরানো দিনের বন্ধুত্ব; আমি বরং অবাক হয়ে দেখি ডানপন্থীদের রিএকশান। আজকে সকালে ডানপন্থীদের একটা লাশ পড়ুক, দুপুর না হতেই শহর-অঞ্চল, গ্রাম-গঞ্জে ব্যানারে ব্যানারে, মিছিলে মিছিলে গম গম করে উঠবে শত শত যুবকের কন্ঠ, 'শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দিবোনা'। এদেরকে এখন আমার ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, বর্ডারে মারা যাওয়া বাংলাদেশীদেরকে কী আপনাদের শহীদ মনে হয়না? নাকি ওরা আপনাদের দল করেনা দেখে ওরা শহীদ না? নাকি দলীয় কর্মী না বলে আপনাদের কোনো মাথাব্যথা নেই? অবশ্য ওদের মৃত্যু তে আপনাদেরই লাভ, এইসব মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখিয়ে পরের নির্বাচনে মানুষকে নিজেদের ভোটের দিকে টানতে সহজ হবে।
ডানপন্থী, বামপন্থীরা, তোমাদেরকে স্যালুট। তোমাদের বিক্রী হয়ে যাওয়া মস্তিষ্ককে স্যালুট। তোমাদের দল, তোমাদের আদর্শকে স্যালুট। তোমাদের ক্ষমতা-লিপ্সাকে স্যালুট। তোমরা একপক্ষ সেক্যুলার আর আরেকপক্ষ জাতীয়তাবাদী বা ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকো। তোমাদেরকে দিয়েই হবে, ট্রাষ্ট মী, সবদিকে তোমাদের রাজনীতিরই জয় জয়কার। ফালানী-শাহজাহানের মত ঐসব মজুরদের কে আর মনে রাখবে? আজ বাদে কাল মানুষ ভুলে যাবে। পরশু ঠিকই গিয়ে তোমাদেরকেই ভোটটা দিয়ে আসবে। বেশ বেশ। সাবাস, এগিয়ে চলো, পুরো জাতি আছে তোমাদের সাথে।
……………………………
আমরা কী করতে পারি?
- বর্ডার হত্যা ইস্যুতে বিভিন্ন মেইল-গ্রুপে, ব্যক্তিগত কন্টাকদের সাথে, ব্লগে মতামত শেয়ার করুন।আন্তর্জাতিক ব্লগ/ওয়েবসাইট/মিডিয়ায় লেখালেখি করুন। আপনি যদি একাডেমিক হোন, প্লীজ এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জার্নালে/ওয়েবসাইটে লিখুন।
- যারা স্লাইড শো বানাতে পারেন, তারা এই ইস্যুতে ফ্যাক্ট তুলে ধরে, ফটো দিয়ে, তথ্য দিয়ে ৫/৬ মিনিটের স্লাইড শো হলেই বানিয়ে ফেলুন। তারপর এগুলো নেটে শেয়ার করুন, সব জায়গায় শেয়ার করুন। অনেক সময় মানুষ পড়তে পছন্দ করেনা, দেখতে পছন্দ করে। হতে পারে আপনার স্লাইড শো দেখে কেউ না কেউ সচেতন হবে। আর যারা ডকুমেন্টারী বানাতে পারে, প্লীজ দশ/পনের মিনিটের হলেও ডকুমেন্টারী বানাতে কত শ্রম আর টাকাই বা খরচ হবে? অন্ততঃ নিজের বিবেককেতো বলতে পারবেন কিছু একটা করেছেন।
- ইন্ডিয়ান পন্য বর্জন করুন। বাংলাদেশে থেকে ইন্ডিয়ান পন্য বর্জন হয়তো পুরোপুরি সম্ভব নাও হতে পারে, তারপরও যতটা সম্ভব বর্জন করুন। ফালানী-শাহজাহানদের কথা ভুলবেন না। অনেকেই বলবে এইসব বর্জন টর্জন বোগাস কথা, ফালতু, ইন্ডিয়ার কচুটাও হবেনা। এইসব নিমকহারামদের কথায় কান দিবেন না। আপনি, আপনার বন্ধু, আত্মীয়, এই করতে করতে একজন থেকে দশজন বর্জন করবে, দশজন থেকে বিশজন, বিশজন থেকে একশ জন। মনে রাখবেন, একটা বিপ্লব শুরু করার জন্য একজনই যথেষ্ঠ। আর বিপ্লব যদি নাও হয়, তাও স্বান্তনা, আপনি নিজের কাছে অন্ততঃ বিবেকের দায়-মুক্ত থাকতে পারবেন। আপনার আগের জেনারেশনকে স্বদেশী পন্য আন্দোলনের কথা জিজ্ঞেস করবেন। তখন যদি মানুষ স্বদেশী পন্য ব্যবহারের পক্ষে এত বিশাল আন্দোলন করতে পারে, আমরা কেনো পারবোনা??
- বিভিন্ন জায়গায় মানব-বন্ধন হচ্ছে। যাদের পক্ষে সম্ভব, যারা কাছাকাছি আছেন, প্লীজ সবক'টি মানব-বন্ধনে নিজে যোগ দিন, অন্যদেরকেই উৎসাহিত করুন। প্রয়োজনে নিজেরাও মানব-বন্ধনের আয়োজন করুন। বেশী লোক নিয়ে চিন্তা করবেন না। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দশ-বিশজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিরবে দাঁড়িয়ে যান। একের পর এক মানববন্ধন হতে থাকলে বিশ্বমিডিয়ার টনক নড়বেই। এইসব মানববন্ধনের ছবি তুলে যত জায়গায় পারুন শেয়ার করুন, মানুষকে জানান।
আমি আমার পক্ষে যা যা সম্ভব করার চেষ্টা করছি, আপনি করছেন তো?
