যুদ্ধ অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে বাঙ্গালি জাতি সত্তার এই বিদ্রোহ একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের কথা মনিয়ে পড়ে দিচ্ছে!লাল সেলাম সংগ্রামী বাংলাদেশ!আমরা বাঙ্গালি হয়ে বেঁচে আছি শুধু এই পরিচিতি নিয়ে!ভারত সহ বাকী বিশ্বের বাঙ্গালিদের জন্য সেরা দিশা নির্দেশ!যুদ্ধ অনিবার্য! সমতা , সামাজিক ন্যায় এবং যুদ্ধ অপরাধীদের, গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এমনি করেই ত লড়তে হয়!
৪১ বছর অপেক্ষা করেছি। বিচারের উপর ভরসা রেখেছি। বাংলার বেঈমানদের বিচারের দাবী এখন বাংলার ২০ কোটি মানুষের। ৪১ বছর আগে মাত্র ৭ কোটি বাঙালি যদি পারে বাংলাদেশ নামের একটা স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে তাহলে আমরা কেন পারব না বাংলার মাটিতে মানুষ নামের এ অমানুষ গুলোকে শেষ শিক্ষা দিতে। এটা আওয়ামি লিগ,বি,এন,পি বা অন্যান্য দলের একার কাজ না।এ আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিচার চাই। সরকার/ বিরোধী দলের কাছে আমাদের ৬ দফা দাবী।
১) কাদের মোল্লার বিচার আবার শুরু করতে হবে। আমরা যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার সরাসরি টিভি চ্যানেল, রেডিওতে শুনতে চাই।
২) ২০সে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখ এর মধ্যে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
৩) অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
৪) ২১ সে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সূর্য উদয় এর পূর্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে।
৫) ধর্ম নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি করে তাদের বা সে দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৬) যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার নস্যাৎ হলে দেশের প্রধান ২ দলকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে তারা যোগ্য না দেশ চালানোর, তারাও রাজাকার,বেইমান,দেশের শত্রু।
বাংলার সকল দল/ শ্রেণী , সকল পেশাজীবী, ছাত্র সমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক, ফেইসবুক ব্যাবহার কারি, প্রবাসী সবার পক্ষ থেকে একটাই দাবী সরকারের কাছে-আমাদের ৬ দফা দাবী মানতে হবে।
যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মিয়াখাঁন পুলে মানববনন্ধন করেছে বাকলিয়া থানা আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন বাকলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আলম, দক্ষিণ বাকলিয়া ১৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আজিম নুরু, বক্তব্য রাখেন গোলাম রব্বানি মনি, ইফতেখার আলম জাহেদ, কামাল উদ্দিন, ইসমাইল কোম্পানী, আবদুল মালেক, মো. জালাল, কবির মাষ্টার, হিরণ মিয়া,নাজের উদ্দিন, ফারুক উদ্দিন ডালিম, তফাজ্জল হোসেন তপু, কামাল, এন. কে. আলম সাজ্জাদ, জামশেদ শাহ, মো. মনির, ফরহাদ নঈম, রিজান, সায়েম, বিপলু, মো. আকিব প্রমুখ।
স্বাধীনতা প্রজন্ম : স্বাধীনতা প্রজন্ম চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতা প্রজন্ম চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়ক ইমরান চৌধুরী প্রিন্স। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা মো. এয়াকুব চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম-আহবায়ক আবদুল মালেক। প্রধান বক্তা ছিলেন ওস্তাদ অচিন্ত্য কুমার দাশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আমান উল্লাহ ভূইয়া, মো. লোকমান। বক্তব্য রাখেন লীজা আকতার, মো.জামাল, মো. হারুন, কায়সার।
অন্যান্যোর মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এস্কান্দর আলী, মনিকা ইসলাম, রাশেদা আকতার, অনি দাশ, রুমি আকতার, শায়লা চৌধুরী লিজা, পিংকী আনোয়ার প্রমুখ। প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ নেতা মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র হরতাল, জ্বালাও পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের উপর আক্রমণ, এসএসসি পরীক্ষর্থীদের জীবন নিয়ে চিনিমিনি খেলা, সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মাঠে নেমে পুলিশসহ মানুষ হত্যা করছে। এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান। শুধু কাদের মোল্লা নয় সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে বাংলাদেশকে কলংকমুক্ত করতে হবে।
আব্দুল্লাপুর নাগরিক কমিটি : আবদুল্লাপুর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ফটিকছড়ি আবদুল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গন হতে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, স্লোগানে আবদুল্লাপুর চৈথী চৌধুরী হাট হতে শাক্যমুনি সড়ক হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা শাহাব উদ্দীন রকি'র সভাপতিত্বে এবং রবিউল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউ.পি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহাবুব আলম, মুক্তিযোদ্ধা অলোক মেম্বার, তাপস মেম্বার, রিটন বড়ুয়া,মোহাম্মদ জাকেরিয়া জিকু, আনাম, মনসুর, হাসেম, মনসুর সওদাগর, শেখ এম.ডি.নাসির, মাস্টার আজাহার, মুনিরুল ইসলাম, শওকত আলী প্রমুখ।
