| ||
ডানলপকে সামনে রেখে এক মঞ্চে চলে এল তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। যা রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একেবারে 'নজিরবিহীন' না-হলেও অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা! এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুর্দিন চলছে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানায়। তিনটি শ্রমিক সংগঠনই এত দিন আলাদা আলাদা ভাবে আন্দোলন করেছে। কিন্তু শনিবার ডানলপে 'সাসপেনশন অব ওয়ার্ক'-এর বিজ্ঞপ্তি জারির পরে তিন সংগঠনের নেতারাই ঠিক করেছেন, কারখানা খোলার দাবিতে কোনও রকম ঝান্ডা ছাড়াই আজ, সোমবার থেকে ডানলপের পূর্ব দিকের গেটে ধর্না-মঞ্চে তাঁরা অবস্থান করবেন। এই জন্য তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন জন করে সদস্যকে নিয়ে ৯ জনের একটি নতুন কমিটি গড়া হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি'। প্রসঙ্গত, শনিবার ওই কারখানা বন্ধ হওয়ার জন্য মালিক পক্ষকেই দুষেছিল সব ক'টি সংগঠন। আজ, সোমবার মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডানলপ কর্তৃপক্ষের বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যায়, তা দেখেই পরবর্তী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তাঁরা ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন তিন সংগঠনের নেতারা। রাজ্য সরকারের সামনে অবশ্য এখন মূল লক্ষ্য, ডানলপের মালিককে সামনাসামনি হাজির করা। বস্তুত, তাঁদের 'সমস্যা' নিয়ে ডানলপ কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা না-করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় সরকার 'ক্ষুব্ধ'। সাহাগঞ্জে আজ, সোমবার বেলা ১০টা থেকে অবস্থান শুরু হওয়ার কথা। সেখানে থাকবেন কারখানার শ্রমিকেরাও। রবিবার এ ব্যাপারে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত, সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়, সংগঠনের অপর নেতা বিতান চৌধুরী এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র তানাজি দাশগুপ্ত। রাজ্য আইএনটিউসি-র সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ডানলপের শ্রমিকদের এক মঞ্চে আন্দোলনের কর্মসূচিকে 'স্বাগত' জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, "শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলনের পাশাপাশি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকে ডানলপের সমস্যা দ্রুত মেটানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আমি আর্জি জানাচ্ছি। ওই বৈঠকের আগে শ্রমমন্ত্রী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভাল হয়।" আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনও ডানলপের শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলনকে সমর্থন করে এ দিন বলেন, "তিন বছর আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে ডানলপের শ্রমিকেরা দলমত নির্বিশেষে 'ডানলপ বাঁচাও কমিটি' গড়ে আন্দোলন করেছিলেন। আমরা শ্রমিকদের মধ্যে কোনও বিভেদ চাই না। সমস্ত দলের বা সংগঠনের ঝান্ডা সরিয়ে আমরাও চাই ডানলপের সমস্ত শ্রমিকেরা একযোগে কারখানা খোলার দাবিতে আন্দোলন করুন। সেই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য শান্তশ্রীবাবুরা অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁরা ডানলপ বাঁচাও কমিটির অর্ন্তভুক্ত হলে আমাদের আপত্তি নেই।" তবে ডানলপ বন্ধের ব্যাপারে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী রাজ্য সরকারের সমালোচনা করায় দোলা পাল্টা বলেছেন, "শ্যামলবাবুর দলের নেতা শান্তশ্রীবাবু আমাদের সঙ্গে একযোগে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আর শ্যামলবাবু বলছেন, ডানলপ মালিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে সরকারও আছে! ফলে শ্যামলবাবুর সঙ্গে শান্তশ্রীবাবুর অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে।" ঘটনাপ্রবাহে ইঙ্গিত মিলছে, ডানলপ খোলার দাবিতে স্থানীয় শ্রমিক নেতৃত্ব যে ভাবে একমঞ্চে আসছেন, রাজ্য স্তরে ততটা 'সহমত' এখনও তৈরি হয়নি। আইএনটিইউসি-র বিদ্যুৎবাবু বলেন, "ডানলপ কর্তৃপক্ষ একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই তা ফলপ্রসূ হয়নি। যার পরিণতিতে কারখানার দরজা ফের বন্ধ হল।" শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোরও দাবি তোলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, "সামান্য যে বেতন কর্তৃপক্ষ দিতেন, উৎপাদন না-হওয়ায় মনের দিক থেকে সেই টাকা নিতেও দ্বিধা করতেন শ্রমিকেরা। কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তাঁরা তা নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তাঁদের বহু টাকা বকেয়া রয়েছে।" কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একই ভাবে সরব সিটু নেতা শান্তশ্রীবাবুও। তিনি বলেন, "সোমবারের বৈঠকের উপরে আমরা নজর রাখছি। শ্রমমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও আমরা দেখা করতে চাই।" শান্তশ্রীবাবুর আরও অভিযোগ, "ডানলপের মালিক পক্ষ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। ব্যাঙ্কও আর ওঁদের ঋণ দিতে চাইছে না।" এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের দাবি তুলেছেন তিনি। জেলা সিটু সূত্রের খবর, শুধু ডানলপই নয়, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল খোলার দাবিতেও আইএনটিটিইউসিকে নিয়ে নতুন কমিটি গড়ে আন্দোলনের চেষ্টা চলছে। জেলা আইএনটিইউসি নেতা তানাজি দাশগুপ্ত বলেন, "ডানলপকে বাঁচাতে কিছু দিন ধরেই আমরা এক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছিলাম। এটা শ্রমিকদের পক্ষেই ইতিবাচক হবে। ডানলপকে বাঁচাতে যত দূর যেতে হয়, আমরা যাব!" |
Current Real News
7 years ago
No comments:
Post a Comment