........................
এই ইস্যুতে অন্যদের লিখা কিছু পোষ্টের লিংক, নিজে পড়ুন, অন্যদেরকে পড়তে বলুন-
____________________________________________
মূল লিঙ্কঃ http://jajaborrr.blogspot.com/2011/01/blog-post_19.html
-- From: Rashed Alam <mailfrombd@yahoo.com>
Date: 2011/1/22
Subject: [bangla-vision] Fw: [notun_bangladesh] Fw: ফালানী, শাহজাহান আমার আপন ভাই-বোন না, কিন্তু ওরা আমার দেশের মানুষ (ইন্টারনেট থেকে নেয়া)
বিএসএফের হাতে নিহত আসিফের লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত হান্নান আর কৃষ্ণপদের লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত জামালের লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত সুলতানের লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত শাহজাহান আর ফালানীর লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত নামহীন এক বাংলাদেশী বালিকার লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত নামহীন আরেক বাংলাদেশী কৃষকের লাশ |
বিএসএফের হাতে নিহত অজ্ঞাত এক বাংলাদেশীর লাশ |
টুপিস কাপড় পড়ে শাহরুখ গং নেচে গেলেন, নাচিয়ে গেলেন পুরো জাতিকে, ফালানী-শাহজাহানের দেশের মানুষ, আসো, কোমড় দুলিয়ে নাচি! |
কথাগুলো সব টুকরো টুকরো, তাই মাফ করবেন। টুকরো টুকরো ঘটনায় টুকরো টুকরো আবেগ, আর টুকরো টুকরো কষ্ট বুকে নিয়ে "লিখবোনা, কিছুতেই লিখবোনা, লিখে আর কী হবে, এ দেশের এ সমাজের কোনো ভবিষ্যত নেই, এভাবেই চলছে, এভাবেই চলবে, কাকে বলবো? কেনইবা বলবো? মানুষের কী চোখ নেই, বিবেক নেই, ওরা নিজেরা দেখেনা? নিজেদের বিবেক নাড়া দেয়না? আর বলেই বা কী হবে? মানুষ তো শুধু শুনবে, তারপর তব্দা মেরে থাকবে দু'তিন মিনিট, তারপর আরেক কান দিয়ে সব বের করে দিয়ে আবার ভুলে যাবে। আর যারা দল করে, তারা শুধু হিসাব নিকাশ করে কোন লেখা দলের পক্ষে গেলো আর কোন লেখা বিপক্ষে। কী লাভ! বলে কী লাভ! কেউ তো খালি সত্যটাকে খালি চোখে দেখতে চায়না, কী লাভ?" এই ভাবতে ভাবতে দু'টো দিন, হ্যা, দু'টো দিন না লিখেও তৃতীয় দিনে আর থাকতে পারলাম না। ঘটনাগুলো কেমন যেন কুঁকড়ে কুঁকড়ে খাচ্ছে। লিখতে বসেছি ঠিক, কিন্তু কথাগুলো জানি সব টুকরো টুকরোই হবে…
ঘটনাটা শুনলাম দু'দিন আগে। মহিলা প্রথমবারের মত সন্তানসম্ভবা। তিনি শাহরুখ খানের প্রচন্ড ভক্ত। শাহরুখ খানের কনসার্টের দিনই তার লেবার পেইন উঠলো। সারাদিন হাসপাতালে তড়পাচ্ছেন। টিভিতে শাহরুখ খানের কনসার্টটাও মিস হয়ে গেলো প্রসব ব্যথায়। স্বামী স্বান্তনা দিয়ে বললেন 'তোমার জন্য শাহরুখ খানের কনসার্ট সিডি করে রাখছি', পরদিন সকালে সন্তান হলে শাহরুখ-ভক্ত ঢাকার এই বাংলাদেশী মা সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলের নাম রাখলেন 'শাহরুখ খান', সেই সন্তান কোলে নিয়ে সিডিতে দেখলেন শাহরুখ-কনসার্ট।
ফোনের এপাশে আমি কমেন্ট করার কোনো ভাষা খুঁজে পেলাম না।
হা মূর্খতা
হা অজ্ঞতা
হা দৈন্যতা
একটা মানুষ কি ছিলোনা এই মহিলার আশেপাশে যে এই জন্মদাত্রীকে বুঝিয়ে বলবে, যে শাহরুখের নামে তিনি নিজের সন্তানের নাম রাখলেন, সেই শাহরুখের দেশের সীমান্ত-রক্ষীরাই আমাদের দেশের সীমান্তে তার এই সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের মত শত শত বাংলাদেশী আদম-সন্তানকে পিটিয়ে, গুলি করে, যেভাবে পারে সেভাবে অত্যাচার করে একের পর এক খুন করে যাচ্ছে। একটা কি মানুষ ছিলোনা যে এই মহিলাকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী কর্তৃক বাংলাদেশের হাওড় দখলের কথা বলবে, আমাদের মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে, সীমানা পার হয়ে আমাদের জমিতে এসে আমাদেরই গরীব কৃষকদের জমির ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে, ওদিক থেকে এদিকে অবৈধ মাদক পাচারের কথা বলবে। একটা মানুষ ছিলোনা?!
……………………………
ভারতীয় নায়ক-নায়িকা ভক্ত বাংলাদেশী মা যখন অন্ধ আবেগ আর মূর্খতায় সন্তানের নাম রাখছেন শাহরুখ খান; আমাদের 'শিক্ষিত' মন্ত্রী-আমলা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসাযীরা শাহরুখ খানের সাথে আসা রানী মূখার্জী আর ইশা কপিকারের সাথে স্ট্রীক্টলি বরাদ্দ ৩০ মিনিট 'ব্যক্তিগত সময়' কাটাতে জনপ্রতি ২০ হাজার 'ডলার' পকেটে নিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রতিযোগীতা করছিলেন।
শুধু কী তাই? শাহরুখের সাথে আসা ললনাদের বক্ষ আর পশ্চাৎদেশ কাঁপানো টু-পিস নৃত্য দেখতে সিট না পেয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মাটিতেই বসে গেলেন! পাশে থাকা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজের আখেরের কথা ভেবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তখন প্রতিমন্ত্রীজী'কে নিজের চেয়ারটুকু ছেড়ে দিলেন।
এই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, আমলা, এবং দেশের মাথা মাথা "শিক্ষিত" কনসার্ট-দেখনেওয়ালাদের, নাচনেওয়ালাদের মুখের উপর বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে নাচতে নাচতে পুরো দেশের মানুষকে 'শালা' গালি দিয়ে গেলেন জনাব কিং খান, অথচ বিজয়ের মাস নিয়ে একটা শুভেচ্ছা-বাক্য ভুলেও উচ্চারণ করলেন না। আমাদের দেখনেওয়ালারা দেখে গেলেন, নাচনেওয়ালারা নেচে গেলেন, প্রাইভেট-সময়-কাটানেওয়ালারা প্রাইভেট সময় কাটালেন; এবং সবমিলিয়ে শাহরুখ-রাণী-ইশাকপিকার-অর্জুন রামপাল-শেফালী জরিওয়ালার দল শুধুমাত্র এই পাঁচজনের আসার ফী বাবদ নিয়ে গেলেন তিনলাখ ডলার! বাকী সব সাংগপাংগদের চার্জ সহ পুরো অনুষ্ঠান বাবদ বাংলাদেশ থেকে চলে গেলো কোটি কোটি কোটি কোটি টাকা…
……………………………
আলিমের পর থেকেই পড়ালেখার স্বার্থে বাসার বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়ার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো বিভিন্ন ছোট-বড় ছুটিতে আব্বুর সাথে ট্রাভেল করে বাসায় ফেরা। আব্বু প্রায়ই এমনভাবে শিডিউল ঠিক করতেন যেনো আমার যেদিন ছুটি শুরু সেদিন আব্বুর সাথে একসাথে বাসায় ফিরতে পারি। পুরো রাস্তা জুড়ে চলতো আব্বুর ধারা-বিবরণী। এখানে এটা হয়েছিলো, ওখানে ওটা হয়েছিলো, এই জায়গার ইতিহাস এটা, ঐ জায়গার বিশেষত্ব ওটা… আর প্রতিবার বর্ডারের পাশ দিয়ে রাস্তাটা ক্রস করার সময় দেখাতেন, ঐ যে ওটা হচ্ছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ বর্ডার। প্রথম কয়েকবার ভেবেছি আব্বু কাঁটাতারের বেড়ার কথা বলছেন। কিন্তু আমি ভুল বুঝেছি এটা টের পেয়ে এর পরেরবার ড্রাইভার চাচা বললেন 'আম্মা, স্যার কাঁটাতারের বেড়ার কথা বলছেন না, ঐ যে বেড়ার ওপাশে একটু পর পর ছোট ছোট সাদা রংগের পাথরের স্তম্ভ দেখতে পাচ্ছেন, স্যার ওগুলোর কথা বলছেন, ওগুলোই হচ্ছে আসল সীমানা'।
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, 'কিন্তু ওগুলোতো বেড়ার ওপাশে!!' আব্বু জানালেন 'ওগুলো বেড়ার এপাশেই ছিলো। ইন্ডিয়া আস্তে আস্তে একটু একটু করে কাটাতারের বেড়া আগায়ে আনতে আনতে এখন এতদূর চলে এসেছে'।
গ্রামে কারো যত বড় জমিই থাকুক, বাড়ী বানানোর সময় প্রতিবেশীর জমি থেকে ইঞ্চিখানেক করে হলেও জমি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা খুব স্বাভাবিক। যার যত বড় জমি, সে তার প্রতিবেশী থেকে তত বেশী জমি হাতিয়ে নেয়। গরীব প্রতিবেশী ঝগড়া লাগায়, খুনাখুনি পর্যন্ত হয়, কিন্তু শক্তিশালী প্রতিবেশীই শেষ পর্যন্ত জমির দখল নেয়, তা যতই অবৈধ হোক না কেনো। এরপর থেকে যতবার বর্ডারের পাশ দিয়ে এসেছি, ততবার সেই সাদা স্তম্ভগুলো দেখতে দেখতে ভেবেছি, মানচিত্রে ইন্ডিয়ার এত বড় জায়গা, এত বড় একটা দেশ, যার পাশে বাংলাদেশকে দেখাই যায়না বলতে গেলে, এই এতবড় দেশটা এভাবে আস্তে আস্তে একহাত একহাত করে দখল করে নিচ্ছে আমাদের জমি। অথচ এই জমির জন্যই একাত্তুরে এমন যুদ্ধ হলো! এখন কেমন বিনাযুদ্ধেই জমিগুলো চলে যাচ্ছে ওদের দখলে! একটা মানুষ নেই প্রতিবাদ করার!
শুনেছি এখন সিলেট সীমান্তে দখল চলছে। আমি জানি, এই যে একহাত করে করে আমাদের জমি চলে যাচ্ছে ওদের কাঁটাতারের ওপাশে, মহাযুদ্ধ হয়ে গেলেও এইসব জমি আর ফেরত পাওয়া যাবেনা। কতিপয় 'বুদ্ধিজীবি' যুক্তি দাঁড় করান 'ভারতের কী জমির অভাব পড়েছে যে ওরা চুরি করে এভাবে এক হাত এক হাত করে আমাদের জমি নিবে? ওরা চাইলে তো মাঠের পর মাঠ দখল করে ফেলতে পারে'। আমি হাঁ করে এইসব 'বুদ্ধিজীবি'দের কথা শুনি আর ভাবি, কত টাকা, কত টাকা দিলে বা কতটা স্বার্থ পেলে এইসব বেজন্মারা এভাবে নিজের দেশকে বুদ্ধি দিয়ে বিক্রী করে দিতে পারে?!
