Palah Biswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Zia clarifies his timing of declaration of independence

what mujib said

Jyothi Basu Is Dead

Unflinching Left firm on nuke deal

Jyoti Basu's Address on the Lok Sabha Elections 2009

Basu expresses shock over poll debacle

Jyoti Basu: The Pragmatist

Dr.BR Ambedkar

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin Babu and basanti Devi were living

"The Day India Burned"--A Documentary On Partition Part-1/9

Partition

Partition of India - refugees displaced by the partition

Sunday, February 20, 2011

পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু – সংস্কৃতির সংঘাত Posted by bangalnama on December 22, 2010

পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু – সংস্কৃতির সংঘাত

Posted by bangalnama on December 22, 2010

http://bangalnama.wordpress.com/2010/12/22/purba-pakistaner-udbastu-sanskritir-sanghat/

 
 
2 Votes

- লিখেছেন সরজিৎ মজুমদার


"দিদি, এক বাটি আটা দিতে পারেন? কাইল সক্কালে গম ভাঙ্গাইয়া আনলে ফিরত দিয়া দিমু।" পাশের বাড়ির মাসিমার কাছে আটা ধার নিয়ে এক রাত্রির খাওয়া। মাসিমাও তাঁর প্রয়োজনে কোন জিনিস ধার নিয়ে কাজ চালাতেন। এই দেওয়া নেওয়া চলত ১৯৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত সহায় সম্বলহীন উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। এরাই বাঙ্গাল। সবারই অবস্থা সমান। সকলেরই জবর দখল করা জমিতে বসবাস। তাই নাম উপনিবেশ বা কলোনি। প্রতিবেশীর কাছে এই ধরণের গৃহস্থালী প্রয়োজনীয় বস্তু ধার নেওয়ার চল ছিল পশ্চিম পাকিস্থান থেকে উচ্ছিন্ন পাঞ্জাবী শরণার্থী পরিবারদের মধ্যেও। হিন্দি সিনেমায় ছিন্নমূল পাঞ্জাবীদের এই ধরণের আটা, চিনি ধার করা ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রে দেখানো হয় অপাঞ্জাবীদের মনোরঞ্জনের জন্য। এর পিছনে যে একদল মানুষের সমূলে উচ্ছেদের, জাতি-দাঙ্গার করুণ কাহিনী আছে তা কেউ জানাল না, জানল না। দেশছাড়াদের যন্ত্রণা কেই বা তেমন করে বোঝে? প্রখর বুদ্ধি বা অনুভবি মন থাকলেই এই যন্ত্রণা বোঝা যাবে না। পরের প্রজন্ম, আমাদেরই ছেলেমেয়েরা, আমাদের অতীতের ভয়াবহ সামাজিক সংঘাত, নতুন দেশে বাস, নতুন পরিবেশ, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের কষ্ট বোঝে না। দূরের মানুষ বুঝবে সে আশা কোথায়?


১৯৪৬-এর নোয়াখালির দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে অনেক মানুষ বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করে পূর্ব পাকিস্তানের পাট চুকিয়ে কলকাতা ও অন্যান্য জেলায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিল। যারা সেখানেই পড়েছিল ১৯৪৭-এ নেহরু-জিন্নার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশ ভাগাভাগি তাদের আচমকা ধাক্কা দিল। শুরু হল অনিশ্চয়তা এবং আবার দাঙ্গার আশঙ্কা। পশ্চিমবঙ্গে স্থিতু মানুষরা হয়ত ১৯৪৭-এর ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছে। যারা জাতি-দাঙ্গার রক্তরূপ দেখেছে তাদের পূর্ববাংলার ত্রস্ত দিনগুলোতে স্বাধীনতার স্বাদ নেওয়া হয় নি। ১৯৪৯-এ আবার দাঙ্গা শুরু। এবার দাঙ্গা লাগল খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ জেলাগুলোতে। ভীতি-আচ্ছন্ন মানুষ দেশভাগের পর যেদিকে "আমাদের লোক" সেদিকে যাওয়াই নিরাপদ মনে করে হাজারে হাজারে শরণার্থী হয়ে চলেছিল পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখে। কেউ এসে উঠল আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ শরণার্থী ক্যাম্পে, কেউ জায়গা না পেয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম-এ। অনেকে পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহারের দিকেও গিয়েছিল। বেশ কিছু উদ্বাস্তুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল আন্দামান ও দন্ডকারণ্যে। সেই ১৯৪৭-এ শরণার্থীদের ভারতে আসার স্রোত কিন্তু আজও বন্ধ হয় নি, যদিও সরকার ইদানীং কালে আসা মানুষদের উদ্বাস্তু বলে স্বীকার করে না।


কলকাতার উপকন্ঠে কলোনিগুলো তৈরি হয়েছিল ১৯৪৯-৫০ নাগাদ। টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বাঘাযতীন, অঞ্চলে বিভিন্ন জমিদারের অব্যবহৃত-উদ্বৃত্ত জমি দখল করে শুরু হল কলোনিতে বসবাস। আমরা কলোনিতে ঠাঁই নিলাম ১৯৫৪ সালে।


১৯৫০-এ পূর্ব পাকিস্তান থেকে যখন কলকাতা আসি আমি তখন খুবই ছোট। বয়স তিন কী চার বছর। টুকরো টুকরো স্মৃতি জড়িয়ে আছে পূর্ব পাকিস্তান ও শহর কলকাতার। মনে পড়ে গরুর গাড়ি করে নোয়াখালির এক গ্রাম ছেড়ে চলে আসার সময় বাড়ির নেড়ী কুকুর, ভুলু, অনেকটা পথ পেছনে পেছন এসেছিল। ভুলুর অনুসরণ দেখতে ভাল লাগছিল বটে। শিশু ছিলাম, জানতাম না ভুলুকে আর কোনদিন দেখতে পাব না। এসে আশ্রয় নিলাম চারঘর আত্মীয় পরিবার একসঙ্গে খিদিরপুরে এক ভাড়া বাড়িতে। মোট ৬০০ বর্গ ফুটের দুই ঘর এক বারান্দায় চার পরিবারের ২১ জন মানুষের বাসস্থান। পূর্ব পাকিস্তানে তুলনায় অপ্রতুল জায়গা।


আত্মীয় পরিজনদের দাদা-স্থানীয় প্রায় সকলেই শিক্ষা শেষ করে এদেশে এসেছিলেন এবং ১৯৫৩ সালের মধ্যে চাকরি জোগাড় করে অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে চলে যান। আমার অগ্রজদের তখনও স্কুলশিক্ষা শেষ হয় নি। তাঁদের শিক্ষার পাট চুকতেই অবশেষে আমরা উদ্বাস্তু কলোনিতে ঠাঁই নিলাম। কলোনিতে আসার আগে আমার স্কুলে যাওয়া শুরু হয় নি। কারণ কোথায় গিয়ে স্থায়ী হব তা অনিশ্চিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখতাম পিতৃদেবের সম্পত্তি-হারানো ইংরেজ-সরকারের-৬৬-টাকা-পেনশন-সম্বল অসহায় মুখ, আর মাতৃদেবীর কঠিন মুখ – অভাবী বাস্তবের মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত। ছয় জনের পরিবারের বোঝা কম নয়। বাড়িতে দুই বেকার দাদা, স্কুলে পাঠরত দুজন – দিদি ও আমি। উদ্বাস্তুদের বরাদ্দ সরকারি স্টাইপেন্ড না পেলে কতদূর পড়াশুনা করতে পারতাম জানি না।


