নানা দুর্বলতার সুযোগে কালো টাকার অবাধ পাঁচার
দেশে কালো টাকা বলে কোনো টাকা নেই। যে টাকাকে কালো টাকা বলা হচ্ছে তা বিদেশে পাঁচার করে সাদা করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেভাবেই টাকা আয় করুক তাদের বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে' -কালো টাকার পক্ষে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে বর্তমান সংসদেরই একজন সদস্য এভাবেই কালো টাকার পক্ষে সাফাই গাইলেন। অথচ ২০১৪ সালের ২০ জুন সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) এর 'ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩' প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয় - ২০১২ এর তুলনায় ৬২ শতাংশ বেড়ে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের ৩,১৬২.৭২ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিক, আমলাসব ব্যবসায়ীদের সকল অবৈধ অর্থের নিরাপদ জিম্মাদার হিসাবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষিতে তারা ২০০২ সাল থেকে দেশভিত্তিক জমাকৃত কালো টাকার পরিমাণ প্রকাশ করতে থাকে। এতে দুর্নীতিবাজরা তাদের আমানত উঠিয়ে নিতে শুরু করে এবং ২০০৮ থেকে সুইস ব্যাংকগুলোতে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমলেও আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশ থেকে পাঁচারকৃত অর্থের আমানত বাড়ছে। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইস ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ পাঁচারকৃত মোট অর্থের পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সন্দেহজনক বা কালো টাকার পাঁচার সম্পর্কিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়,বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৭৮০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পাঁচার হয়। ২০০৩-২০১৪ সময়কালে প্রতি বছর গড় বৃদ্ধির হার ২৮.৮৫% হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৮.৪১ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা পাঁচার হয়, যা থেকে সরকার কমপক্ষে প্রায় ৩৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারতো। উপরের মোট প্রাক্কলনে বেনামে বা অন্য কোন দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের নামে গচ্ছিত অর্থ বা মূল্যবান গহনা ও দূর্লভ সামগ্রীর মূল্য অন্তর্ভুক্ত করায় এ হিসাব খুবই কম। মূলত ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে ব্যাপকভাবে অর্থ পাঁচার হলেও ২০১১ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ২০১২ সাল থেকে কয়েক গুণ বেশি এবং ২০১১ এর তুলনায় ২০১৪ সালে ৫ গুণের বেশি কালো টাকা বিভিন্ন দেশে পাঁচার হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকেই শেয়ার বাজার, সোনালি ও বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়াত্ব এবং বেসরকারি ব্যাংক থেকে বর্তমান প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ সহ বিভিন্ন কোম্পানির হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটতে শুরু করে, যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। আয়কর বিভাগের তথ্যমতে, এসব টাকা কারো নামে জমা হয়নি। তাহলে এতো টাকা গেল কোথায় ? এটা পরিস্কার যে, ২০০৩-২০০৫ সময়কালের তুলনায় বর্তমানে প্রভাবশালীরা কয়েক গুণ বেশি কালো টাকা বিদেশে পাঁচারের সাথে জড়িত।
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত পাঁচারকৃত অর্থে কানাডায় 'বেগমপাড়া' সহ, আমেরিকা, দুবাই, ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকে, মালয়েশিয়া এবং ভারতে নাগরিকত্ব গ্রহণ বা ' সেকেন্ড হোম' বা ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে করতে প্রকৃত কি পরিমাণ অর্থ পাঁচার করা হয়েছে তার প্রকৃত হিসাব রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বার্থে জানা জরুরি। এর আগে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী সহ প্রায় ২০জন বাংলাদেশি বড় ব্যবসায়ী নিজ নামে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে 'কর স্বর্গ' বলে পরিচিত যেমন জার্সি দ্বীপ এবং বৃটিশ ভার্জিন দ্বীপসমূহে অর্থ পাঁচার করা হয় বলে সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছিল। (নিউ এজ, জুলাই ২০১৩)।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাক্তন ৭জন মন্ত্রী-এমপির প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত বা অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্য মতে,বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে, ১০ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ট্রান্সফার প্রাইজিং (কম মূল্যে আমদানি দাম দেখানো) এবং অন্যান্য অবৈধ উপায়ে আরো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাঁচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূদ্রানীতি অনুযায়ী ৫ হাজার ডলার বেশি অর্থ পাঠানো যায়না। চিকিৎসা বা শিক্ষা ব্যয়ের জন্য বিদেশে টাকা পাঠাতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রশ্ন হলো এতো টাকা তাহলে পাঁচার হলো কিভাবে? দুদক, এনবিআর বা বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার হলো? গত ৬ বছরে দুদককে অকার্যকর করে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করার মাধ্যমে ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতিবাজদের দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট প্রদানের কারণেই কি অবাধে কালো টাকা উপার্জন এবং বিদেশে তা পাঁচারের সুযোগ করে দেয়া হয়? এর প্রধান দায় সাবির্কভাবে সরকার এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুদকের।
নানা চাপে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেয়, অন্যদিকে মানি লন্ডারিং আইন শক্তিশালী না করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োগ না করার কারণে শেয়ার বাজার লুটপাট, চাঁদাবাজি-কমিশন বাবদ অবৈধভাবে জমাকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচারের পথ খুলে দেয়া হয়। মালয়েশিয়া (সেকেন্ড হোম প্রকল্প ও ব্যবসা), বৃটেন, সুইজারল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র, হংকক, দুবাই,রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কোটি কোটি ডলার জমা করছে। বিভিন্ন তথ্য মতে, আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৫০টি ব্যাংকের মাধ্যমে নানাভাবে টাকা লেনদেন হয়। আর সুইস ব্যাংক হলো এসবের প্রধান সিন্ডিকেট। যে টাকার কথা বলা হচ্ছে তা নগদ টাকা। এছাড়া বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ব্যবসার মাধ্যমে আরো অন্তত তিন লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আরেকটি চক্র বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দিয়ে দেশে টাকায় দায় শোধ করা হয়; তেমনি বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছেনা, যেগুলো কোন না কোন বিদেশি ব্যাংকে জমা হচ্ছে। আর ২০১৪ এর ৫ ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাবসায়ীরাও বিনিয়োগ না করে নিরাপত্তার নামে বিদেশে অর্থ পাঁচার করছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ এর শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তি। যার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৮৭ জন, বিএনপি-জামায়াতের ৯৬ জন এবং বাকি ২৬৫ জন সুবিধাভোগী শিল্পপতি,ব্যবসায়ী ও আমলা। আর এদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে মালয়েশিয়া। এর পরেই রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যেও বেশ কয়েকটি দেশ। উল্লেখ্য,২০০৭ সালে ১৪৯ জন, ২০০৮ সালে ৬৮ জন, ২০০৯ সালে ৮৬ জন;২০১০ সালে ৭৪ জন; ২০১১ সালে ২৭৬ জন; ২০১২ সালে ৩৮৮ জন এবং ২০১৩ এর জুন পর্যন্ত ৯৪ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট গঠনের পর অবৈধভাবে কিভাবে দেশের বাইরে অর্থ পাঁচার হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, 'মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম' প্রকল্পের আওতায় ২০০৭-২০১৩ এর জুন পর্যন্ত ১,০১২ জন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং আমলা বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে।
দেশের প্রচলিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনেই পাঁচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডসহ ১৪৭টি দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা 'এগমন্ট গ্রুপ' এর সাথে ২০১৩ এর জুলাই এ চুক্তি স্বাক্ষর করায় টাকা পাঁচারের তথ্য সহজে পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সন্দেহবাজদের সুনির্দিষ্ট নাম দিয়ে তথ্য চাইতে হবে। এক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডসহ সম্ভাব্য পাঁচারের অর্থ জমা আছে এমন দেশগুলোর সাথে চুক্তি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ১৭টি দেশের সাথে এ ধরনের চুক্তি করেছে। তাছাড়াও, আন্তর্জাতিকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে 'ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)' এর আওতায় 'এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)' এগমন্ট গ্রুপের আওতায় বিভিন্ন দেশকে পাঁচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। উল্লেখ্য, ভারতের নতুন সরকার কালো টাকা তদন্তে বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে। সুইস সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে যে, সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের হিসাবের তালিকা ভারত সরকারকে প্রদান করবে এবং তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে। ভারত এবং সুইজারল্যান্ডের মধ্যকার কর সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদন দেয়ায় ভারত সরকারের সুইস ব্যাংকের গোপন হিসাবে যেসব ভারতীয় কর - ফাঁকি এবং কর প্রতারণার মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অবৈধ অর্থ গচ্ছিত রেখেছে সে সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্তি এবং তা উদ্ধারে সুইস সরকারের সহায়তাও পাবে। এসব পাঁচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা দুদকের এ সংক্রান্ত আইন বা চুক্তি না থাকার অজুহাত দেখানো বা কোনো ধরনের গড়িমসির সুযোগ নেই। পাঁচারকৃত অর্থ উদ্ধার তখনি সম্ভব হবে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক নিরপেক্ষভাবে এবং দুদক দলবাজি অবস্থান থেকে সরে পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাদেশ সরকার চাইলে তথ্য বিনিময় এবং পাঁচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতি নির্ধারণে সুইস সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে পারে। তাছাড়াও জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষর করায় বাংলাদেশ সকল প্রকার দুর্নীর্তির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকার উৎস বন্ধ এবং সুইস ব্যাংক সহ 'কর-স্বর্গ' বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত সকল অবৈধ অর্থ উদ্ধারে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং দুদকের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা সাংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে,'রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুর্পাজিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবে না' বলে সুস্পষ্ঠ নির্দেশনা রয়েছে। ভারতের নির্বাচিত নতুন সরকার পাঁচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারলে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই কেন?