……………………………
একটা বারবিকিউতে গিয়ে একটু পরে খুব ক্লান্ত লাগায় দূরে গাছের ছায়ায় বিছানো চাদরে এসে কাত হয়ে বসে ব্যাগের স্তুপে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করেছিলাম একটু বিশ্রাম নিতে। আগে থেকেই ওখানে দু'জন ভাবী আর ঐ দু'জনের মধ্যে একজনের দেশ থেকে বেড়াতে আসা শ্বাশুড়ী বসে আড্ডা মারছিলেন। বিশ্রাম নিতে নিতেই শুনতে পেলাম কথা বলতে বলতে তিনজনে এসে থামলেন ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়ালে। খালাম্মার অস্ট্রেলিয়া খুবই পছন্দ হয়েছে, কিন্তু একটাই দুঃখ উনার, 'প্রতিদিনের সিরিয়াল প্রতিদিন তো আর দেখতে পারতেছিনা'। অন্যভাবীর সামনে শ্বাশুড়ীর আক্ষেপ উক্ত ভাবীর প্রেষ্টিজ কনসার্ণ হয়ে দাঁড়ালো, একটু উষ্মা নিয়েই বললেন 'কেনো আম্মা, প্রত্যেক সপ্তাহেই তো পুরো সপ্তাহের সিরিয়ালের সিডি নিয়ে আসি। তখনতো দেখেন'। অন্যভাবী নাক গলানোর সুযোগ ছাড়বেন কেনো, বললেন 'খালাম্মা যখন ডেইলির টা ডেইলি দেখতে চান তখন নেটে চ্যানেল দেখার ব্যবস্থা করে দিলেই তো হয়'। সাথে সাথে খালাম্মা নিজের বউকে, 'দেখেছো! ও তো প্রতিদিনের টা প্রতিদিনই দেখে। সপ্তাহ শেষে সিডি দেখে কী ভালো লাগে? ওদের বাসায় নেট না কী যেনো আছে, তোমাদের বাসায় নাই? না থাকলে ছেলেকে বলো না কেনো?' বউ পাংচার হয়ে যাওয়া প্রেষ্টিজ জোড়াতালি দিতে দিতে বললেন, 'আপনি যে কী আম্মা, বাসায় নেট থাকবে না কেনো? আপনি ডেইলির টা ডেইলি দেখতে চান বুঝলে তো আগেই ব্যবস্থা করে দিতাম। আজকেই আপনার ছেলেকে বলবো নেটে চ্যানেল ঠিক করে দিতে'।
আমার শারিরীক ক্লান্তি মাথায় উঠে যায়। এইতো মাত্র ক'টা বছর আগেও বন্ধু-বান্ধবীদের মা, প্রতিবেশী আন্টি-খালাম্মা এদের মুখে কখনো সিরিয়ালের নাম গন্ধও শুনিনি। সিরিয়াল দূরের কথা, প্রায় বাসাতেই মা, বড়বোনরা সামান্য টিভি দেখা নিয়ে কী ভীষণ কড়াকড়ি করতেন! অনেক কষ্টে একটু এক্সট্রা পড়ালেখা করার বিনিময়ে দি সোর্ড অব টিপু সুলতান, আকবর দ্য গ্রেট, আলিফ-লায়লা, হানিফ সংকেতের 'ইত্যাদি', এইরকম কিছু অনুষ্ঠান দেখার অনুমতি মিলতো। তাও আবার বিজ্ঞাপন বিরতিতে দ্রুত একটা অংক করে দাও, বা কয়েক লাইন 'সুন্দর হাতের লেখা' বাড়ির কাজটা করে রাখো!
আর এখন?
ঘরের মা, শ্বাশুড়ী, বউ সবার জীবন কেমন ইন্ডিয়ান-সিরিয়াল-কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। 'অমুক সিরিয়ালে অমুক নায়িকার প্রথম জামাই ফিরে এসেছে, এখন কী হবে?'- মা'দের টেনশন। এদিকে ঘরের ছেলে বা মেয়ে যে কয়জনকে জামাই/বউ বানাচ্ছে, সে খবর নেয়ার সময় কোথায়? আমি অবাক হয়ে এইসব মেয়ে-মহিলাদের কথাবার্তা শুনি আর ভাবি, সিরিয়ালগুলোতে একটা ছেলে বা মেয়ে তিন চারটা অবৈধ সম্পর্ক মেনটেইন করছে এটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই, উলটা টেনশন এই অবৈধ সম্পর্কগুলো থেকে কোন সম্পর্কটাকে বেছে নেয়া উচিত!!
কীভাবে এইসব ভারতীয় চ্যানেল আর সিরিয়ালগুলো আমাদের মা, বোনদের চরিত্র বদলে দিচ্ছে, চিন্তা-ভাবনার স্টাইল বদলে দিচ্ছে, এমনকি একটা ঘরের জীবন-পদ্ধতি পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে, তা বুঝার জন্য কাউকে সোশাল-সাইন্স পড়া লাগেনা; একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন সৈন্য দিয়ে আসলে দেশ দখল করার দরকার নেই, আমাদের দেশ অটোমেটিক ভারত দখল করে নিয়েছে শুধুমাত্র এই এক সিরিয়াল দিয়েই, আমাদের মা-বোনদের ব্রেইন গুলো কব্জা করে নিয়ে।
ক'দিন আগে এক আড্ডায় ভিক্টর বলছিলো 'ইট ইজ দ্য মাদার্স হু স্টপড দ্য ভিয়েটনাম ওয়ার'। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম 'কীভাবে? মা'রা কীভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ করলো?' ভিক্টর ব্যখ্যা করে বলেছিলো, 'দেখো, ঐ সময়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখবা মা'রা রাজপথে নেমে এসেছিলো। সরকারকে সোজাসুজি বলেছিলো, আমাদের সন্তানদেরকে যুদ্ধে পাঠানো বন্ধ করো। আমরা এত কষ্ট করে সন্তান জন্ম দিয়ে বড় করেছি যুদ্ধে গিয়ে মরার জন্য না। তোমরা, সরকার, চাও আমাদের সন্তানরা যুদ্ধে গিয়ে পাখির মত মরুক। আমরা চাইনা। এভাবে মা'রাই প্রথম শক্তভাবে এন্টি-ওয়ার স্ট্যান্ড নিয়েছিলো বলেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ এতবছর পরে বন্ধ হতে বাধ্য হয়েছিলো'।
ওখানে বসেই বাংলাদেশী মা'দের ইন্ডিয়ান সিরিয়াল আসক্তির কথা ভাবছিলাম আর চিন্তা করছিলাম, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন সময় আসবে যখন কেউ একজন লিখবে 'ইট ইজ দ্য বাংলাদেশী মাদার্স, হু হেল্পড ইন্ডিয়া টু টেইক ওভার বাংলাদেশ'!
মাদের কাছে আমার প্রশ্ন, মা'রা, আজকে যদি সীমান্তে ফালানীর জায়গায় আপনার সন্তান এভাবে কাটাতারে গুলি খেয়ে ঝুলে ঝুলে মরতো, আপনি কী পারতেন ইন্ডিয়ার সিরিয়াল দেখে কোন মেয়ে কোন জামাইয়ের সাথে যাবে তা নিয়ে টেনশন করতে?
আর যিনি পড়ছেন, তাকে অনুরোধ, প্লীজ আপনার মা'কে ফালানীর কথা জানান, শাহজাহানের কথা জানান, গত চারবছরে ভারতীয় সীমান্তবাহিনীর হাতে নিহত, অপহরণকৃত, আহত ৮৭৯ জন বাংলাদেশী মানবসন্তানের কথা জানান, তাদের লাশের ছবি দেখান, তারপর জিজ্ঞেস করুন "মা, আজকে আমি যদি এদের একজন হতাম, পারতে তুমি আমার লাশ কবর দিয়ে আমার খুনীদের দেশে তৈরী এইসব ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে?" প্লীজ আর কিছু পারুন বা না পারুন, ফালানীর রক্তের কসম, এই কাজটি করুন। অন্ততঃ একজন মা'কেও যদি ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পারেন!
……………………………
শুধু কী ফালানী, শাহজাহান আর মাত্র চারবছরে ৮৭৯ জন বাংলাদেশীর রক্ত? শুধু কী শাহরুখ-গং'র কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া? জ্বী না, সামনে আসছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উদবোধনী অনুষ্ঠান। আর অলরেডী এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় টেন্ডার চলে গেছে ইন্ডিয়ান ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানী WIZCRAFT এর হাতে, যারা কিনা বলিউডের বাৎসরিক 'আইফা' অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এদের আমন্ত্রনে আমাদের ক্রিকেট উদবোধনী অনুষ্ঠানে আসবেন বলিউড নায়ক নায়িকারা। কথাবার্তা চলছে হলিউড গায়িকা রিহানা কে আনার জন্য। সব দেশ এধরনের অনুষ্ঠানে তাদের নিজেদের দেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এবার পুরো পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দেখবে এক মেরুদন্ডহীন জাতিকে, যে জাতির সিভিলিয়ানদেরকে সীমান্তে একের পর এক মেরে যাচ্ছে যে প্রতিবেশী(!) দেশ, সেই দেশকেই পুরো অনুষ্ঠানের টেন্ডার দিয়ে বসে আছে এই জাতি! সেই দেশের নায়ক-নায়িকারা এসেই নর্তন-কুর্দন করে যাবে। আর এ জাতি টু-পিস শরীর দেখতে দেখতে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলবে, আহা, দেখো পৃথিবী, আমরা কত মডার্ণ! আমাদের নিজের দেশের মোটী মোটী নায়িকারা নাচতে পারে না তো কী হয়েছে, ভাড়া করে খুনী দেশের নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে এসেছি নাচার জন্য, নাচ দেখানোর জন্য, আর কী চাও?
এইসব দেখি আর ইচ্ছে করে ফালানী-শাহজাহানের কবরের পাশে গিয়ে বলি, 'প্লীজ, এই জাতিকে কোনোদিন মাফ করোনা তোমরা, কোনোদিন না'।
……………………………
ফালানী-শাহজাহান সহ যাবতীয় বর্ডার হত্যা ইস্যুতে ডানপন্থী-বামপন্থী সমস্ত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবিরা যথারীতি নিরব। কেউ কেউ না পারতে জনগনের খোঁচা খেয়ে একটু আড়মোড়া ভেংগে নড়াচড়ার চেষ্টা করছেন যদিও, কিন্তু না, ওরা কেউ এইসব 'সেনসিটিভ ইস্যু'তে 'বাড়াবাড়ি' করে নিজেদের ভোট-ব্যাংকে ভাটার টান দেখতে চায় না। ডক্টর সাহেবা তো বলেই দিয়েছেন, "বিএসএফের দৃষ্টি সীমানার ভিতরেই যাবেন না"। খুব ইচ্ছে করে ডক্টর সাহেবাকে দুই/তিনটা প্রশ্ন করি।
-কেনো জনাবা ডক্টর? কেনো একটা স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষদেরকে তাদের স্বাধীন জমিতে যেতে নিষেধ করেন? বিএসএফের দৃষ্টি সীমানার ভিতর বা বন্দুকের নলের নিশানার ভিতর যতটুকু আমাদের দেশের জমি কাভার করা যায়, ততটুকুও কি ইন্ডিয়ার নিয়ে নেয়ার কোনো গোপন চুক্তি হয়েছে নাকি? ট্রানজিটের নাম করে তো দেশের বুকের উপর দিয়ে ইন্ডিয়াকে করিডোর দিয়ে দিলেন, এখন কী জমিটুকুও নাংগা করে দিয়ে দিলেন? দেশটাকে ধর্ষণের এইটুকুই বাকী ছিলো?