নাছিরাবাদ ওয়ার্ড আ'লীগ : নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ সিকুইন কমিউনিটি সেন্টারে ওয়ার্ডের সভাপতি নুরুল আলম লেদুর সভাপতিত্বে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আলহাজ্ব এম.এ তাহেরের সঞ্চালনায় এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মেয়র চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফারুক, শফিক হান্নান, সাবেক মহিলা কমিশনার হাসিনা জাফর, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাসুম চৌধুরী। মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল-মামুন চৌধুরী, মহানগর যুবলীগ নেতা মোরশেদ আলম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ার, শ্রমিক লীগ নাসিরাবাদ অঞ্চলের সভাপতি হাসান চৌধুরী। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব খয়রাতি মিয়া চৌধুরী, হাজী সিদ্দিক আহমদ, একে.এম জাফর উল্লাহ চৌধুরী,সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমদ, পলিটেকনিক্যাল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মো.মাসুদ, মো. শাহজাহান, সাহাবউদ্দিন ফেয়ারু, আবদুল মন্নান খান, আবুল হোসেন, আ.শুক্কুর, বেলাল, নুরু সও, দ্বীন বন্ধু দাশ গুপ্ত, নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, বাবু সাধন মাস্টার, মো. আরিফ, হাজী মাহবুবুল আলম,সিরাজ উল্লাহ, বজল আহম্মদ, রফিক আহম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার মামুন, মোতালেব সরকার,আবদুস সালাম, কাজী বখতিয়ার, মো. সোলাইমান, মো. বাবর, আবদুল কাদের, মো.আনসার, শের-এ ইসলাম বাবুল, আবদুল মাবুদ সওদাগর, মহিলা লীগের আনোয়ারা বেগম, বেলায়েত হোসেন রুবায়েত, আনিসুর রহমান মানিক, আলী আকবর, শাহিনুল আলম, মাহফুজুর রহমান বাবুল, সালাউদ্দিন লেদু, আরসাদ সরদার, শাহাদাত হোসেন,সনজিত দাশ ভুট্টো, জাবেদ খান, মো. লিমন, ছাত্রলীগ নেতা বেনাজির আহমেদ প্রমুখ। খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তির।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা শাহবাগে জনতার ঢল নেমেছে। সন্ধ্যার পরে মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে টিএসসি চত্বর পর্যন্ত পৌঁছায়। রাত ৮টার পর হাজার হাজার জনতা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে জনতার সংখ্যাও বাড়ছিলো। রাতে টিএসসি চত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার এক অভূতপুর্ণ সমাগমে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবী যেন আরও প্রকট হয়ে উঠে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। আস্তে আস্তে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তা জনস্রোতে পরিণত হয়। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শাহবাগে আন্দোলকারীদের সঙ্গে অবস্থান নিতে থাকে হাজারো ছাত্র-জনতা।
মঙ্গলবার বিকাল থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। হরতাল থাকলেও ওইদিন থেকে শাহবাগ এলাকা অবরোধ থাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফার্মগেট এলাকা থেকে আসা সব যানবাহন হোটেল রূপসী বাংলার পাশ দিয়ে কাকরাইল-প্রেস ক্লাবের দিকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর রাজধানীর কবি, লেখক, শিল্পী, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মঙ্গলবার বিকেলে শাহবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন। তাদের দাবি, কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দিতে হবে। এ সময় তারা ব্যানার ও ফেষ্টুন নিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায দাবি করেন।
বুধবার আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের কাছেও ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাশিত নয়, তাই বলা যায় এ রায় অস্বচ্ছ হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এদিকে, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ মোড়কে মিশরের তাহরির স্কয়ারে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম। বুধবার ১১ টা ৪০ মিনিটে কাদের মোল্লা ফাঁসির দাবিতে তৈরি সংহতি মঞ্চে এ ঘোষণা দেন তিনি। সেলিম বলেন,কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায় আমরা মানি না। এ রায় বাতিল করে তাকে ফাঁসি দিতে হবে। শাহবাগ মোড়ে আজ যে জনস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয় এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো ঠাঁই নেই।
সংহতিতে উপস্থিত নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে হরতাল করছে। তাতে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হচ্ছে না। এটা নিয়ে সবার প্রশ্ন। মঙ্গলবার সংসদেও কয়েকজন সংসদ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন।
সংহতি মঞ্চে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ্-উল আলম লেলিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দার খান, যুব জোটের রোকনোজ্জামান রোকনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিক।
এদিকে রাস্তায় ক্যানভাসের ওপর 'মৃত্যু বুঝিনা যুদ্ধ বুঝি', কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি', 'রাজাকারের বিষ দাঁত ভেঙে দাও', 'রাজাকারের ফাঁসির বিকল্প নেই' শ্লোগানের পাশাপাশি রাজাকারে বিভিন্ন প্রতিকৃতি আঁকছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা অনড়