উদ্বাস্তু কলোনির মানুষদের ছিল অনেকটা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন। কলোনিবাসীদের মধ্যে অনেকেই ছিল ছোট এবং মাঝারি চাষী পরিবারের, যারা পূর্ব পাকিস্তানে ভিটেমাটি ছেড়ে এই বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিল। আবার অজস্র ভূমিহীন উদ্বাস্তুও এসেছিল সেই সময়। দেশের কৃষক এবং ভূমিহীন পরিবারের পার্থক্য কলোনিতে এসে বরাবর। সব পরিবারেই শোনা যেত ফুল্লরার বারোমাস্যা। প্রতিবেশীর মধ্যে এটা সেটা ধার করা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ব্যতিক্রমী কিছু খাবার তৈরি হলে প্রতিবেশীকে ভাগ দেওয়া। সবার বাড়িতে ঘড়ির মত প্রয়োজনীয় যন্ত্রও ছিল না। পাশে যার বাড়িতে ঘড়ি ছিল তার কাছে সময় জেনে নিতে হত। এক বাড়ির খবরের কাগজ তিন চার বাড়ির লোকে পড়ত। খেলায় উৎসাহী ছোটরা বড়দের কাছে খবর জেনে নিত ইস্টবেঙ্গল ক'টা গোল দিয়েছে। রেডিও ছিল বিলাসিতা। রবিবার অনুরোধের আসরের গান শুনতে যেতে হত অন্য পাড়ায়। যে বাড়িতে রেডিও ছিল সেই বাড়ির রাস্তার ধারে বসে একদল ছেলে গান শুনতাম।


এছাড়াও জমি দখলের সংগ্রাম ভেদাভেদমুক্ত পরিবারগুলোকে নিবিড়ভাবে জুড়ে দিয়েছিল। যেসব জমিদারিতে কলোনি গড়ে উঠল সেই জমিদারও ছাড়বার পাত্র নন। তারা রাতে লেঠেল পাঠাত বসতি উৎখাতের জন্য। কলোনিবাসীরা লেঠেল বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সকলে একসাথে লড়াই করত। সবারই উদ্দেশ্য এক – আশ্রয়টুকু ধরে রাখা।


কলোনির পরিবেশ পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা পরিবেশ থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না। অন্তত খিদিরপুরের রুক্ষ কংক্রিট-সর্বস্ব পরিবেশের থেকে অনেক বেশি সহনীয় ছিল। গাছ গাছালি, মাঠ, পুকুর, টিনের চালার বেড়ার বাড়ি, মাটির মেঝে, সবই ছিল পরিচিত। ছিল না শুধু চাষের জমি এবং খাদ্য নিশ্চয়তা। সামর্থ্য অনুযায়ী অল্পেই সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল মায়ের কঠিন শৃঙ্খলায়, অনুশাসনে। ঘরে, বাইরে পিতৃস্থানীয়রা কলোনির ছেলেমেয়েদের ভালভাবে বড় হয়ে ওঠার এবং জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার "প্রাথমিক সূত্র" ধরিয়ে দিয়েছিলেন – "পড়াশুনা করে বৃহত্তর সমাজের দরবারে নিজেদের তুলে ধর"। কলোনির ঘরে ঘরে পড়াশুনার চল ছিল। "প্রাথমিক সূত্রের" জোরে আজ অনেকেই পৃথিবীর নানা দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে।


সকলের বেশিদূর পড়াশুনা সম্ভব হয় নি। আর্থিক অনটনের দরুণ বৃদ্ধ বাবা-মা'র ১৫ বছরের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে স্কুলের পড়া ছেড়ে আই.টি.আই-তে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছে। ১৯৫০-৬০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সারা ভারতের বৃহত্তম শিল্প কেন্দ্র। কারিগরি শিক্ষা শেষে চাকরি পেতে কারুর অসুবিধা হয় নি। স্কুলছুট হলেও উদ্বাস্তু প্রতিবেশীদের মধ্যে জোরালো সদ্ভাব অটুট ছিল। সদ্ভাবে ভাটা পড়েছে ১৯৮০-এর দশকের পরে।


কলোনির ভিতরে সবাই আমরা সমান ছিলাম, দু একটা পরিবার বাদে। কলোনি তৈরি হওয়ার আগেই ঐসব অঞ্চলে কিছু কিছু ব্যক্তিমালিকানার ঘর বাড়ি ছিল। সেসব বাড়ির ছেলেমেয়েরা আমাদের সঙ্গে বিশেষ মিশত না। তারা কলোনির স্কুলে – গরিবী চেতনার আতুরঘরে – পড়তে আসত না। তারা পড়ত সাউথ পয়েন্ট, তীর্থপতি ইন্সটিট্যুশনের মত স্কুলে। ছোট ছিলাম, এই বিভেদ বোঝার বুদ্ধি হয় নি। তাছাড়া এই সামান্য দু'একটা পরিবারের উন্নাসিকতা মনে কোন দাগও কাটেনি। এখন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি এটা ছিল সংস্কৃতির বিভেদ।


