বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে কক্সবাজারের বিভিন্নস্থানে শুরু হয়েছে পাহাড় কাটার মহোত্সব। ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ৩৭টি পাহাড় কেটে প্রায় সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। এর আগে গত এক বছরে একই এলাকার প্রায় ১৫টি পাহাড় কেটে সমতল জমি তৈরি করা হয়েছে। ওইসব পাহাড়ের চিহ্নও এখন আর অবশিষ্ট নেই। উপরন্তু গত মাসখানেক ধরে ৩৯টি পিকআপ নিয়ে বন বিভাগের মালিকানাধীন ৩৭টি পাহাড় কেটে চলেছে একটি চক্র।
স্থানীয়রা জানান, জনৈক ওবায়দুল করিমের নেতৃত্বে ২১ জনের একটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা এসব পাহাড় নিধন করছে। তারা ইতোমধ্যেই পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের ভাগ পাচ্ছে ভুয়া পরিবেশবাদী সংগঠন, ভুয়া সাংবাদিক, স্থানীয় চাঁদাবাজসহ আরো কয়েকটি স্তরের লোকজন। যার কারণে দিনে ও রাতে প্রকাশ্যে পাহাড়ের মাটি নিয়ে ৩৯টি অবৈধ পিকআপ নির্বিঘ্নে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে। কেবল মাসোহারা লেনদেনে বনিবনা না হলেই মাঝে মধ্যে মাটি ভর্তি গাড়ি ধরা হয় বলে জানিয়েছে খোদ পাহাড় ধ্বংসকারীরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে–পাহাড় নিধনকারীদের দমনে তারা এক প্রকার অসহায়। মামলা দিয়েও তাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের তোতুকখালী, মাঝেরপাড়া, কাওয়ারপাড়া, ছয় ভাইয়েরপাড়া, জুমছড়ি, পাতলী, মাছুয়াখালী, ধাউনখালী, পুতিরমারঢালা, চেরাংঘর, উসমানেরঢালা, পরানিয়াপাড়া, পুরাকাটা, সিকদারঘোনা, টাইমাঝিরঘোনা, কাঠালিয়ামোরা, সিকদারপাড়া, ঘাটকুলিয়াপাড়া, টাইমোহাম্মদেরঘোনা, সাতঘরিয়াপাড়া, ছনখোলা, নয়াপাড়া, ঘোনারপাড়া, মালিপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাদলিয়াপাড়াসহ ২৯টি এলাকার ৩৭টি পাহাড় নিধন চলছে প্রকাশ্যে। পাহাড়গুলোতে দিনরাত পিকআপ লাগিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কক্সবাজার শহরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায়। পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নিচু এলাকা। প্রকাশ্যে পাহাড় নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএমখালীর ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আকরাম আলী বলেন, 'গত এক বছরে ৭/৮টি মামলা দিয়েছি, ৫টি গাড়ি জব্দ করেছি। এরপরও পাহাড় কাটা রোধ করা যাচ্ছে না।'
তিনি আরো বলেন, 'পাহাড় নিধনকারীরা বনকর্মীদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অভিযানের সময় আমাদের উপর হামলা চালায়। জনবল না থাকায় অভিযান চালাতেও সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আমরা এক প্রকার অসহায়।'
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শাহ-ই-আলম বলেন, 'পাহাড় নিধনের এমন খবর আমার কাছে ছিল না, আমাকে কেউ তা জানায়নি। খবর পেয়ে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে মাটিসহ ট্রাক জব্দও করেছি।'
এবিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, 'পিএমখালী'র প্রায় সব পাহাড়ই মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সেখানে অভিযান চালিয়ে পিকআপ আটক করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে ৪/৫টি। এখন হয়তো আবারো তারা পাহাড় কাটায় নেমেছে। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।' অবৈধ এসব পিকআপ কীভাবে মাটি পরিবহন করছে জানতে চাইলে কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের অন্যতম পরিদর্শক আবদুর রব এসব পিকআপ আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে মন্তব্য করেন।
No comments:
Post a Comment