শাহবাগ স্কয়ারে অবস্থান নিয়েছিলো শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবকরা দিনভর গান, স্লোগান, কবিতা, বক্তৃতা মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ফাঁসির দাবি। রাতভর প্রায় শতাধিক আন্দোলনকারী অবস্থান করে। সকালের দিকে ক্রমেই মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আগের দিন শুক্রবারের তুলনায় গতকাল সকালে মানুষের ভিড় কিছুটা কম ছিলো। দুপুরের পর বাড়তে থাকে আন্দোলনকারী মানুষের সংখ্যা। শাহবাগ স্কয়ারের চারদিক থেকেই খ- খ- মিছিল নিয়ে আন্দোলনে যোগদান করেন তারা। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। বিকেলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনের ব্যানারেও অনেক সংগঠনের কর্মীরা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। সব বয়সী আন্দোলনকারীদের অংশগ্রহণের শাহবাগ স্কয়ার পরিণত হয় 'আলোর মোহনায়'। শাহবাগ স্কয়ারের চারদিকের চার রাস্তা মৎস্য ভবন, এ্যালিফেন্ট রোড, বাংলামোটর ও টিএসসি সব দিকেই ছিলো মানুষের ভিড়। এরই মধ্যে খ- খ-ভাবে মিছিল শ্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। চারুকলার সামনে মঞ্চ সাজিয়ে, তার একটু সামনেই আবার গানের মাধ্যমে, এর কিছু দূরে খ- খ-ভাবে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শ্লোগান আর গানের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা হচ্ছে। দিনভর মিঠিল শ্লোগানের পর সন্ধ্যা হতেই হাজার হাজার মোমবাতি জ্বালানো হয়। একই সাথে মোমবাতি জালিয়ে কোথাও বাংলাদেশের মানচিত্র, কোথাও বা '৭১, '৫২', '৯০, '১৩ সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক অর্জনের সালগুলো আঁকা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে টাঙানো হয় প্রায় ১০০ মিটারের মতো লম্বা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। পতাকার একপাশে বক্তৃতা অন্যপাশে চালানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশি-বিদেশি মিডিয়ার সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিক, ফ্রিল্যান্সার, কবি, সাহিত্যিকরাও ভিড় করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও অনেকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে এসেছেন। সিলেট থেকে আসা কামাল মাহমুদ বলেন, গত কয়েকদিনে টিভিতে এই আন্দোলন দেখে নিজের মধ্যেই একটা তাগিদ অনুভব করেছি। এটিকে একটি নতুন মুক্তিযুদ্ধ হিসেব মনে করে আমিও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, যে আন্দোলন শাহবাগ থেকে শুরু হয়েছে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে সারাদেশের আরও অনেক মানুষ শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলনে আসবে বলে তিনি মনে করেন। গাজীপুর থেকে আসা নাইম ইসলাম বলেন, এটি আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। এবারের যুদ্ধ বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করা। এই যুদ্ধে আমরা আর ঘরে বসে থাকতে চাই না। তাই নতুন মুক্তিযুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছি। একাত্তরে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলম বলেন, একাত্তরে যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছিলাম ঠিকই কিন্তু আজো রাজাকারদের আস্ফালন বন্ধ করতে পারিনি। ওদের ফাঁসি রায় নিয়েই তবে ঘরে ফিরবো। সারা দেশ থেকে এসেছেন এবং আসছেন সারাদেশে ক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষ। এখানে আসা মানুষ কেবল একাই নয়, অনেকেই নিয়ে এসেছেন পরিবার-পরিজন।
ছয় হাজার মোমবাতি : জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ স্কয়ারে ৬ হাজার ৪০০ মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় সাতটায় ঢাকা ফোরাম নামের একটি সংগঠন শাহবাগ স্কয়ার থেকে কাঁটাবন রোডে মোমবাতি দিয়ে 'বাংলাদেশ ওয়ার ক্রিমিন্যাল' লিখে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি জানায়। সংগঠনটির সভাপতি মেহেরুন নাহার হেনা বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জনগণকে সোচ্চার করে তুলছি। আশা করি, সরকারের বোধদয় হবে।
স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ : কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় আন্দোলন। একে একে গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। আর এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চার করেছে বিভিন্ন স্লোগান, গান, কবিতাসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-। ইতোমধ্যে এসব স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মুখে মুখে। এখন প্রতিদিনই শাহবাগ স্কয়ার মুখরিত হচ্ছে স্লোগানে স্লোগানে। কি শিশু, কি বৃদ্ধ? সব বয়সী মানুষের মুখে এখন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একই স্লোগান, একই দাবি। 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা'; 'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার'; 'জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো'; 'পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা, পাকিস্তানেই ফিরে যা'; 'বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নাই'; 'আমাদের ধমনিতে শহীদের রক্ত, এই রক্ত কোনো দিনও বৃথা যেতে দেব না'; 'আর কোনো দাবি নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই'; 'জামায়াতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান'; 'জয় বাংলা', 'সারা বাংলার মোহনা, শাহবাগ শাহবাগ'; 'রক্ত দেব, জীবন দেব, রাজাকারদের ফাঁসি দেব' ইত্যাদি স্লোগানগুলো। এছাড়া বিভিন্ন বর্ণমালার মাধ্যমেও কিছু স্লোগান তৈরি করা হয়েছে, যা শাহবাগ স্কয়ারের অংশগ্রহণকারী মানুষসহ সবার মুখে মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এসব স্লোগানের মধ্যে রয়েছে- 'ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ক-তে কামারুজ্জামান, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'গ-তে গোলাম আযম, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'স-তে সাকা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ম-তে মুজাহিদ, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ন-তে নিজামী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'স-তে সাঈদী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার', ই-তে ইসলামী ব্যাংক, তুই রাজাকার তুই রাজাকার, র-তে রেটিনা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার, ফ-তে ফোকাস, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