-সীমান্তে মানুষগুলো কী বালু খাবে? ইট খাবে? নাকি বাতাস খেয়ে পেট ভরাবে? আপনাদের বামপন্থী 'বুদ্ধিজীবিরা' জন-আক্রোশ বাঁচাতে নতুন ভেক ধরে বলছেন 'ওরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। ওরা ক্রিমিনাল। ওরা নিজেদের দোষে মরছে'। জ্বী, জ্বী, ঢাকার বিলাস-বহুল এপার্টমেন্টে নরম গদিতে বসে দু'চুমুক সুরা চুমুক দিয়ে অনেককেই ক্রিমিনাল ডাকা যায় জনাবা, কই, সীমান্ত থেকে দূরে থাকতে বললেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে মানা করলেন, একবারও যে ভুলেও এই চরম হত-দরিদ্র মানুষগুলোর পূণর্বাসনের কথা বললেন না? কর্মসংস্থানের কথা বললেন না? আপনি গিয়েছেন সীমান্তে? দেখেছেন এই হতভাগা মানুষগুলো কীভাবে থাকে? দারিদ্রতা মাপার স্কেল ভেংগে যাবে এইসব মানুষের অবস্থা স্কেল দিয়ে মাপতে গেলে। এরা যে শহরে গিয়ে কাজ করবে সে যাতায়াতের টাকা পর্যন্ত এদের নাই। আপনি দেশে চাল-ডালের মত বেসিক খাবার দাবারের দাম আকাশ ছোঁয়া করে রেখেছেন, ওরা তাই চুরি করে কাঁটাতারের বেড়া ডিংগায় কম দামে চাল কিনে আনার আশায়, একটু কাজ পাওয়ার আশায়। ওদের ঘরে আপনার সন্তানের মত সন্তান আছে। পার্থক্য এই, আপনার সন্তান কোটি কোটি টাকার বিলাসী জীবন যাপন করে, আর ওদের সন্তান দুই/তিন দিনে একবেলা ভাত খাওয়ার জন্য হা'ভাতের মত বাপের দিকে/মা'র দিকে/বড় ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পেটের দায়ে ভাত আনতে গিয়ে এরাই যখন মরে, আপনার নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবিরা গা বাঁচাতে এদের সবাইকে 'গরু চোর' 'মাদক পাচারকারী' বানিয়ে দেয়।অথচ আজকে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা ফতোয়ার ঘটনা ঘটুক, আপনার নেতা-কর্মী-বুদ্ধিজীবিরা আন্তর্জাতিক মহল গরম করে ফেলবে 'মোল্লারা আমাদের দেশ নিয়ে গেলো' বলে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে একটা উপজাতী যুবতীর কিছু হোক, শহীদ মিনার বুদ্ধিজীবিদের পদচারণায় গমগম করে উঠবে। আহা, জনাবা ডক্টর সাহেবা, আসুন আপনার বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধি উদযাপন করি, চিয়ার্স!
-সীমান্তে আগের বিডিআর, যাদেরকে এখন একটা নুপংশুক গার্ড বাহিনী বানিয়ে রেখেছেন, তাদেরকে এতগুলো টাকা দিয়ে পালার কী কোনো মানে আছে জনাবা? তাদেরকে ছুটি দিয়ে দিন। যতদূর জানি সীমান্ত রক্ষীদের দায়িত্ব থাকে নিজের দেশের জমি এবং নাগরিকদের বাঁচানো। কই, বিএসএফ যখন সীমানা পেরিয়ে আমাদেরই জমিতে এসে আমাদেরই দেশের মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে মারে, এই যে গতবছর পারুল নামের মেয়েটাকে আমাদেরই জমিতে এসে গুলি করে মারলো, এই গার্ডবাহিনীকে তখন কী বসে বসে বন্দুকের নল চুষার নির্দেশ দিয়েছেন? ওরা কেনো সীমানা ডিংগিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সৈন্যদের গুলি করেনা? নাকি এদেরকে ধমকি দিয়েছেন, সাবধান বাড়াবাড়ি করেছো তো হান্নান আর হরিপদের মত ভাগ্য হবে!
