Monday, November 3, 2025
ভোট হোক না হোক, নাগরিকত্ব সবার হোক
*দেশভাগের শিকার সাধারণ মানুষ “NO” এবং “YES”– দুই পক্ষকেই অস্বীকার করেছেন! তা’হলে উপায়?*
সুশীল, নাগরিক সমাজ NO CAA; NO NPR; NO NRC-র দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। SIR আসার পরও তাঁরা আগের মতো “NO SIR” শ্লোগানকে সামনে রেখে অন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ সাড়া দেননি। গত ২৫ অক্টোবরের প্রগ্রামে যেখানে মানুষের ঢল নামার কথা ছিল আগের মতো তা কিন্তু হয়নি।
বিগত এগারোটি বছর পার হয়ে গেল কিন্তু বিজেপির ইউনিয়ন সরকার তার প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হল। ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন আইনের রুল বেরোনোর পর পার হয়ে গেল অনেক সময়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিজেপি পার্টি এবং তার প্রভু আরএসএস সহ যত প্রকার প্রচারমাধ্যম আছে সব কিছুকে কাজে লাগানোর পরও সারা পশ্চিমবঙ্গে হাজারের উপর ক্যাম্প করার ঘোষণা করতে হয়েছে। তাতেও ডাল গলেনি। কিছু জায়গায় কয়েকটি ঘরে কয়েকজন সাধারণ মানুষ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছেন CAA’তে আবেদন করার জন্য, এটা দেখা যাচ্ছে। আর দেখা যাচ্ছে ঠাকুরনগরে কিছু সাধারণ মানুষের ভীড়, মতুয়া/হিন্দু কার্ড বানানোর জন্য। এসব থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোটি কোটি মানুষ এই পদ্ধতিকে অস্বীকার করেছেন।
ইউনিয়ন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে বলেছেন যে, “যাঁদের জন্ম ভারতে তাঁরাই একমাত্র ভারতীয় নাগরিক, তাঁরাই ভোটার।” [সেটাও আবার ১৯৮৬ পর্যন্ত!] আরেকটি জায়গায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, “পাকিস্তান ভূখণ্ড থেকে ১৯৪৭’এর পর যাঁরাই এসেছেন সবাইকেই CAA’তে আবেদন করতে হবে।” অথচ সারা দেশে CAA’তে আবেদন করার যে চিত্র আমরা দেখলাম তা এককথায় এই প্রকল্পকে খারিজ করে দেয়।
সত্যিই তো যাঁদের কাছে তাজা শরণার্থীর স্টাটাস রয়েছে; দেশত্যাগ করার সময় সমস্ত কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে এসেছেন এবং ভারতের বিদেশ দফতরে আশ্রয় চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় আছেন, তাঁদের এই CAA-র ভরপুর লাভ নেওয়া উচিত। তাঁরা তা পারেন। *কিন্তু, যাঁরা আদৌ শরণার্থীর স্টাটাসে নেই; একাত্তরের আগে বা পরে এসেছেন; জীবনযাপনের বাস্তব তাগিদে অন্য একজন এপারের সাধারণ মানুষের মতো বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র বানাতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা আজ কিভাবে ভোল পাল্টে শরণার্থী হয়ে যাবেন?*
এই তো কদিন আগের কথা, বিশেষ সূত্রে জানা গেছে যে, একটি রাজ্যের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি CAA’তে আবেদন করার পর স্থানীয় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।
~~~~উপরের প্রতিটি শব্দই যন্ত্রণাদায়ক বাস্তব। ইতিহাস, ভূগোল, দেশভাগ/বাংলাভাগ এসব নিয়ে তত্ত্বকথা, নৈতিকতা অনেক হয়েছে, চলতে পারে অনন্ত কাল। কিন্তু, ব্যবহারিক-বাস্তবতা থেকে প্রতিটি সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখা উচিত। তা না হলে এই বিষম পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত সেই অমোঘ প্রশ্নের উত্তর আমরা পাব না। অনেক আগেই এই বিষয়টি উঠেছিল যে, “কোনো মূল্যেই আখের গুড় থেকে আখের চাড়া তৈরি করা যায় না!” আর এখন তো কেউ নিরেট সীধাসাদা না হলে এই ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা দেবেনও না। কেমন সেই ফাঁদ?
হ্যাঁ, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাক্ট দুই হাজার পঁচিশের কথা বলছি। এতে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে যে, যারা অবৈধভাবে সরকারি ডকুমেন্টস তৈরি করবে প্রমানিত হলে সাত বছরের জেল এবং দশ লাখ টাকা জরিমানা। আর এই কাজে যারা সাহায্য করবে তাদেরও হবে কঠিন সাজা। বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের নেতারা বগল বাজিয়ে বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন যে, “আ হা হা, আমাদের প্রাণপ্রিয় মোদী সরকার কাট অফ ডেট বাড়িয়ে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত করেছেন; কি আনন্দ! কি আনন্দ!”••••••••
হ্যাঁ, এতে ধরপাকড়ের সংখ্যাই বাড়বে। কারণ, ধরে নিলাম আইন অবৈধ অনুপ্রবেশজনিত অপরাধ মার্জনা করেছে। কিন্তু, এপারে এসে শরণার্থী না হয়ে, বিপরিতে, একজন ভারতীয় নাগরিকের মতো যেসব সরকারি ডকুমেন্টস বানিয়েছেন— সেটা যে বৈধ, সে কথা কোথাও বলেনি।
সুতরাং এটা একটা চরম বিপর্যয়— ভবিষ্যত অস্তিত্ব হুমকির মুখে; এটা একটা সাঁড়াশি আক্রমণ। আবেদন করলেও বিপদ; না করলেও বিপদে পড়ার ভয়: শান্তনু ঠাকুরের ভাষায় তার পরিনতি হবে রোহিঙ্গাদের থেকেও ভয়ঙ্কর। আবেদন না করলে ভোটার তালিকায় নাম উঠবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশন একজন ভোটারের গোড়াঘাট পর্যন্ত ঘেটে দেখবে— মা বাবা, তাঁদের মা বাবা কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এসব।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? এটা হলো সব কথার শেষ কথা। আমি মনে করি, সমাধান সূত্র একটিই, তা হল: *আগে দেশভাগের শিকার সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করা; তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি নতুন আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা*।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment