জঙ্গী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া- প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন
- হারুন চৌধুরী ওয়াশিংটন থেকে
Janakantha
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশে কোথায় কি ঘটছে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের মাঝে। অনেকেই এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে দেশে আসতে উদ্বিগ্ন বোধ করেন।
সম্প্রতি দেশে কয়েকটি নৃশংস ঘটনা ঘটে গেছে। দিনে-দুপুরে আশুলিয়ায় দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি। অপরটি ঢাকার দিলু রোডে জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলি। আরও কয়েকটি অঘটন পুলিশের নাকের ডগায় ঘটে গেছে। অপর দুটি ঘটনা ঘটেছে শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র টিএসসির সম্মুখে। অভিজিৎ হত্যা ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন নারীর ওপর বখাটেদের শ্লীলতাহানি। এখনও পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই অপরাধীদের গ্রেফতারে কোন কুলকিনারা করতে পারেনি। দেশের নিরীহ মানুষ চেয়ে আছে রাষ্ট্রের দিকে।
নারীর ওপর হামলার কারণে দেশ ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সন্ত্রাসীরা থানা পুলিশকে ভয় পায় না। ওরা জানে, পুলিশ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। মানুষ হত্যা করে ওরা পার পেয়ে যায়। আদালতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শত শত খুনের মামলা ঝুলছে। জনবলের অভাবে মামলা নিষ্পত্তিও হয় না। ব্রিটিশ আমলের প্রচলিত আইনে দিনের পর দিন বাদী কোর্ট-কাচারির শরণাপন্ন হলেও মামলার কোন নিষ্পত্তি হয় না। বাদী এক পর্যায়ে নিরাশ হয়ে বিচারের আশা ছেড়ে দেন। খুনীরা পার পেয়ে যায়। অপরাধী ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধে লিপ্ত হয়।
২৬ এপ্রিল ২০১৫ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সংবাদ, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দেশের আদালতগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ মামলার জট রয়েছে। এর ৬০ ভাগই ভূমি বিষয়ক মামলা। তিনি দুঃখ করে বলেন, মামলার এ জট না কমার পেছনে বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ের অভাব দায়ী। তাছাড়া বিচারকের অভাবে দেশের বিভিন্ন শ্রম আদালতে ১৭ হাজার মামলা ঝুলে আছে বছরের পর বছর। (১ মে ২০১৫, জনকণ্ঠ)।
আমেরিকার ভার্জিনিয়ার আদালতপাড়ায় ঘুরে দেখেছি, মামলা কত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। আদালতে এত লোকের সমাগম নেই। নেই কোন হৈ চৈ। কেউ অপরাধ করলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে। এফবিআইর কাছে অপরাধ স্বীকার করলে আদালত তার সাজা কমিয়ে এনে লঘুদ- দেয়। এতে এফবিআইকে অপরাধীর অপরাধ স্বীকার করায় বেগ পেতে হয় না বলে আদালত এই লঘুদ-ের বিধান রেখেছেন। আর যদি কেউ মিথ্যার আশ্রয় নেয়, কেউ অপরাধ করলে এফবিআইকে হয়রানি করলে যদি দোষ ধরা পড়ে, তার দ- হয় দ্বিগুণ।
আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে যে ডাকাতি ঘটেছে, পত্রপত্রিকার সংবাদে জানা যায়, তা ছায়াছবির দৃশ্যের মতো। ডাকাতির ধরন ও জনতার হাতে আটক ডাকাতের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু জেহাদী বই জব্দ করেছে। অভিজিৎকে যারা বইমেলা থেকে ফেরার পথে হত্যা করেছে, তাদের ধরনও জেহাদী। পহেলা বৈশাখে যে সব বখাটে নারীর গায়ে হাত তুলেছে, সেখানে সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে মনে হয়, এরাও জেহাদী। কারণ এরা বাংলা নববর্ষে বিশ্বাস করে না। এরা বৈশাখী মেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বন্ধ করতে চায়। ফেসবুকেও এই জেহাদীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে।
র্যাব গঠন করার পর সন্ত্রাসীরা একমাত্র র্যাবকে ভয় পায়। বর্তমানে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, র্যাবের কর্মতৎপরতায় ভাটা পড়েছে। তাই জঙ্গী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলার জন্য নতুন নতুন কৌশল বেছে নিচ্ছে। ওরা মানুষ খুন করতে দ্বিধাবোধ করে না। ওরা এখন ব্যাংক ডাকাতি করে অর্থ উপার্জন করছে। এই জেহাদীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা। পত্রপত্রিকার পাতা ওল্টালেই এখন শুধু নৃশংস খুনের ঘটনার খবর ছাপা হয়। তবে সরকারের এসব দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের বাঁচিয়ে রাখার কোন যুক্তি নেই। এরা সমাজের আবর্জনা। তবে দুঃখÑ এই দেশের এমন কয়েকটি নৃশংস ঘটনা ঘটে গেল, দেশের বুদ্ধিজীবীরা এর কোন প্রতিবাদও করল না। এরা নিশ্চুপ কেন?