বিভিন্ন মানুষের সংহতি প্রকাশ : ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলনের শুরু থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করছেন। অনেকে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্যও প্রদান করছেন। গতকালও শাহবাগ স্কয়ারে আন্দোলনের সাথে সংহতি জানান, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আনিসুজ্জামান ও বাংলা বিভাগের প্রফেসর রফিক উল্লাহ খান। প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তার জন্য তাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন। তরুণসমাজ অন্তরের সৌন্দর্য ও শক্তি দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তা শ্রদ্ধার যোগ্য। বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের দিকে তাকিয়ে থাকবে, সমস্ত অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গতকাল সকালে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দল শাহবাগের তারুণ্যের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে শাহবাগের সমাবেশে যোগ দেন।
মতিয়া চৌধুরী, গওহর রিজভী : শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংগতি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি আন্দোলন স্থল শাহবাগে গণজাগরণ চত্বরে আসেন। সেখানে তিনি হাত নেড়ে হাজার হাজার আন্দোলনকারীর প্রতি সমর্থন জানান। তবে তিনি সেখানে কোন বক্তব্য দেননি। তিনি আসার পর আন্দোলনকারীরা তাকে করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানায়, অন্যসব আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো তিনি আসার পর কোন প্রতিবাদ হয়নি। মতিয়া ৫ মিনিট আন্দোলনস্থলে অবস্থান করেন। দুপুরে সংহতি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। দুপুর দুইটার দিকে তিনি শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলনের মঞ্চে আসেন। তবে তিনিও সেখানে কোন বক্তব্য দেননি।
আইন প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধনে আইন প্রতিমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলামের ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে এমন আইন করার চিন্তাভাবনা সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে বলে গতকাল সকালে আইন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। বিষয়টি শাহবাগে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা বলেন, কেউই প্রতিমন্ত্রীর এই ঘোষণা আশ্বস্ত হতে পারেননি। আমরা কোন ঘোষণায় আশস্ত হতে চাই না। আমরা একটি দাবি নিয়েই এখানে এসেছি সেটি হলো কাদের মোল্লার ফাঁসি আর সেটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে সরবো না।
ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস : যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস। গতকাল রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ স্কয়ায়ের আন্দোলনের মঞ্চে গিয়ে তিনি সংহতি জানান।
উইকিপিডিয়াতে শাহবাগ : উইকিপিডিয়াতেও উঠে এসেছে শাহবাগের তারুণ্যের আন্দোলনের গল্প। এই ওয়েবসাইটের বাংলা সংস্করণে সাম্প্রতিক ঘটনা ক্যাটাগরিতে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই নিবন্ধের নাম রাখা হয়েছে- '২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন'। ওয়েবসাইটটি বলেছে, ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে তথ্য ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে পারে।
মোবাইল টয়লেট : শাহবাগ স্কয়ারে অবস্থানকারী হাজারো জনতার সুবিধার্থে মোবাইল টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ) শাহবাগ এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে তাদের সকল মোবাইল টয়লেট। ঢাকা ওয়াসা নিয়ে এসেছে পানির গাড়ি। বিভিন্ন সংগঠন বিনামূল্যে দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সহযোগিতা, স্যালাইন। খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে স্লোগান একাত্তর।
এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল হাইকোর্টের পূর্ব গেটে প্রতীকী অনশন করেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এতে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের সভাপতি মোঃ হুমায়ূন কবিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়নের পরিচালনায় সংহতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, সামহোয়ারইন ব্লগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। ইন্টারনেটের মঞ্চের এই বিক্ষোভ ও আন্দোলন রূপ নেয় শাহবাগ স্কয়ার বা প্রজন্ম চত্বরে। তবে এই জনজাগরণ শুধু ফেসবুক, ইন্টারনেট আর শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রলীগ।
কাদের মোল্লার ফাঁসি নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি ও সমাবেশ করেছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট। দুপুর ১২টা থেকে শহরের ব্রিজের মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মো. আব্দুল জলিল এমপি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্ল¬া ওরফে কসাই কাদেরের ফাঁসিসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ব্রাাহ্মণবাড়িয়ায় বাম গণতান্ত্রিক শক্তির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয় পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা জাসদ সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন সাইদ।