কিন্তু কলেজ জীবনে কলোনির বাইরে যখন পা বাড়ালাম তখন বুঝলাম বাঙ্গাল উদ্বাস্তুরা কলকাতার বনেদি মানুষের কাছে এক আজব প্রাণী। রানীকুঠিতে সরকারি আবাসনের পাশেই কলকাতার বনেদি কিছু পরিবারের ব্যক্তিগত বাড়ি আছে। সেই আবাসন ও বাড়িগুলো ১৯৭০-এর দশকে দেওয়াল ঘেরা এক বাদা জমিতে গড়ে ওঠে। সেই বাড়িগুলোর দুই মালিকের কথোপকথনে পার্শ্ববর্তী উদ্বাস্তুদের সম্বন্ধে তাঁদের দৃষ্টিকোণ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম। এক মালিক রানীকুঠি অঞ্চলে বাড়ি তৈরি করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তাঁর ধারণা একে কলোনি অঞ্চল, তার ওপর কচুবন, ঝোপঝাড়ে ভরা জায়গা নিশ্চয়ই শহুরে বাবুদের পক্ষে ভাল হবে না। তাকে আর এক মালিক অভয় দিয়ে বললেন "কচুবন কোথায়? সে তো বাঙ্গালরা খেয়েই সাফ করে দিয়েছে।" বাঙ্গালরা জঞ্জাল খেয়ে সাফ করে দিলে কলকাতার বাবুদের থাকতে আর বাধা কোথায়? কলকাতার উপকন্ঠে আমরা যেন কিছু অবমানব।


তারও আগে ১৯৬৯ সালে যখন এম.এ পড়ি তখন আরও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের এক বন্ধুকে বাক্য গঠনের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলার dialect-এর সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো বলেছিলাম। বন্ধুটি মজা পেয়ে সম্ভবত আমার অন্য সহপাঠীদের এবিষয়ে কিছু বলেছিল। একদিন উত্তর কলকাতার ফটফটিয়ে-ইংরাজি-বলা বনেদি বসু পরিবারের এক সহপাঠী আমাকে মাঠে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, "এই তুই না কী অনেক খিস্তি জানিস! আমাদের একটু শোনাবি?" প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হলেও খানিক্ষণ পরে বুঝেছিলাম সে পূর্ববঙ্গের dialect, যা তার ভাষায় "খিস্তি", শুনতে চায়। একে বাঙ্গাল, তাহে উদ্বাস্তু। তাদের মাতৃভাষা অন্য সংস্কৃতির দৃষ্টিতে হয়ে দাঁড়ায় "খিস্তি।" এখানেই তৈরি হয় একটা দূরত্ব। অবশ্য কলকাতার সব স্থানীয় মানুষই একরকম নয়। আমার অনেক বন্ধু ছিল, এবং এখনও আছে যারা আমার সহমর্মী, সমব্যথী। এমনই এক শ্রমিকদরদী, পরিবেশপ্রেমী বন্ধু বাংলাদেশী বা বাঙ্গালদের অতিথি পরায়ণতার কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন। মানব গঠন প্রক্রিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য হয়ত কলকাতার স্থানীয় মানুষদের দু'দলে বিভক্ত করে দিয়েছে। তাই সবাইকে একই চোখে দেখা সম্ভব নয়, উচিতও নয়।


তবুও একটা ভয় – আমার সংস্কৃতিকে খাটো হতে দেখার ভয় – সব সময় পিছু তাড়া করেছে একটা সময়। এখনও "হ্যাঁ", "দাঁড়িয়ে" প্রভৃতি বানান লিখতে গেলে চন্দ্রবিন্দু দিতে ভুলে যাই। অতীতের মাতৃভাষা-খিস্তির সাংস্কৃতিক সংঘাত ভুলতে পারি নি। সন্দেহ হয় কোন অস্তিত্বটা আমার। আমি কোন উচ্চারণে কথা বলব? আমার বাঙ্গাল উচ্চারণে কথা বললে কেউ বুঝে নেবে না কেন? আমি কী পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বাঙাল-উদ্বাস্তু না কী কলকাতারই একজন?