র্যাবের ক্রসফায়ারে দুর্ধর্ষ ডাকাত, সন্ত্রাসী মারা গেলে তারা তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে প্রশ্ন তুলে সোচ্চার হয়। বিদেশ থেকে হিউম্যান রাইর্টস গ্রুপ সরকারের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে চাপ সৃষ্টি করে। এখন প্রশ্ন এসে যায়, বর্তমানে যে কয়জন মানুষ বিনা অপরাধে খুন হলো, তাদের পরিবারের মানবাধিকার কোথায়? স্বজন হারানোর বেদনায় তারা শোকাহত। তারা কী এই অপরাধের বিচার পাবে? এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে কত বছর লাগবে?
র্যাবের ভাবমূর্তি নিয়ে দেশে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সচেতন মহল প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বিএনপির শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশে তার দলের সন্ত্রাসীদের কর্মকা-ে অতিষ্ঠ হয়ে সন্ত্রাস দমনে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) গঠন করেন। এমন একটি সময় ছিল, যখন দেশের মা-বোনেরা স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারতেন না। বাড়ি তৈরি করতে হলে চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে মানুষ খুন করত। মহিলারা স্বাধীনভাবে রিক্সায় চলাফেরা করতে পারত না। আচমকা গলার চেন টান দিয়ে ছিনতাই করে নিত। প্রাণের ভয়ে কেউ মুখ ফুটে চিৎকারও দিতে পারত না। প্রতিনিয়তই পত্রিকার পাতায় খুনের ঘটনা ছাপা হতো। গডফাদাররা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরাধী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে আইনের ফাঁকফোকরে এরা জামিন পেয়ে যেত। র্যাব গঠন করার পর সাধারণ নিরীহ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে আরম্ভ করে। নারীরা আবার স্বাধীনভাবে বাইরে চলাফেরা করতে শুরু করে।
আজ র্যাবকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য একশ্রেণীর মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে র্যাবের মধ্যে কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। সেজন্য গোটা বাহিনীকে দোষ দেয়া যায় না। সন্ত্রাসীরা ভেবেছিল, র্যাব বিলুপ্ত হলে যারা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা আবার দেশে ফিরবে। আসলে তাদের সে আশায় গুড়েবালি। র্যাব বিলুপ্ত না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। একটা পাগলা কুকুর যদি দশটা মানুষকে কামড়িয়ে আহত করে, তার আগেই সে পাগলা কুকুরটাকে যদি মেরে ফেলা হয়, তাতে কী মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়? দেশের নিরীহ মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। হ্যাঁ, সে কাজটাই করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে কেন বিএনপির পক্ষ থেকে র্যাব বিলুপ্তির দাবি ওঠে?
বিশ্বের অনেক দেশই তার দেশের মানুষের জানমালের রক্ষার্থে বিশেষ বাহিনী গঠন করেছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস। যুক্তরাজ্যে স্কটল্যান্ডইয়ার্ড, রাশিয়ার কেজিবি, ভারতের র, পাকিস্তানের আইএসআই। চীন, জাপান, ফিলিপিন্স ও উত্তর কোরিয়াসহ অনেক দেশে তাদের নিজস্ব বিশেষ বাহিনী রয়েছে। কিছুদিন আগে বাসে নাশকতায় ককটেল বোমায় অনেক নিরীহ লোকের প্রাণ গেল। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ রোগীদের চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল। দুঃখের বিষয়, খালেদা জিয়া হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে একবারও সমবেদনা প্রকাশ করেননি। আমাকে খেটে-খাওয়া এক রিক্সাওয়ালা প্রশ্ন করল, খালেদা জিয়া কাদের নেত্রী? একবারও তো টিভিতে দেখলাম না পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হওয়া রোগীদের তিনি হাসপাতালে দেখতে গেছেন?
জঙ্গীদের অনেক ক্ষোভ রয়েছে জনকণ্ঠের ওপর। কারণ জনকণ্ঠই সর্বপ্রথম 'তুই রাজাকার' শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রচার করে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পেরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তোলে। আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির হত্যাকা-ে প্রতীয়মান হয়, গ্রেনেড ও অস্ত্রশস্ত্রের যোগান দিচ্ছে পাকিস্তান। পরিকল্পনাও তাদের (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৪.৪.২০১৫)। কারণ বাংলাদেশকে পাকিস্তানের জঙ্গীরা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এবং ভারতের কাশ্মীর সীমান্ত রুটকেই জঙ্গীরা বেছে নিয়েছে। এই রুট বন্ধ করতে হবে। আর বাংলাদেশের জঙ্গীদের সাহায্য করছে ভারতের উগ্রপন্থী ইসলামিক জঙ্গীরাও। অতএব সবাই সাবধান।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা
No comments:
Post a Comment