2015-03-25 8:31 GMT+06:00 Isha Khan <bdmailer@gmail.com>:সেকেন্ড হোমে রাজনীতিকরাবিদেশে বাড়ির মালিক ৩৮৩ জন, আওয়ামী লীগ ২৮৭ বিএনপি ৯৬
বিদেশে সেকেন্ড হোম নিয়েছেন এমন ৬৪৮ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুই সংস্থা। ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এক উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে দুদকের তিন সদস্যের বিশেষ টিম প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। যোগাযোগ করা হচ্ছে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গেও। পাশাপাশি একই তালিকা ধরে তদন্ত চালাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ তালিকাভুক্তদের মধ্যে রাজনীতিক আছেন ৩৮৩ জন এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী আর ব্যবসায়ী ২৬৫ জন।
তালিকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সংখ্যাও আলাদা করা হয়েছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে ২৮৭ এবং বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ৯৬ জন বাংলাদেশের বাইরে সেকেন্ড হোম রেখেছেন। জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া তথ্যানুসারে গত এক যুগে সেখানে সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫ জন বাংলাদেশি। তাদের প্রত্যেককে মালয়েশিয়ায় ১০ বছরের জন্য নন-মালয়েশিয়ান হিসেবে ভিসা নিতে কমপক্ষে প্রায় ১ কোটি টাকা করে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় করতে হয়েছে। সে হিসেবে শুধু মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় কোনো দেশে বিনিয়োগ বা অন্য কোনো কারণে এত টাকা নিয়ে যাওয়ার কোনো আইনি সুযোগই নেই। তাই পুরোটাই গিয়েছে অবৈধ হুন্ডি বা অন্য অবৈধ উপায়ে। সেকেন্ড হোম গড়তে আগ্রহীদের কাছে মালয়েশিয়া ছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্য কানাডা।
সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে তালিকায়। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়ামে অনেক রাজনীতিকের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। কেউ কেউ সেসব দেশের নাগরিক। রয়েছে অল্টারনেটিভ পাসপোর্ট। এভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলেছেন অনেকেই।মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রজেক্টের (এমএমটুএইচ) ২০১৪ সালের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে আবেদন করেছেন ২, ফেব্রুয়ারিতে ২৬, মার্চে ৩৫, এপ্রিলে ২০, মে-তে ২৯, জুনে ৯, জুলাইয়ে ৯, আগস্টে ৯, সেপ্টেম্বরে ৩৫, অক্টোবরে ১৪, নভেম্বরে ২১, ডিসেম্বরে ৪১ জন। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশ হচ্ছে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। শীর্ষে চীন, দ্বিতীয় জাপান।
এরপর কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের অবস্থান। ২০১৪ সালের শীর্ষ ১০ তালিকায় ভারত নেই। তালিকা অনুসারে জানা যায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রজেক্ট প্রথম চালু হয় ২০০২ সালে। প্রথমবার কোনো বাংলাদেশি সেখানে আবেদন করেননি। ২০০৩ সালে প্রথমবার বাংলাদেশিরা আবেদন করেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত মোট আবেদন করেছেন ৩ হাজার ৫ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ২৫০, ২০১৩ সালে ২৮৫, ২০১১ সালে ২৭৬, ২০১০ সালে ৭৪, ২০০৯ সালে ৮৬, ২০০৮ সালে ৬৮, ২০০৭ সালে ১৪৯, ২০০৬ সালে ৩৪১, ২০০৫ সালে ৮৫২, ২০০৪ সালে ২০৪ ও ২০০৩ সালে ৩২ জন আবেদন করেন। সূত্রমতে, দুদকের অনুসন্ধান চালানো কর্মকর্তারা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন। তালিকা ও প্রাপ্ত পরিসংখ্যান নিয়ে তারা পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকার পরিবর্তনের সময়গুলোয় আবেদনের হিড়িক পড়ে যায়।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ছয় বছরে মোট আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৩৫৯টি। ওয়ান-ইলেভেনে দুই বছরে আবেদন করেছিলেন ২১৭ জন। এর আগে বিএনপি-জামায়াতের চার বছরে আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার ৪২৯টি। সূত্রমতে, দূদকের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের অনুমোদনের জন্য একটি ফাইলও প্রস্তুত করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে মালয়েশিয়া সফরেও যাবেন দুদক প্রতিনিধিরা। জানা যায়, মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এমএমটুএইচ প্রজেক্টের মালয়েশিয়ার বাইরে কোনো অনুমোদিত এজেন্ট নেই। কিন্তু দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় এমএমটুএইচের বাংলাদেশে সাব-এজেন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন শুরু হয়।