নড়াইল জেলা সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নড়াইলে অবস্থান কর্মসূচি, গণসঙ্গীত-কবিতা আবৃত্তি ও প্রতিবাদ সভা চলছে। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মঞ্চে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ কর্মসূচি চলছে। রাজাকার কসাই আ. কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার সকাল থেকে প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। তারা গণসংগীত, কবিতা পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করে।
প্রজন্ম-'৭১-এর সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামান সৌরভ জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি ও সেøাগানের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানায়। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে।
লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক অফিস জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড কাউন্সিলের জেলা শাখার উদ্যোগে কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গত শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দুপুর ১২টায় লক্ষ্মীপুর চকবাজার জেলা ইউনিট কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উত্তর তেমুহনী গিয়ে শেষ হয়। পরে উত্তর তেমুহনী ট্রাফিক চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মাগুরা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন করেছে। গতকাল শনিবার সকালে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে চার উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাসহ সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেত্রকোনা পৌর শাখার উদ্যোগে গতকাল শনিবার স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল ১১টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণবিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমে আসে।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল ফেনীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ফেনী পৌর আ'লীগ, সিপিবি, বাসদ ও জাসদের উদ্যোগে এক পতাকা মিছিল বের হয়। উক্ত মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে মিছিলে নানা প্রকার সেøাগান দেয়া হয়।
মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশে মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদিন।
সমাবেশ শেষে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সন্ধ্যায় মেহেরপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে কাদের মোল্লার প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
মাদারীপুর প্রতিনিধি সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের আয়োজনে শুক্রবার রাতে স্থানীয় স্বাধীনতা অঙ্গনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গান, কবিতা ও সেøাগানে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি জানানো হয়। এসময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাবি রিপোর্টার জানান, গতকালও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা দিনভর ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে সমাবেশ করায় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বিঘিœত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয় এ সমাবেশ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের ন্যায় রাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছে প্রগতিশীল ঘরানার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, টঙ্গী গতকাল সন্ধ্যায় টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়ামের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে এবং আজ সকাল থেকে গণঅবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রূপগঞ্জে কর্মসূচি শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সেøøাগান ছিল 'পক্ষ নিলে রক্ষা নাই, বাংলার মাটিতে রাজাকারদের ঠাঁই নাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই'। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার তারাব পৌরসভার রূপসী চত্বর এলাকায় শুরু হওয়ায় আন্দোলনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্বা ও সাধারণ মানুষ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাসহ অন্যান্যদের ফাঁসির দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে দ্বিতীয় দিনের মত সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে লোহাগাড়ায় অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত লোহাগাড়া বটতলী মোটরস্টেশনের মোস্তাফিজ মার্কেটের সামনে প্রজন্ম'৭১ এর ব্যানারে শতাধিক নেতাকর্মী রাস্তার পাশে বসে এ কর্মসূচি পালন করেন।
বানারীপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বানারীপাড়ায় জাগ্রত জনতার মঞ্চে এখন অনুরণিত হচ্ছে ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারদের রক্ষা নাই। ৭১'র যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, গোলাম আজম, নিজামী ও সাঈদীসহ গ্রেফতারকৃতদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকার শাহাবাগ "প্রজন্ম চত্বর" থেকে সৃষ্ট হওয়া দেশব্যাপী গণজোয়ারের ঢেউ আচড়ে পড়েছে বানারীপাড়ায়ও। বানারীপাড়ার নতুনমুখ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, অনুশীলন সাংস্কৃতিক নিকেতন সোসাইটি, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, নতুনমুখ খেলাঘর আসর ও নব দিগন্তের উদ্যোগে সর্বস্তরের জাগ্রত জনতার ব্যানারে মানববন্ধন, সমাবেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান, গণসংগীত ও মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, প্রজন্ম চত্বর বা শাহবাগ স্কয়ারের ঢেউ লেগেছে সিলেটের বিশ্বনাথে। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সারা দেশের ন্যায় বিশ্বনাথ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্বনাথ কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে জামাত-শিবির নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ জড়ো হন।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ছাগলনাইয়া বাজারে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, মোমবাতি প্রজ্বলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল দুপুর থেকে কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শুরু হয় নাগেশ্বরী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সামনে অবস্থান কর্মসূচি। ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। সব বয়সের জনগণের সাথে শিশুরাও জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে।
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের থানা সংলগ্ন রাস্তায় শনিবার ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফঁঁসির দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট করছে।
শিবচর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্ল¬াসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে এবার শিবচরে গভীর রাত পর্যন্ত প্রদীপ জ্বালিয়ে মিছিল- সমাবেশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপজেলা শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন উপজেলা কমান্ডার ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান।
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সারাদেশের মতো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা গতকাল শনিবার কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় প্রদান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তাদের কর্মসূচি শুরু করেছে। স্মৃতিসৌধের পাদদেশে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গৌরনদী (বরিশাল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান,
কসাই কাদের মোল¬øাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় গৌরনদী উপজেলার টরকী বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বন্দরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ-ের সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ঢেউ লেগেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত মহিমাগঞ্জেও। গতকাল শুক্রবার বিকালের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত কতিপয় ছাত্রছাত্রী যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদ-ের দাবিতে স্থানীয় শহীদ ফজলুল করিম সড়কে স্বল্প পরিসরে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদের ওপর হামলাকারী বনদস্যুদের গ্রেফতার ও কাদের মোল্ল¬¬াসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি গৌরনদী (বরিশাল) উপজেলা সংবাদদাতা : কাদের মোল্ল¬¬াসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে আধাঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগ। বিকেলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চরফ্যাশন উপজেলা সংবাদদাতা : চরফ্যাশন হকার্স লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে গতকাল দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় প্রধান অথিতি ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রভাষক মনির উদ্দিন চাষী, ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মনির।
প্রতিবাদী সমাবেশ : তরুণদের জন্য আর একটি যুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, সংবাদ২৪.নেট, ঢাকা :একাত্তরের ঘাতক জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল দেশ। এরই অংশ হিসেবে কসাই খ্যাত কাদের মোল্লার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তার ফাঁসির দাবি উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ চৌরাস্তায় সমেবত তরুণদের কণ্ঠে। তরুণদের বিক্ষোভে যে প্রত্যয় রয়েছে তা যেন বিষম বিস্ময়। এটি তরুণদের জন্য আর একটি যুদ্ধ।
মঙ্গলবার বিকেলে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ চৌরাস্তায় অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
ঘৃণা মিশ্রিত বক্তব্য,প্রতিবাদী সমাবেশ,দ্রোহের শ্লোগান, ক্ষোভ মিশ্রিত মিছিল,সড়কে চিত্রাঙ্কন,জনতার মঞ্চ স্থাপন, ফাঁসির মঞ্চে প্রতীকী যুদ্ধাপরাধীর ঝুলন্ত মরদেহ,মোমবাতি প্রজ্বলন, মশাল মিছিল,কুশপুত্তলিকা দাহ,সড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি, গণসঙ্গীত, প্রতিবাদী গান-বাজনা, জনতার এমন কোনো প্রতিবাদী কর্মসূচি নেই যা গতকাল পালিত হয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন দেশের সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক,শিক্ষার্থী,রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার তরুণরা। তরুণদের বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ চৌরাস্তা। শাহবাগ মোড় পরিণত হয়েছে 'শাহবাগ স্কয়ার','স্বাধীনতা স্কয়ার','ন্যায়বিচার কেন্দ্রভূমি'তে। আন্দোলনরত জনতার একটাই দাবি, 'কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয়, ফাঁসি চাই'।
আন্দোলনরতরা ঘোষণা দিয়েছেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে দেশের বিভিন্ন স্তরের জনগণ।