-আপনারই এক মন্ত্রী তেল চিটচিটে মুখে ঘোষণা দিলেন 'সীমান্তে এখন মানুষ হত্যা অনেক কমেছে'! আপনার এই মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে বলি, স্যার, প্লীজ আপনার যদি কোনো মেয়ে থাকে তাকে সীমান্তের কাঁটাতারে ফালানীর জায়গায় উলটা করে ঝুলিয়ে দিয়ে আসুন। বিএসএফ তাকে গুলি করুক। সে পানি পানি বলে ঘন্টার পর ঘন্টা চিৎকার করতে করতে মরুক। তারপর বিএসএফ তার লাশ নিয়ে গিয়ে দিগম্বর করে ময়না তদন্তের নামে পুরো শরীর কোরবাণীর গরুর মত কাঁটাছেড়া করুক। প্রয়োজনে লাশ যদি তখনো গরম থাকে, তাহলে গরম থাকতে থাকতেই যে ক'জন পারে শারিরীক চাহিদাও মিটিয়ে নিক। তারপর যখন 'পতাকা বৈঠক' করে আপনার মেয়ের লাশ ফেরত আনবেন, তখন দেখবো আপনার তেল চিটচিটে মুখ থেকে কীভাবে এমন কথা বের হয়।
জনাবা ডক্টর সাহেবা, আপনাকে আর কী বলবো। আপনার সাথে তো 'দাদা'দের পুরানো দিনের বন্ধুত্ব; আমি বরং অবাক হয়ে দেখি ডানপন্থীদের রিএকশান। আজকে সকালে ডানপন্থীদের একটা লাশ পড়ুক, দুপুর না হতেই শহর-অঞ্চল, গ্রাম-গঞ্জে ব্যানারে ব্যানারে, মিছিলে মিছিলে গম গম করে উঠবে শত শত যুবকের কন্ঠ, 'শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দিবোনা'। এদেরকে এখন আমার ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, বর্ডারে মারা যাওয়া বাংলাদেশীদেরকে কী আপনাদের শহীদ মনে হয়না? নাকি ওরা আপনাদের দল করেনা দেখে ওরা শহীদ না? নাকি দলীয় কর্মী না বলে আপনাদের কোনো মাথাব্যথা নেই? অবশ্য ওদের মৃত্যু তে আপনাদেরই লাভ, এইসব মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখিয়ে পরের নির্বাচনে মানুষকে নিজেদের ভোটের দিকে টানতে সহজ হবে।
ডানপন্থী, বামপন্থীরা, তোমাদেরকে স্যালুট। তোমাদের বিক্রী হয়ে যাওয়া মস্তিষ্ককে স্যালুট। তোমাদের দল, তোমাদের আদর্শকে স্যালুট। তোমাদের ক্ষমতা-লিপ্সাকে স্যালুট। তোমরা একপক্ষ সেক্যুলার আর আরেকপক্ষ জাতীয়তাবাদী বা ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকো। তোমাদেরকে দিয়েই হবে, ট্রাষ্ট মী, সবদিকে তোমাদের রাজনীতিরই জয় জয়কার। ফালানী-শাহজাহানের মত ঐসব মজুরদের কে আর মনে রাখবে? আজ বাদে কাল মানুষ ভুলে যাবে। পরশু ঠিকই গিয়ে তোমাদেরকেই ভোটটা দিয়ে আসবে। বেশ বেশ। সাবাস, এগিয়ে চলো, পুরো জাতি আছে তোমাদের সাথে।
……………………………
আপনি যদি রাজনীতিবিদদের দিকে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের দিকে যদি তাকিয়ে থাকেন কোনো পদক্ষেপের আশায়, ফালানী-শাহজাহানদের খুনের বিচারের আশায়, তাহলে আপনি এখনো বোকার স্বর্গেই বসবাস করছেন। একাত্তুরে দেখেননি?- কেমন যুদ্ধের ডাক দিয়ে সব নেতারা গিয়ে বসে থাকলো ওপারে! স্বাধীনতা এনেছিলো সাধারণ মানুষ। যুদ্ধ করেছিলো সাধারণ মানুষ। আজকেও আমার-আপনার মত সাধারণ মানুষদেরকেই আবার মেরুদন্ড শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। নতুবা আজকে সীমান্তে মানুষ মরছে, কাল আমার আপনার ঘরের মানুষ মরবে। জ্বী না, আমি আপনাদেরকে কোনো যুদ্ধে যেতে বলছিনা, কোনো মহা-কর্মসূচীর ঘোষণাও দিতে বলছিনা, রাস্তায় নেমে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনও করতে বলছিনা। আমার স্বল্পবুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি, আমাকে-আপনাকে এখন প্র্যাকটিক্যাল কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আসুন একটু কয়মিনিটের জন্য দেখি, আমি-আমরা-আপনি-আপনারা কী করতে পারি। লিষ্টের অন্ততঃ সব না পারলে, তিন/চারটা পদক্ষেপ হলেও বেছে নিন। তিন-চারটাও যদি না পারেন, অন্ততঃ একটা হলেও বেছে নিন। কিছু একটা করুন। নতুবা ফালানী-শাহজাহানদের কাছে বিবেকের দায় থেকে মুক্তি পাবেন না।
আমরা কী করতে পারি?
- বর্ডার হত্যা ইস্যুতে বিভিন্ন মেইল-গ্রুপে, ব্যক্তিগত কন্টাকদের সাথে, ব্লগে মতামত শেয়ার করুন।আন্তর্জাতিক ব্লগ/ওয়েবসাইট/মিডিয়ায় লেখালেখি করুন। আপনি যদি একাডেমিক হোন, প্লীজ এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জার্নালে/ওয়েবসাইটে লিখুন।
- ফেইসবুকে/ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বর্ডার হত্যা ইস্যুতে একজন একটা করে হলেও পেইজ ক্রিয়েট করুন বা গ্রুপ খুলুন। অন্য কেউ পেইজ/গ্রুপ বানাবে আপনি তাতে 'লাইক' দিবেন, তার জন্য বসে থাকবেন না। যত বেশী পেইজ হবে, যত বেশী ওয়েবে লেখালেখি হবে, তত বিষয়টা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
- আড্ডায়/কথোপকথনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে এই ইস্যুতে মতামত শেয়ার করুন, তাদেরকে সচেতন করুন।
- আপনার মা,বোন,পরিচিতাদেরকে ইন্ডিয়ান চ্যানেল এবং সিরিয়াল দেখা থেকে বিরত রাখুন। তাদেরকে ফালানীর কথা জানান, শাহজাহানের কথা জানান, গত চারবছরে ভারতীয় সীমান্তবাহিনীর হাতে নিহত, অপহরণকৃত, আহত ৮৭৯ জন বাংলাদেশী মানবসন্তানের কথা জানান, তাদের লাশের ছবি দেখান, তারপর জিজ্ঞেস করুন "আজকে আপনার সন্তান যদি এদের একজন হতো, পারতেন সন্তানের লাশ কবর দিয়ে তার খুনীদের দেশে তৈরী এইসব ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে?"
- বাসায় ইন্ডিয়ান চ্যানেল লাইন বিচ্ছিন্ন করুন, তা করতে গিয়ে যতই বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হোক না কেনো। ফালানী আর শাহজাহান আর তাদের মত অন্যান্য বাংলাদেশীদের মৃত লাশের দৃশ্য দেখার পর নিশ্চয়ই সামান্য এই কাজটুকু আপনার জন্য কঠিন হওয়ার কথা না।
- ছোট ছোট সাদা কাগজে এই ইস্যুতে বিভিন্ন জনসচেতনমূলক তথ্য লিখে প্রিন্ট আউট নিন, সেগুলো ফটোকপি করুন। যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে পোষ্টার কাগজে মার্কার দিয়ে লিখুন। তারপর আপনার এলাকার দেয়ালে, রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টে, যেখানে যেখানে লাগানো যায়, সেখানে সেখানে একটা করে কপি লাগিয়ে দিন। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের হাতে হাতে একটা করে কপি ধরিয়ে দিন। একলা যদি নার্ভাস লাগে এই কাজ করতে, দুই/তিনজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এই কাজে নেমে পড়ুন। বেশী টাকা খরচ হবেনা। তিনজন যদি একশ' টাকা করেও দেন, তিনজনের তিনশ'টাকায় যথেষ্ঠ কপি করতে পারবেন।
- কাষ্টমাইজড টি-শার্ট, ক্যাপ বানিয়ে নিন। তাতে প্রিন্ট করে নিন বর্ডার হত্যা ইস্যুতে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক শ্লোগান। আপনি যেখানে যাবেন, সেখানেই মানুষ তখন এই ইস্যু'র কথা জানবে।
- যারা স্লাইড শো বানাতে পারেন, তারা এই ইস্যুতে ফ্যাক্ট তুলে ধরে, ফটো দিয়ে, তথ্য দিয়ে ৫/৬ মিনিটের স্লাইড শো হলেই বানিয়ে ফেলুন। তারপর এগুলো নেটে শেয়ার করুন, সব জায়গায় শেয়ার করুন। অনেক সময় মানুষ পড়তে পছন্দ করেনা, দেখতে পছন্দ করে। হতে পারে আপনার স্লাইড শো দেখে কেউ না কেউ সচেতন হবে। আর যারা ডকুমেন্টারী বানাতে পারে, প্লীজ দশ/পনের মিনিটের হলেও ডকুমেন্টারী বানাতে কত শ্রম আর টাকাই বা খরচ হবে? অন্ততঃ নিজের বিবেককেতো বলতে পারবেন কিছু একটা করেছেন।
- ইন্ডিয়ান পন্য বর্জন করুন। বাংলাদেশে থেকে ইন্ডিয়ান পন্য বর্জন হয়তো পুরোপুরি সম্ভব নাও হতে পারে, তারপরও যতটা সম্ভব বর্জন করুন। ফালানী-শাহজাহানদের কথা ভুলবেন না। অনেকেই বলবে এইসব বর্জন টর্জন বোগাস কথা, ফালতু, ইন্ডিয়ার কচুটাও হবেনা। এইসব নিমকহারামদের কথায় কান দিবেন না। আপনি, আপনার বন্ধু, আত্মীয়, এই করতে করতে একজন থেকে দশজন বর্জন করবে, দশজন থেকে বিশজন, বিশজন থেকে একশ জন। মনে রাখবেন, একটা বিপ্লব শুরু করার জন্য একজনই যথেষ্ঠ। আর বিপ্লব যদি নাও হয়, তাও স্বান্তনা, আপনি নিজের কাছে অন্ততঃ বিবেকের দায়-মুক্ত থাকতে পারবেন। আপনার আগের জেনারেশনকে স্বদেশী পন্য আন্দোলনের কথা জিজ্ঞেস করবেন। তখন যদি মানুষ স্বদেশী পন্য ব্যবহারের পক্ষে এত বিশাল আন্দোলন করতে পারে, আমরা কেনো পারবোনা??
- বিভিন্ন জায়গায় মানব-বন্ধন হচ্ছে। যাদের পক্ষে সম্ভব, যারা কাছাকাছি আছেন, প্লীজ সবক'টি মানব-বন্ধনে নিজে যোগ দিন, অন্যদেরকেই উৎসাহিত করুন। প্রয়োজনে নিজেরাও মানব-বন্ধনের আয়োজন করুন। বেশী লোক নিয়ে চিন্তা করবেন না। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দশ-বিশজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিরবে দাঁড়িয়ে যান। একের পর এক মানববন্ধন হতে থাকলে বিশ্বমিডিয়ার টনক নড়বেই। এইসব মানববন্ধনের ছবি তুলে যত জায়গায় পারুন শেয়ার করুন, মানুষকে জানান।
........................
এই ইস্যুতে অন্যদের লিখা কিছু পোষ্টের লিংক, নিজে পড়ুন, অন্যদেরকে পড়তে বলুন-
২১ শে জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে- আসবেন তো সবাই?
অপমান আর গ্লানিতে যে লেখার শিরোনাম হয় না
কিং খানের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা কিছু প্রশ্ন
কাটাতারে ঝুলছে বাংলাদেশ
____________________________________________
মূল লিঙ্কঃ http://jajaborrr.blogspot.com/2011/01/blog-post_19.html
__._,_.___
Palash Biswas
Pl Read:
http://nandigramunited-banga.blogspot.com/
No comments:
Post a Comment