যৌবনে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই মনে পড়ে যেত গুরুজনদের উপদেশাত্মক "প্রাথমিক সূত্র।" সঙ্গে যোগ করে নিয়েছিলাম উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং জীবনে বন্ধুর পথ অতিক্রম করার সঙ্কল্প। এটা আমার একার নয়, প্রায় সকলেই জানত পরভূমে শিরদাঁড়া শক্ত করে না দাঁড়ালে ছাগলে মুড়ে খাবে। তাই একদিকে লেঠেল তাড়িয়ে আশ্রয় সুনিশ্চিত করার সংগ্রাম, আর এক দিকে বৃহত্তর সমাজের মোকাবিলার জন্য উদ্বাস্তুদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিকল্প ছিল না।


উদ্বাস্তুদের সমষ্টিগত সংগ্রামের মাধ্যমেই ১৯৫০ সালে গড়ে উঠেছিল বাস্তুহারা পরিষদ। এই পরিষদেরই পরবর্তী রূপান্তর ইউনাইটেড সেন্ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিল (ইউ.সি.আর.সি)। কলকাতা ও ২৪-পরগনার বিভিন্ন বাস্তুহারা সংগঠন – নিখিল বঙ্গ বাস্তুহারা কর্ম পরিষদ, দক্ষিণ কলিকাতা শহরতলী বাস্তুহারা সমিতি, উত্তর কলিকাতা বাস্তুহারা সমিতি ইত্যাদি – একত্র করে এই কাউন্সিল গঠিত হয়। ইউ.সি.আর.সি-র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কলোনিবাসীর জমির অধিকার স্বীকৃত হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩৫ বছর। ১৯৮৫ সালে উদ্বাস্তুদের রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন দফতর থেকে জমি অধিকারের অর্পণপত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই জমির মালিকানাও দেওয়া হয়। তখন থেকেই উদ্বাস্তুদের গোষ্ঠী বাঁধুনিটা অনেক আলগা হয়ে এল। কারণ, এতগুলো বছরে উদ্বাস্তু পরিবারের অনেক যুবক উচ্চশিক্ষা বা কারিগরিবিদ্যা অর্জন করে নিজেদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করে ফেলেছিল। তখন আর পাশের বাড়ির মাসিমার কাছে আটা ধার করার প্রয়োজন নেই। আর যারা এভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি, তারা জমির মালিকানার সুযোগ নিয়ে নিজেদের জমির ওপর পাঁচতলা বাড়ি প্রমোট করে দেদার টাকা আয় করতে লাগল। এইসব বাড়িতে যেসব নতুন মানুষ এল, তারা কলোনির অতীত সংগ্রামী দিনগুলোর কথা জানে না। তারা কেউ কারুর সমব্যথী নয়।


উদ্বাস্তু হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা এলাম তারা একাধিক অর্থে ছিন্নমূল চরিত্র। জন্মভূমি থেকে ছিন্ন। স্থাবর সম্পত্তি, কৃষি জমি থেকে উচ্ছিন্ন। পূর্ববঙ্গের সমাজ সংস্কৃতি বিসর্জন। জন্মভূমি, পুরনো সংস্কৃতি ছেড়ে যখন এলাম তখন কলকাতায় খুঁটি গাড়লাম কী গুজরাতে বা কর্ণাটকে, তাতে কী এসে যেত? সব জায়গাতেই সংস্কৃতির সংঘাত হত। আমাদের মাতৃভাষার জায়গা কলকাতাতেই আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যথার জায়গা পরিচয় সঙ্কট। আমরা কোথাকার মানুষ? ১৯৪৭-এর আগে ছিলাম ভারতবর্ষে। ১৯৫০–এ আবার এলাম ভারতবর্ষে। এটা প্রহসন ছাড়া আর কী?

No comments:

Post a Comment