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তরুণদের মধ্যে এ নিয়ে বেশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় রায় পুনর্বিবেচনার দাবিতে দুপুরেই বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে ছাত্রলীগ,জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
বিকাল তিনটায় ব্লগার এন্ড অনলাইন একটিভিস্ট নেটওয়ার্কের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর এ সংগঠনের উদ্যোগে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণরা। কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অবস্থান কর্মসূচি পরিণত হয় সড়ক অবরোধে।
মঙ্গলবারের ধারবাহিকতায় বুধবার ভোর থেকেই শাহবাগে জমায়েত হওয়া আন্দোলনরতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ যোগ দিতে শুরু করেন। দিন যত গড়াতে থাকে মানুষ তত বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় পরিণত হয় লক্ষ জনতার প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থলে। দিন থেকে রাত-সারাক্ষণ কেউ গান গেয়ে,কেউ শ্লোগান তুলে,কেউ বক্তব্য দিয়ে দাবি তুলে ধরেন। অবিরাম প্রতিবাদী কর্মসূচিতে শাহবাগ মোড় হয়ে উঠে উত্তাল।
বুধবার বিকালে শাহবাগ মোড়ের এক পাশের সড়ক যান চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। রাত পর্যন্ত সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি চলে। বুধবার দিনে হাজারো মানুষ তাদের ক্ষোভ জানাতে শাহবাগে জড়ো হন। সন্ধ্যার পর জমায়েত বাড়তে থাকে। হাজারো মানুষের মুখে শ্লোগান-'এক দফা এক দাবি, কাদের মোল্লার ফাঁসি দিবি','অন্য কোনো রায় নয়,কাদের মোল্লার ফাঁসি কেন নয়', 'ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই,কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই','আর কোনো দাবি নাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই', 'রাজাকারের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও', 'এই রক্ত কোনোদিন পরাজয় মানে না', 'আঁতাত নয়, ন্যায়বিচার চাই', 'রাজাকারদের সঙ্গে বসবাস করতে চাই না', 'একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার'।
কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ মোড়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
তাদের সঙ্গে যোগদেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,সংস্কৃতি কর্মী, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। মিছিলে সবাই শ্লোগান দেন-'যুদ্ধাপরাধের রায়, ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো সাজা নয়'। মিছিলটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে মিলিত হয়।
বুধবার সকালে শাহবাগে জনতার মঞ্চ ও প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছোট এক নাটিকা মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে আন্দোলনরতদের একজন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুসমত বলেন, কাদের মোল্লা যে অপরাধ করেছে তার দায়ে তাকে অন্তত চারশ'বার ফাঁসি দেয়া যেতে পারে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা ক্ষুব্ধ। প্রতীকী ফাঁসি দেয়া হলো। বাস্তবেও এ ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
মঙ্গলবার রাতেই শাহবাগের সড়কে প্রতিবাদী আল্পনা ও চিত্রাঙ্কন করেন শিল্পী-শিক্ষার্থীরা। রাতেই তারা শাহবাগে কাগজের মাধ্যমে একটি 'সাপ' তৈরি করেন। বিশাল আকৃতির ঐ সাপ যেন গিলে খেতে চাইছে আশপাশের সবকিছু। এর নির্মাতারা জানালেন, 'সাপটি যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী রূপ। যুদ্ধাপরাধ করে যেমন তারা স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে, তেমনি এখন দেশের উন্নয়ন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে তাদের দোসররা। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত করতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সাপ তৈরি ও প্রদর্শন করা হচ্ছে।'
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের দাবিতে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীকে অবশ্যই ফাঁসি দিতে হবে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। শাহবাগের অবস্থানকে তারা মিসরের তাহরির স্কয়ারের সাঙ্গে তুলনা করে নাম দিয়েছেন 'শাহবাগ স্কয়ার'। কেউবা এর নাম দিয়েছেব 'স্বাধীনতা স্কয়ার' কিংবা 'ন্যায়বিচার কেন্দ্রভূমি'।
বুধবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা গান গেয়ে, ঢোল বাজিয়ে, বক্তৃতা, শ্লোগানে তাদের দাবি জানান। দুপুরে যুদ্ধাপরাধীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগে আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে বুধবার সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেলিন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইসরাফিল আলম এমপি, সাংবাদিক আবেদ খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কবি অধ্যাপক আবদুস সামাদ,আনিসুর রহমান মল্লিক,গোলাম কুদ্দুস, নারীনেত্রী শিরিন আখতার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আক্কু চৌধুরী,ফকির আলমগীর প্রমুখ।
বাড়িতে দুপুরের রান্না বন্ধ করে এক গৃহিণী সমাবেশে এসে জানালেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে তিনি এ প্রতিবাদ জানান। যতক্ষণ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না দেওয়া হয়, ততক্ষণ কর্মসূচি চলবে। আমরা বাড়িতে ফিরে যাব না। প্রয়োজনে নতুন আইন করে তাঁর ফাঁসি দিতে হবে।-সমাবেশে উপস্থিত তরুণদের মতামত এভাবেই প্রকাশ পায়।
বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সংস্কৃতিকর্মীদের আগমনে আন্দোলন সব সময় উজ্জীবিত ছিল। ফকির আলমগীর এসে তরুণদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি গেয়ে শোনান, জয় বাংলা বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, আমার দেশ সব মানুষের, মা গো ভাবনা কেন সহ বেশ কিছু গান।
বুধবার সন্ধ্যায় সাজেদা চৌধুরী সমাবেশস্থলে আসলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে দুপুরে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সংহতি জানান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'বৃহস্পতিবার জাতীয় শহীদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেয়া হবে না। ফাঁসির রায় নিয়েই ঘরে ফিরব। কর্মসূচিতে জনতার ঢল নামবে।'
এদিকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শাহবাগে আন্দোলনরতদের সাথে সংহতি জানাতে যান সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি। সংহতি মঞ্চের দিকে তিনি যাত্রা করলে তাকে ঘিরে আন্দোলনরতরা বিক্ষোভ জানিয়ে স্লোগান দেন। আন্দোলনরতদের অনেকে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, "উনি (সাজেদা) কি বলতে এসেছেন আমাদের কারোর অজানা নয়। স্লোগান উঠে- "এক দফা এক দাবি, কাদের মোল্লার ফাঁসি দিবি" "বাংলার মাটিতে, রাজাকারের ফাঁসি হবে"।
এরপর আন্দোলনরত জনতার উদ্দেশে সাজেদা চৌধুরী বলেন, "আমি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংসদ অধিবেশন থেকে এখানে ছুটে এসেছি। আপনাদের সকল বিষয় আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো।"
এদিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে দাবি আদায়ের কর্মসূচি শিথিল করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম ধারার একাধিক সংগঠনের নেতারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
বুধবার রাতে আন্দোলনরতরা ঘোষণা দিয়েছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে শুধু সংহতি জানানোই চলবে না, একইসাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনড় অবস্থান করবেন তারা। আন্দোলনরত তারেক আহমেদ জানান, আমরা অনেকেই আগে বন্ধু ছিলাম না, কিন্তু এ দাবিতে সবাই একই আত্মা। অনেকেই আমাদের দাবির সাথে সংহতি জানিয়েছেন। শুধু সংহতি নয়, আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনড় অবস্থান করব।
বুধবার রাতে আন্দোলনরতদের দাবির সাথে অন্যান্যের মধ্যে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন-নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী, ঝুনা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচী, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ।
কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শাহবাগে সমাবেশ করা হবে। আর শুক্রবার সকালে শাহবাগে মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, শাহবাগ স্কয়ারে দশ লাখ লোকের সমাগম করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।
এনসিএন : ১৫৮৫০
প্রাসঙ্গিক সংবাদঃ
বেশ কিছুদিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী তা-ব চালিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ। দুর্ভোগে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে। তাদের সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পায় নি। তবে আজ দেশে যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে জামায়াত-শিবিরের সতর্ক হওয়া উচিত। আন্দোলন কর্মসূচি পরিহার করে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করা উচিত। তা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বে দলটি। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এ দেশের মানুষ পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। জীবন দিয়েছে, কিন্তু দেশের মাটিকে কলুষিত হতে দেয় নি। নিজের ভাষাকে বিকৃত হতে দেয় নি। দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে বাঙালি আবার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। দেশের আপামর জনসাধারণ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে যেভাবে ফুঁসে উঠেছে তা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা যে ঘরে ফিরবে না, সেটি জামায়াত-শিবিরকে মনে রাখতে হবে।
কাদের মোল্লার রায় নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট। মূলত এ কারণেই তারা রাজপথে নেমেছে। সাধারণ মানুষের ভাষ্য, এত বড় অপরাধ করেও কেন তাকে নগণ্য শাস্তি প্রদান করা হলো। তবে আমাদের উচিত আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখানো। আর অন্য যুদ্ধাপরাধীদের যেন এ ধরনের শাস্তি না হয়, তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়া হয় সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য জামায়াত সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কখনোই খাটো করে দেখা যাবে না। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বাংলার স্বাধীনতা, বাংলার মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি বাঙালির জন্য অত্যন্ত গর্বের। তবে এই গর্বের বহিঃপ্রকাশ বাঙালি করতে পারে নি। তাদের হৃদয়ে একটা বড় ক্ষত সবসময় ব্যথা দিতো। তা হলো স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটিতে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিলে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে।
এমন প্রেক্ষাপটে কোনো অশুভ শক্তি যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা চালায় তবে সাধারণ মানুষই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দেশের আপামর জনতা যেভাবে ফুঁসে উঠেছে তাতে একটা কথা নিশ্চিত- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না।
No comments:
Post a Comment