উত্তরার এক সাব-এজেন্টের কার্যালয়ে সেকেন্ড হোমের আগ্রহ জানানো হয়েছে, বিশ্বের তৃতীয় সাশ্রয়ী অবসরকালীন অভিবাসন সুবিধা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম। ১০ বছরের জন্য নন-মালয়েশিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে বাংলাদেশি ৫০ বছরের অনূর্ধ্বদের অ্যাকাউন্টে জমা থাকতে হয় ৫ লাখ রিঙ্গিত বা ১ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং মালয়েশিয়ার ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে হয় ৬৫ লাখ টাকা। ৫০-ঊর্ধ্ব বয়সীদের জন্য অ্যাকাউন্টে থাকতে হবে সাড়ে ৩ লাখ রিঙ্গিত বা ৭৫ লাখ টাকা। মালয়েশিয়ায় ফিক্সড ডিপোজিট করতে হবে ৩২ লাখ টাকা। তবে উভয় ক্ষেত্রে মাসিক আয় হতে হবে কমপক্ষে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে এত টাকা মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে পাঠানোর উপায় নেই জানালে বাংলাদেশি এক সাব-এজেন্টের উত্তর- 'টাকা পাঠানোর চিন্তা আমাদের। দেশের ভিতরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় টাকা পাঠাতে যে সময় লাগে তার চেয়ে ১০ গুণ কম সময়ে পাঠানো হবে।'
মতিঝিলের আরেক সাব-এজেন্টের বক্তব্য- 'আপনি মালয়েশিয়ায় কারও কাছে ফোন করলে রিং বাজার আগেই তার কাছে টাকা পাঠানো যাবে।'সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার আমপাং, মালাক্কা, কোচাইলামা, ক্যামেরন হাইল্যান্ড ও শাহ-আলম শহরে বাংলাদেশিরা বাড়ি কিনে বসবাস করছেন। মালয়েশিয়ার আমপাং শহরের বাসিন্দা ও বাংলাদেশের অধিবাসী ডা. হুমায়ুন কবির জানান, আড়াই বছর আগে তিনি মালয়েশিয়ায় আসেন। সেকেন্ড হোমের জন্য প্রতি তলায় দেড় হাজার বর্গফুটের স্পেসসহ বাড়ি কিনেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার রিঙ্গিত দিয়ে। বাংলাদেশি টাকায় দাম ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তিন তলা ভবনের দোতলায় তিনটি রুম ও তৃতীয় তলায় দুই বেড ও একটি গেস্ট রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমের সঙ্গে রয়েছে বাথ ও টয়লেট আলাদাভাবে। নিচ তলায় রয়েছে ড্রইংরুম, কিচেন, ডাইনিংরুম ও সার্ভেন্টরুম। বাড়ির সামনে রয়েছে গার্ডেন ও কার পার্কিং। দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, 'মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে অবৈধভাবে অর্থ পাচার বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এরই মধ্যে আমরা বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। আশা করা হচ্ছে অবৈধভাবে বিনিয়োগকারীদের ধরতে আগামী তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে।' তিনি বলেন, 'দুদক জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন আনকাকের সদস্য। সে সূত্রেই মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে আমরা ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রিপরিষদেও এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি জুনের মধ্যেই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে।'
http://www.bd-pratidin.com/lead-news/2015/03/25/70641
My father Pulin Babu lived and died for Indigenous Aboriginal Black Untouchables. His Life and Time Covered Great Indian Holocaust of Partition and the Plight of Refugees in India. Which Continues as continues the Manusmriti Apartheid Rule in the Divided bleeding Geopolitics. Whatever I stumbled to know about this span, I present you. many things are UNKNOWN to me. Pl contribute. Palash Biswas
Friday, April 10, 2015
শত শত রাজনীতিকের সেকেন্ড হোম-ই বিদেশে !!
সেকেন্ড হোম বিদেশে
... . মুহাম্মদ ইউসুফ
শত শত রাজনীতিকের
সেকেন্ড হোম-ই বিদেশে !!
স্বদেশপ্রেমে হেঁচকি তোলেন
উচ্চস্বরে মাইক ফাটান
নকলসুরে বুক ভাসান স্বদেশে !!
দেশসেবা চাষ করে
অভিনয় প্রতিভায় !
পুঁজিব্যাগ ফুলে ওঠে
ফেঁপে ওঠে, গতি পায় !!
স্বদেশপ্রেমের হাঁট বসেছে
আয় নেতারা আয় !
কেজি'র মাপে বিক্রি হবে
পুঁজির ইশারায় !!
০৬-০৪-২০১৫
ঢাকা, বাংলাদেশ ।
2015-03-25 18:15 GMT+06:00 Isha Khan <bdmailer@gmail.com>:

No comments:
Post a Comment