'ওয়াক ফ্রি' নামের এই সংগঠনটি 'আধুনিক দাসত্ব' নিয়ে বৈশ্বিক সূচক সোমবার প্রকাশ করেছে, যাতে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম।
ওয়াক ফ্রি'র সূচকে সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্রীতদাস ভারতে এবং জনসংখ্যার শতকরা হারে আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্রীতদাস দেখানো হয়েছে।
বিশ্বে ক্রীতদাস প্রথার অবসান ঘটলেও ঋণের জালে আটকানো, জোরপূর্বক শ্রম, অর্থের বিনিময়ে যৌন চাহিদা মেটানো ও জোরপূর্বক বা বাধ্যতামূলক বিয়ে এবং ভিক্ষার পাশাপাশি ইটভাটা, চিংড়ি শ্ল্পি ও গার্মেন্টে কর্মরতদের দাসের তালিকায় ফেলা হয়েছে এই সূচকে।
বিশ্বের ১৬৭টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে সবগুলোতেই ক্রীতদাসত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতেই এ সমস্যা বেশি এবং ইউরোপে অনেক কম বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬ লাখ ৮০ হাজার ৯০০ মানুষ 'আধুনিক দাসের' জীবন যাপন করে।
'দাসত্বের' বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ওয়াক ফ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক নিপীড়নের বিষয়গুলো সামনে আসে। শ্রমিকদের কম বেতন দেওয়া, অতিরিক্ত কর্ম ঘণ্টা ও নিরাপত্তাহীনতার মতো বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাত চিংড়ি শিল্পে একই ধরনের শ্রম শোষণ রয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি খাতের শ্রমিকরা ঋণগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাদের দৈনিক বেতন এক ডলারেরও কম, কর্মঘণ্টাও বেশি, রয়েছে শিশু শ্রম।

কয়েক বছর আগে সাভারের একটি ইটভাটা থেকে উদ্ধার শেকলবন্দি কয়েকজন
বাংলাদেশে নির্মাণ শিল্পে জোরপূর্বক শ্রম রয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আনুমানিক আট হাজার ইটভাটায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ কাজ করেন। নারী ও শিশুদের শিকল দিয়ে বেঁধে ইটভাটায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে ২০১১ সালে দেখা গেছে।
দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশি নারী ও শিশুরা বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে ওয়াক ফ্রি জানিয়েছে।
তারা বলেছে, বাণিজ্যিকভাবে যৌনতায় বাধ্য করতে ১০ বছরের শিশুদেরও বার, ক্লাব ও নিবন্ধিত যৌনপল্লীতে বিক্রি করা হচ্ছে, যেখানে তাদের আয়ের পুরোটা 'মালিককে' দিতে হয়। বিনিময়ে শুধু জীবন চালানোর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু তাদের মেটানো হয়।
বাংলাদেশে ছেলেরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ের প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লী এলাকায় পরিবারের মর্যাদা বৃদ্ধি, অস্বচ্ছলতা ঘোচানো ও ঋণ শোধের জন্য নারী ও শিশুদের জোরপূর্বক বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৫০ লাখের বেশি বাংলাদেশি অন্য দেশে কাজ করছে। এদের অনেকে ভালো কাজ ও বেশি বেতনের আশায় বিদেশে গিয়ে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ
সূচকে দাসত্ব নির্মূলে সরকারি প্রচেষ্টার একটি সূচক প্রকাশ করা হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ৬০।

দাসত্বের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিদেশে পাচার হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেসকিউ, রিকোভারি, রিপেট্রিয়েশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন (আরআরআরআই) বিষয়ক টাস্কফোর্স ২০১৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপিএস) চালু করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করে।
ভারত ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশিদের সহায়তা দিচ্ছে আরআরআরআই।
বিদেশে কর্মপরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে আইএলও'র সহযোগিতায় গত বছর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০০৬ সংশোধন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
তবে পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে ওয়াক ফ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পাচারের দায়ে ২০১২ সালে আটজনের জায়গায় ২০১৩ সালে ১৩ জনের সাজা হয়েছে জানিয়ে এতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যার তুলনায় তা যথেষ্ট নয়।
চিংড়ি খাতে কর্মপরিবেশের উন্নয়নে এ বছর প্রণীত জাতীয় চিংড়ি নীতির কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অসহায়ত্ব
এই সূচকে আধুনিক দাসত্বের একটি ঝুঁকির তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। তালিকায় প্রথম অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে 'অভাবনীয়' অর্থনৈতিক অগ্রগতি, রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পরেও বাংলাদেশের মানুষ 'আধুনিক দাসত্বের' ঝুঁকিতে আছে।
লৈঙ্গিক বৈষম্য, নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে যৌন নিপীড়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সীমিত প্রবেশাধিকার এবং ঘরের বাইরে নারীর কাজের বিষয়ে পশ্চাৎপদ মানসিকতা বিশেষভাবে নারীর জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে এতে বলা হয়।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ১০ লাখ বাংলাদেশিকে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে এতে বলা হয়। ধারাবাহিক পরিবেশগত সংকটে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর সংখ্যা আরো তাদের 'আধুনিক দাসত্বের' দিকে ঠেলে দেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সুপারিশমালা
পরিস্থিতির উত্তরণে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কয়েকটি সুপারিশ করেছে ওয়াক ফ্রি।
তার মধ্যে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর শ্রমিকদের কাছ থেকে ফি বাবদ অর্থ আদায় বন্ধ করা, ক্ষতিগ্রস্ত ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, 'আধুনিক দাসত্ব' মোকাবেলায় নুতন আইনি কাঠামো বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মীদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, জাতীয় চিংড়ি নীতির বাস্তবায়ন ও শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার তদারকি ইত্যাদি রয়েছে।
এছাড়া চিংড়ি খাতের কর্মীদের উন্নয়নে ক্রেতাদের নজর দেওয়ার পাশাপাশি ইটভাটায় বাধ্যতামূলক শ্রম বিলোপে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
My father Pulin Babu lived and died for Indigenous Aboriginal Black Untouchables. His Life and Time Covered Great Indian Holocaust of Partition and the Plight of Refugees in India. Which Continues as continues the Manusmriti Apartheid Rule in the Divided bleeding Geopolitics. Whatever I stumbled to know about this span, I present you. many things are UNKNOWN to me. Pl contribute. Palash Biswas
No comments:
Post a Comment