প্রচার-মঞ্চে এলেন বড়মা, দৃশ্যতই আপ্লুত তৃণমূল নেত্রী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সীমান্ত মৈত্র • গোবরডাঙা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর, গোবরডাঙা এবং হাবরায় তিনটি সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গোবরডাঙা কলেজ মাঠে দুপুর ১টা নাগাদ পৌঁছন তিনি। কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে আসার সময়েও মমতা সংশয়ে ছিলেন সভায় মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবী তথা বড়মা আসবেন কিনা, তাই নিয়ে। যাত্রাপথে সহকর্মীদের বলেওছিলেন, "এত গরমে উনি কি আসতে পারবেন?" কিন্তু মমতা আসার আগেই মঞ্চে বসেছিলেন অশীতিপর বড়মা। সঙ্গে গাইঘাটা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা নিজের ছোটছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। দৃশ্যতই অভিভূত মমতা মঞ্চে উঠেই বড়মার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সারেন। বড়মাও মমতার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। বড়মার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক অবশ্য নতুন নয়। রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে ঠাকুরনগরের (এখানেই আছে মতুয়া মহাসঙ্ঘের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়ি) উন্নয়নে বহু টাকা ব্যয় করেছেন। মতুয়া মেলার সময়ে দিয়েছেন বিশেষ ট্রেন। নিজেও মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদস্যপদ নিয়েছেন। মঞ্জুলকে গাইঘাটা আসনে ভোটে দাঁড় করিয়ে রাজনীতির ময়দানে আগেই বড়সড় 'মাস্টারষ্ট্রোক' খেলেছিলেন মমতা। এ দিন মমতা বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, "শ্রদ্ধেয় বড়মা এসেছেন। এত গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। বেশি ক্ষণ ওঁকে আটকাব না।" মমতা এ কথা বললেও সভার পুরো সময় (প্রায় আধ ঘণ্টা) মঞ্চে ছিলেন বড়মা। | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সভায় বড়মার আশীর্বাদ নিচ্ছেন মমতা। —পার্থসারথি নন্দী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বড়মাকে নিয়ে টানাপোড়েনে এক সময় বামপন্থীরাও চেষ্টার কসুর করেনি। বড়মাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের দুই ধর্মগুরু হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদের নামে রিসার্চ ফাউণ্ডেশনের জমি দান উপলক্ষে রাজারহাটে বিশাল সভার আয়োজন করেছিল সিপিএম (তার আগেই হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নামে বিশেষ পুরস্কার চালু করেছে রাজ্য সরকার। প্রথম বছর সেই পুরস্কার পেয়েছেন মঞ্জুলের দাদা কপিলকৃষ্ণ)। সেই অনুষ্ঠানে বড়মা আসবেন ধরে নিয়ে আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব তথা হিডকোর উদ্যোগে সভাস্থলের কাছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রীতিমতো একখণ্ড গ্রাম তৈরি হয়েছিল। বড়মার থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কুটির। সেই অনুষ্ঠানে আসেননি বড়মা। কিন্তু ছোট ছেলের প্রার্থিপদ ঘোষণার পরে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে প্রচারে বেরোবেন। এ দিন সেই 'কথাই রাখলেন' তিনি। এ দিন মমতার প্রতিটি সভাতেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। চাঁদি ফাটা রোদে মমতার জন্য গোবরডাঙায় হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর হেলিকপ্টার যখন গোবরডাঙার আকাশে চক্কর কাটছে, তখনই শুরু হল তুমুল হর্ষধ্বনি, উলুধ্বনি। মহিলারা শাঁখ বাজাচ্ছিলেন। মতুয়াদের প্রথাগত বাদ্যযন্ত্র ডাঙ্কা-কাঁসার আওয়াজে তখন কার্যত কান পাতা দায়। হেলিপ্যাড থেকে মঞ্চে হেঁটে আসার পথে মমতাকে দেখতে ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় মঞ্চের পিছনের ইটের পাঁচিল। সভা চলাকালীনও এক সময় ভিড়ের চাপে ব্যারিকেড ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। মমতা সকলকে শান্ত হতে বলেন। সেই কথায় কাজও হয়। বিধানসভা ভোটে 'জয়ী হয়ে এসে' প্রথমেই বড়মার আশীর্বাদ নিতে আসবেন বলে এ দিন 'কথা দিয়েছেন' মমতা। সরকার গড়লে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িকে 'ঐতিহাসিক স্থান' হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "গুরুচাঁদের নামে এখানে কলেজ হবে। মায়ের (বড়মা) অনুমতি নিয়ে হাসপাতাল তৈরি করব। উন্নয়ন করব। প্রচুর মানুষ এখানে কাজ পাবে।" সিপিএমকে তাঁর কটাক্ষ, "ওরা ধর্মকর্ম মানে না। দুর্গাপুজোয় যায় না। ঠাকুরবাড়িতে যায় না। তবে আমি বড়মার কাছে গেলে সিপিএমও দুটো লেজুড় ধরে বড়মার কাছে আসে।" হাবরায় তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সমর্থনে এক সভায় মমতা বলেন, "বড়মা এসে আশীর্বাদ করায় আমরা কৃতজ্ঞ।" জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, "এ থেকে প্রমাণ হল মতুয়ারা আমাদের সঙ্গেই আছেন। গোটা রাজ্যে ভোটে এর প্রভাব পড়বে।" গোবরডাঙার সভায় তৃণমূল নেত্রীও এ দিন বলেন, "উদ্বাস্তুদের সমস্যা নিয়ে মতুয়ারা আন্দোলন করছেন। নির্বাচন এলেই বলা হয় ওঁদের (উদ্বাস্তু) তাড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু উদ্বাস্তু ভাইবোনেরা নিশ্চিন্তে থাকুন। মনে রাখবেন, উদ্বাস্তুদের জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করেছি আমি। তাদের গায়ে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। আমি যেমন তফসিলি, সংখ্যালঘুদের ভালবাসি তেমনই উদ্বাস্তুদের নয়নের মণি করে রেখে দিই আমরা। আগামী দিনেও উদ্বাস্তু উন্নয়ন আমরাই করব।" বিজেপিকে ফের কটাক্ষ করে মমতা বলেন, "পদ্মবেশী ছদ্মবেশী সব।" বনগাঁর গোপালনগরে হরিপদ ইন্সটিটিউশনের মাঠেও এ দিন বাগদার তৃণমূল প্রার্থী উপেন বিশ্বাস, বনগাঁ (উত্তর) প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এবং বনগাঁ (দক্ষিণ)-এর সুরজিৎ বিশ্বাসের সমর্থনে সভা করেছেন মমতা।
|
Sunday, April 24, 2011
প্রচার-মঞ্চে এলেন বড়মা, দৃশ্যতই আপ্লুত তৃণমূল নেত্রী
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=24south1.htm
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment